Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বেহাল রাস্তা

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ। এই জেলার রাস্তাঘাটের হাল দিন দিন বেহাল হচ্ছে। এলাকাবাসীদের মতে, রাস্তা সারাইয়ের কাজ হচ্ছে না প্রধানত তৃণমূলের মধ্যেই দুই গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে। কি সেই সংঘাত? এই জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন শুভাশিস পাল ওরফে সোনা। কিন্তু জেলা তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্র তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৩

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ। এই জেলার রাস্তাঘাটের হাল দিন দিন বেহাল হচ্ছে। এলাকাবাসীদের মতে, রাস্তা সারাইয়ের কাজ হচ্ছে না প্রধানত তৃণমূলের মধ্যেই দুই গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে।

কি সেই সংঘাত? এই জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন শুভাশিস পাল ওরফে সোনা। কিন্তু জেলা তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্র তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন সোনাবাবু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ ফিরে পেলেও দলের কাছে ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছেন। তাঁকে এক ঘরে করে দলীয় নেতৃত্ব যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবু একাধিক বেহাল পাকা রাস্তা মেরামত করে উঠতে পারেনি তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ। ফলে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন গ্রামবাসীরা। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর থেকে কুশমন্ডি এবং কুমারগঞ্জ থেকে বালুরঘাট ব্লকে অন্তত ১৪টি দীর্ঘ পাকা রাস্তায় মেরামতির অভাবে পিচ পাথর উঠে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বেহাল ওই সমস্ত রাস্তা দিয়ে যানবাহন তো দূর অস্ত্, পথ চলতে গিয়েও বাসিন্দাদের নিত্য দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “রাস্তা মেরামতির জন্য জেলা পরিষদের আলাদা করে কোনও তহবিল নেই। জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় থেকে মেরামতির কাজ করা হয়। কিন্তু নিজস্ব তহবিলে প্রয়োজনীয় অর্থ নেই।”

জেলা পরিষদে বছরে এক কোটি আয় হলেও কর্মীদের বেতন-সহ জেলাপরিষদ চালাতে বছরে প্রায় সবটাই খরচ হয়ে যায়। ফলে টাকার অভাবে রাস্তা মেরামতির কাজ থমকে রয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর। সিপিএমের প্রাক্তন জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের আমলে বিভিন্ন ভাবে টাকা জোগাড় করে রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন জেলা পরিষদে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আদৌ ওই পদে আছেন কিনা, আমরা জানি না। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষেই তো এ সব চিন্তাভাবনা করতে হবে।” রফিকুলের অভিযোগ, দলাদলিতে মানুষ পরিষেবার বদলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। হরিরামপুর এবং কুশমন্ডি ব্লকে বেহাল রাস্তার সংখ্যা বেশি। সোনা পাল অবশ্য রফিকুলের বক্তব্যের বিরোধিতা করলেও পক্ষান্তরে বলেছেন, তাঁর বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা ও টাকা জোগাড় করার উদ্যোগের অভাবে রাস্তা মেরামতিতে সমস্যা হচ্ছে।

জেলা পরিষদ থেকে জানা গিয়েছে, কুশমন্ডি ব্লকের ঊষাহরণ, পানিশালা, আমিনপুর, সরলা, কাটাসানের মতো আড়াই থেকে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ বেহাল রাস্তার সংখ্যা ৬টি। হরিরামপুর ব্লকের পাটন মোড় থেকে মালিয়ান দিঘি এবং শিরসি ও গোকর্ণ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন সাত থেকে নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অন্তত ৪টি বড় রাস্তার সংস্কারের অভাবে যাতায়াতে চরম সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ জেলার হরিরামপুর থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের তৃণমূলের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোনা পালকে তিন মাস আগে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকেও তাঁকে অপসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে সোনাবাবু কর্মাধ্যক্ষের পদ ফিরে পান। তবে একদা জেলা পরিষদের সহকর্মী সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে তাঁর মুখ দেখাদেখি বন্ধ। কার্যত একঘরে হয়ে সোনাবাবু কার্যত জেলাপরিষদে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এতে কোনও প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তিনি বলেন, “কেবল হরিরামপুর এলাকায় বড় ও ছোট মিলে ১৪টি নতুন রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। হরিরামপুর, কুশমন্ডি থেকে কুমারগঞ্জ সব ব্লকে পুরনো রাস্তা মেরামতির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।”

বালুরঘাটে জেলা পরিষদ ভবনে এ জেলার আইন পরিষদীয় সচিবের জন্য একটি অফিস সরকারি ভাবে বরাদ্দ হয়েছে। সোনা পাল-কাণ্ডের পর ওই ঘরে বসেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র জেলাপরিষদের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ খবর ও তদারকি করেন এবং দলীয় সদস্যদের নিয়ে সভা করে খোঁজ নেন। বিপ্লববাবু বলেন, “আরআইডিএফ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সহায়তায় দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়ে ৮৫টি নতুন বড় পাকা রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। সকলে এক হয়ে কাজ করছেন। কোনও সমস্যা নেই।”

tmc turmoil balurghat Trinamool CPM High Court road gram pachayet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy