পারিবারিক বিবাদ থেকে শুরু করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সামান্য কিছু হলেই গুলি বোমা ব্যবহৃত হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের গুলি, বোমার লড়াইয়ের মাঝে পড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন নিরীহ মানুষও। মালদহের কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগরে একের পর এক গুলি, বোমাবাজির ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
শুধু এই দুই ব্লকেই নয়। জেলার সর্বত্রই সামান্য কিছু গোলমাল হলেই গুলি, বোমা ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে বলে অভিযোগ। জেলায় এতো গুলি, বোমা কোথায় থেকে আসছে তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকায় গুলি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে কিন্তু না উদ্ধার হচ্ছে বেআইনি অস্ত্র, না ধরা পড়ছে দুষ্কৃতীরা।
চলতি সপ্তাহেই পরপর বেশ কয়েকটি বোমাবাজির ঘটনা ঘটলেও একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য জেলাতে এমন ঘটনা বাড়ছে। মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা কখনও গুলি করে, কখনও আবার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা লুঠ করছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দুষ্কৃতীরা কোথায় থেকে পাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র? পুলিশ কোন পদক্ষেপ করছে না। পুলিশ এখন থেকে সক্রিয় হওয়া উচিত।’’ মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদি অবশ্য বলেন, ‘‘প্রতিটি ঘটনারই তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। গুলি, বোমার ব্যবহারও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রেই খবর, জেলার কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর বৈআইনি অস্ত্র তৈরির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের মধ্যে পুলিশ ও বিএসএফ অভিযান চালিয়ে একাধিক অস্ত্র ভান্ডারের হদিশ পেয়েছে। কোথায় পরিত্যক্ত ঘরের মাটির তলায়, কোথাও আবার আম বাগানের মধ্যে থেকে মিলেছে বেআইনি অস্ত্র ভাণ্ডার। অস্ত্রের পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামও। আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে প্রচুর তাজা বোমাও। আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা পুলিশ উদ্ধার করলেও সর্বত্র এর জাল ছড়িয়ে পড়েছে। যার জন্য সামান্য কিছু হলেই ঘটছে বোমাবাজি এবং গুলির লড়াই। চলতি সপ্তাহেই কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর এলাকাতে তিনটি বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। তিনটি ঘটনাতে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আহত হয়েছেন ১৩ জন। এ ছাড়া দুষ্কৃতীদের গুলি, বোমার লড়াই এর মাঝে পড়ে মৃত্যু হয়েছে নিরীহ পথ চলতি ব্যবসায়ীর। আহত হয়েছে স্কুল ছাত্র সহ বেশ কয়েকজন। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। একই সঙ্গে উদ্বিগ্নও তাঁরা। কোথায় থেকে আসছে এতো আগ্নেয়াস্ত্র বোমা, তার উত্তর খুঁজছেন জেলার মানুষ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের মানিকচকের গঙ্গা নদীর ওপারে রয়েছে ঝাড়খন্ড এবং হরিশ্চন্দ্রপুরের ফুলাহারের পাশে বিহার। এই দুই রাজ্য থেকে নদী পথ দিয়ে অনায়াসে মালদহে ঢুকে পড়েছে দুষ্কৃতীরা। নদীপথ ছাড়াও এই দুই রাজ্য থেকে পাথর বোঝাই বহু লরি রোজ এই জেলায় ঢুকছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে মালদহে আসছে ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীরাও। তাঁরা এই জেলায় কারিগর হিসেবে কাজ করে। এই জেলার দুষ্কৃতীরা তাদের আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা বানানোর মজুরি দেন। কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর এলাকায় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানায় হানা দিয়ে পুলিশ ও বিএসএফ গ্রেফতার করেছে বিহারের মুঙ্গেরের কয়েকজন বাসিন্দাকে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করেছে যে, তারা মজুরির ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র বোমা বানায়। পাইপগান থেকে শুরু করে সেভেন এমএম, নাইন এমএম সকল ধরনেই অস্ত্র তৈরিতে পারদর্শীরা তারা। কখনও ৫০০ টাকা এবং কখনও ৭০০ টাকার বিনিময়ে এক একটি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করে তারা। আর সেই সব আগ্নেয়াস্ত্র বাজারে বিক্রি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। জানা গিয়েছে, পাইপগান চার হাজার, সেভেন এমএম ১৪ হাজার এবং নাইন এমএম ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করে তারা। আর এই সব এলাকা থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। আর সুতলি বোমা কিংবা বল বোমা তৈরিতেও পারদর্শী তারা।
কিন্তু পুলিশের জালে অধরা থেকে গিয়েছে অস্ত্র কারবারের পাণ্ডারা। তাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলি। মোথাবাড়ির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা লাগাম ছাড়া হয়ে পড়েছে জেলায়। আর শাসক দলেরও মদত রয়েছে। পুলিশ কোন পদক্ষেপ না করলে এমন ঘটনা চলতেই থাকবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য এমন ঘটনা বাড়ছে। মূল অপরাধীরা ধরা না পড়লে গুলি, বোমাবাজির ঘটনা চলতেই থাকবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের কোন দল হয় না। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। আর যারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে পুলিশের অবশ্যই উচিত তাদের ধরে শাস্তি দেওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy