Advertisement
E-Paper

কেউ জানে না কে মাথা, থাকে কোথায়

এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, প্রতিবারই ধৃতদের জেরার সময়ে তাঁরা ভাসভাসা কিছু তথ্য দেয়। কে তাদের বরাত দিয়েছিল, কোথায় পৌঁছতে হবে, স্পষ্ট করে জানায় না। অনেক ক্ষেত্রে তারা হয়তো জানেই না।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কয়েকটি ক্ষেত্রে সোনা কোথায় পৌঁছনো হবে, সেই সূত্র পেয়ে সম্ভাব্য ক্রেতাকে গ্রেফতার করা হলেও প্রমাণাভাবে তাঁকে দোষী প্রমাণ করা যায়নি। সর্বোপরি, সোনা পাচারের দুনিয়ার জাল কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করেন, কারবারের মূল পাণ্ডা কোন দেশে থাকে তা আজও চিহ্নিত হয়নি।

এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, প্রতিবারই ধৃতদের জেরার সময়ে তাঁরা ভাসভাসা কিছু তথ্য দেয়। কে তাদের বরাত দিয়েছিল, কোথায় পৌঁছতে হবে, স্পষ্ট করে জানায় না। অনেক ক্ষেত্রে তারা হয়তো জানেই না। এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, ক্যারিয়রদের স্থলপথে একেকবার সোনা এক জায়গা নিয়ে অন্যত্র পৌঁছনোর জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আকাশপথে তা পৌঁছনোর জন্য মাথা পিছু সম পরিমাণ টাকা ছাড়াও উড়ানের টিকিট, হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তবে উড়ানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাড়তি ঝুঁকি নিতে হয় বলে ইদানীং মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে দেশে চোরাই সোনার কারবার জাঁকিয়ে বসছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত, ওই কারবারের সঙ্গে কলকাতা, শিলিগুড়ি সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী যুক্ত। সেই ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের দিকেই আপাত জোর দিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেখানে বেনাপোল সীমান্তে ধৃত সন্দেহভাজন বাংলাদেশির সঙ্গে বয়ানের সঙ্গে এনজেপিতে ধরা পড়া উত্তরপ্রদেশের যুবকের বক্তব্যের সাযুজ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে সোনা পাচার রোধে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

উপরন্তু, সোনা আমদানির উপরে শুল্ক বসায় অনেকে চোরাই জিনিস কিনে গয়না বানাচ্ছেন। অথচ, নোট বাতিলের পরে রাতারাতি চোরাই সোনার কারবার কমেছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি। কারণ, নোটে টান পড়ায় হাওয়ালার কারবারিরা দমে গিয়েছিল। যে হেতু চোরাই সোনার দুনিয়ার লেনদেন হাওয়ালার মাধ্যমেই চলে, তাই সে সময়ে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হালে বাজারে নতুন নোট পর্যাপ্ত মিলছে। তাতেই চোরাই সোনার কারবার ফের জাঁকিয়ে বসেছে।

এখানেই শেষ নয়, সোনা লুকিয়ে রাখার জন্য পাচারকারিরা নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে বলেও গোয়েন্দারা বুঝতে পেরেছেন। একটা সময়ে জুতোর সোলের ফাঁপা অংশ, সুটকেসের গোপন খোপে নেওয়া হতো। উড়ানের ক্ষেত্রে মলদ্বারে লুকিয়ে নেওয়ার ঘটনাও আকচার ঘটত। ইদানীং স্ক্যানার এড়াতে ফয়েলে মুড়ে ছোট সোনার বিস্কুট ছাতার বাঁটে, ট্রলি ব্যাগের হাতলে করে সোনা নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

শিলিগুড়ির কাছেই একটি গাড়ির ইঞ্জিনের মধ্যে একযোগে ৮৭ কেজি সোনা পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা গাড়িটি পেয়েও তা খুঁজে বার করতে হিমশিম খান। প্রায় ৬ ঘণ্টার মাথায় ইঞ্জিন খোলানো হলে সোনার হদিস মেলে।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, বেশ কয়েকবার বড় মাপের সোনা ধরা পড়ার পরেই পাচারকারীরা একযোগে বেশি সোনা আর ইদানীং পাঠাচ্ছে না বলে খবর মিলেছে। ছোট দলের হাতে ২-৪ কেজি সোনার বিস্কুট দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেনে-বাসে। ওই অফিসার বলেন, ‘‘আমরা দু’জনকে ধরে কোর্টে পাঠিয়ে জেরা করার ফাঁকে হয়তো আরও ৪০ জন বেরিয়ে যাচ্ছে।’’

ফলে, লুকোচুরি চলছেই। পরিকাঠামো আরও জবরদস্ত না হলে সোনা পাচার বন্ধ করা যে অসম্ভব ব্যাপার তা নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনেকেরই সংশয় নেই।

gold smuggling smuggler smuggle gold শিলিগুড়ি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy