Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গৌতমের ভর্ৎসনা শুনে চোখে জল কর্মীর

দলবদলের অনুষ্ঠানে দলীয় কর্মীদের আসতে দেরি হওয়ায় তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব তাঁদের প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করায় এক মহিলা নেত্রীর চোখ জলে ভিজে গেল। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের শিলিগুড়ির জার্নালিস্ট ক্লাবের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। তা দেখে অনেকেই হকচকিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রার্থীও ছিলেন।

স্টেডিয়ামের রাস্তায় দলের কর্মীদের বকাঝকা করছেন গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

স্টেডিয়ামের রাস্তায় দলের কর্মীদের বকাঝকা করছেন গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

দলবদলের অনুষ্ঠানে দলীয় কর্মীদের আসতে দেরি হওয়ায় তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব তাঁদের প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করায় এক মহিলা নেত্রীর চোখ জলে ভিজে গেল। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের শিলিগুড়ির জার্নালিস্ট ক্লাবের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। তা দেখে অনেকেই হকচকিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রার্থীও ছিলেন।

এক দফায় অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বার হয়ে গেলেও পরে গৌতমবাবু অবশ্য নিজেই ফিরে আসেন। পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের একঝাঁক বিজেপি নেতানেত্রীদের দলে যোগদান করিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান। গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘এটা তৃণমূল দল। সবাইকে নিয়ম, নিষ্ঠা, সময় মেনে চলতে হবে। আমার অনেক কাজ রয়েছে। কীভাবে এতক্ষণ বসে থাকব!’’ বিষয়টি শোনার পর তৃণমূল নেতাদের একাংশ অবশ্য বলেছেন, ‘‘গৌতমবাবু প্রকাশ্যে সংযত থাকতেই পারতেন। দলের অন্দরে বলতে পারতেন।’’

দলীয় সূত্রের খবর, এ দিন দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দল ছেড়েছেন একঝাঁক বিজেপির নেতানেত্রী। এ দিন সকালেই ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতানেত্রীদের জানানো হয়, বেলা দেড়টায় অনুষ্ঠানটি হবে। তাঁদের স্টেডিয়াম এলাকায় চলে আসতে বলা হয়। কিন্তু তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পৌনে ১২টা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন করার ঘোষণা করা হয়। সেই মতন গৌতমবাবু দলবদলের অনুষ্ঠান এগিয়ে ১টায় আনেন। একেবারে অনুষ্ঠানগুলি শেষ করে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা নেন। ওয়ার্ড কমিটিকে বিষয়টি জানানোও হয়।

বিজেপি’র হবু দলত্যাগীদের ফের দুপুর ১টায় সময় জানানো হয়। তৃণমূলের এনজেপি এলাকার এক শ্রমিক নেতাও তদারকি শুরু করেন। এরই মধ্যে পার্থবাবু সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন গৌতমবাবু। তৃণমূলের মহাসচিব সাংবাদিক সম্মেলন করে ১টা একটি আগেই কলকাতার বিমান ধরতে রওনা হয়ে যান। জার্নালিস্ট ক্লাবেই বসে থাকেন গৌতমবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলার দুই কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণ পাল এবং নান্টু পাল।

মিনিট দশেক বসে থাকার পরে মন্ত্রী দলের নেতাদের ডেকে বলে ওঠেন, ‘‘কতক্ষণ বসে থাকব! কারা এরা দলে আসবে! সময়জ্ঞান নেই। আমার অনেক কাজ আছে। এখনই চলে যাব।’’ পাশে থাকা কৃষ্ণবাবুকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘তুই দলবদলের অনুষ্ঠান করে দে।’’ কৃষ্ণবাবু সভাপতিকে বোঝানোর পর গৌতমবাবু আবার মিনিট দশেক বসেন। হঠাৎ ঘর থেকে বার হয়ে কিছু দূরে রাখা গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করেন। সেই সময় ওই ওয়ার্ডের নেতানেত্রীদের প্রকাশ্যেই ভৎর্সনা শুরু করেন। এতে ঘাবড়ে যান তৃণমূল ওয়ার্ড কমিটির সদস্য বন্যা বসু। দেখা যায় তাঁর চোখে জল।

ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী জিতেন পাল ছুটে গিয়ে বলেন, ‘‘দাদা ওঁরা এসে গিয়েছেন।’’ এই শুনে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কে ওঁরা মি: ওবামা না চার্লস শোভরাজ! কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই? যাও নিজের কাজ ঠিক করে কর ওয়ার্ডে গিয়ে।’’ এর পরে অবশ্য জার্নালিস্ট ক্লাবের ভিতরে ফের যান। সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘‘বিজেপিটা ওই ওয়ার্ডে শেষ হয়ে গেল। দলত্যাগীদের আমরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেব।’’ তার আগে ওয়ার্ডের সকলকেই অবশ্য ভিতরে ডেকে নেন।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী জিতেনবাবু বলেন, ‘‘উনি (উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী) খুবই ব্যস্ত মানুষ। কত ওয়ার্ডে প্রচার, অনুষ্ঠান থাকে। আমাদের দেরি হওয়ায় তাই উনি একটু রেগে গিয়েছিলেন। আসলে দেড়টার অনুষ্ঠান এগিয়ে ১টায় হওয়ায় দলত্যাগীদের একজোট করে আনতে সময় লেগেছিল।’’ তৃণমূল নেত্রী বন্যাদেবী বলেন, ‘‘উনি সিনিয়র। আমাদের বলতেই পারেন। কিছু মনে করিনি। আমাদেরই দেরি হয়েছিল।’’

এ দিন বিজেপির জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ওয়ার্ডের সভাপতি রঞ্জন চক্রবর্তী-সহ কমিটির ২৮ জন দল ছেড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে দল ছাড়েন ৩ নম্বর মণ্ডল সম্পাদক ব্রিজকিশোরবাবুও। উল্লেখ্য, তিনিই কিছুদিন আগে টাকা দিয়ে টিকিট বিলির অভিযোগ তুলেছিলেন। রঞ্জনবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে প্রার্থী ঠিক হয়েছে। টাকা লেনদেনের কথাও শুনেছি। তবে আমরা কাছে তার প্রমাণ নেই। আমাদের গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছিল না।’’

আর ব্রিজকিশোরবাবু বলেন, ‘‘আমাদের তো দেড়টায় আসতে বলা হয়। পরে সময় এগিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপি’র কোন স্তরেই আমাদের অভিযোগ শোনা হচ্ছিল না। এবার বিজেপি বুঝবে, পদ্মফুল কীভাবে শুকিয়ে যায়। উল্লেখ্য, ওই ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী হয়েছে তাশি দোরজি লামা। এই প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন বসু বলেন, ‘‘কায়েমি স্বার্থে এসব হচ্ছে। ব্রিজকিশোরদের আগেই দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। রঞ্জনবাবুকেও শোকজের চিঠি ধরানো হয়েছে। ভিত্তিহিন অভিযোগ সব। এরা চলে যাওয়ায় বিজেপির ভালই হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE