Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি চাষের, ঋণ মকুবের আর্জি

পাকা গমের শিস মিশে গিয়েছে মাটিতে। টুকরো হয়ে কাদায় গড়াচ্ছে বেগুন, স্কোয়াশ। থেঁতলে গিয়েছে খেতের কুমড়ো, উচ্ছে, পটোল। বৃহস্পতিবার বিকেলের পরে মাত্র এক ঘণ্টার ঝড় শিলা বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড দশা ধূপগুড়ি ব্লকের অন্তত সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ফসলের মাঠ। কৃষি দফতরের প্রাথমিক হিসেবে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠি গ্রামে ক্ষতি (বাঁ দিক থেকে) স্কোয়াশ, ভুট্টা ও গম খেতে। শুক্রবার সব ছবিগুলি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।

ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠি গ্রামে ক্ষতি (বাঁ দিক থেকে) স্কোয়াশ, ভুট্টা ও গম খেতে। শুক্রবার সব ছবিগুলি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৩
Share: Save:

পাকা গমের শিস মিশে গিয়েছে মাটিতে। টুকরো হয়ে কাদায় গড়াচ্ছে বেগুন, স্কোয়াশ। থেঁতলে গিয়েছে খেতের কুমড়ো, উচ্ছে, পটোল। বৃহস্পতিবার বিকেলের পরে মাত্র এক ঘণ্টার ঝড় শিলা বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড দশা ধূপগুড়ি ব্লকের অন্তত সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ফসলের মাঠ। কৃষি দফতরের প্রাথমিক হিসেবে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্তারা। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপাকে পরে চাষিরা ঋণ মুকুবের দাবি তুলেছেন। যদিও ওই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আশ্বাস প্রশাসনিক তরফে মেলেনি।

জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার স্বীকার করেন, “শিলাবৃষ্টিতে ধূপগুড়ি ব্লকের কিছু এলাকায় সব্জি চাষে ভাল ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে সমস্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরে যা নির্দেশ আসবে, সে ভাবে কাজ চলবে।” শুক্রবার সকাল থেকে কৃষি দফতরের কর্তা ও কর্মীরা এলাকা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষার কাজ করেন। ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সর্দার বলেন, “প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’’

মূলত সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সব্জি খেত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে শুধুমাত্র সব্জির খেত নয়। ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শিলের আঘাতে টিনের চাল ফুটো হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে ভিজে ঘরদোর একসা হলেও এদিন দুপুর পর্যন্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছয়নি। ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি দীপিকা ওঁরাও বলেন, “পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা এলাকায় ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির কাজ করছে। খুব তাড়াতাড়ি বিলি করার কাজও শুরু হবে।”

শুক্রবার সকালে জলঢাকা নদী লাগোয়া কৃষিতে সমৃদ্ধ গধেয়াকুঠি গ্রাম দেখে মনে হয়েছে, মত্ত বুনো হাতির দল কিছু ক্ষণ আগে তাণ্ডব চালিয়েছে। সবুজ সব্জির মাঠ রাতারাতি উধাও। স্কোয়াশ, ঝিঙ্গে, উচ্ছে, নানা ফল ছিঁড়ে কাদায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। দিশেহারা চাষিরা খেতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখে এদিনও বুক কেঁপেছে কাশিয়াবাড়ি, বেলতলি, বানিয়ারটারি, উত্তর চটং এলাকার চাষিদের। চড়চড়া বাড়ি এলাকায় জগবন্ধু রায়, সুনীল রায়, রণজিৎ রায়দের বিঘার পর বিঘা স্কোয়াশ খেতে মাচা আছে। গাছের লতা ছিড়ে কাদায় তলিয়েছে। শিলের আঘাতে টুকরো হয়ে গিয়েছে স্কোয়াশ। ছলছল চোখে জগবন্ধুবাবু বলেন, ‘‘এক বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সবে ফল এসেছে। বাজারে পাঠানোর আগে মাত্র এক ঘণ্টার শিলা বৃষ্টিতে সব শেষ।’’

চাষিদের অনেকে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে স্কোয়াশ, উচ্ছে, বেগুন, ঢ্যাঁড়স চাষ করেছেন। তাঁদের মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে। যেমন, চড়চড়া বাড়ির রণজিৎ রায় ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেন। বেগুন ও স্কোয়াশ চাষের জন্য নগেন্দ্রনাথ রায় ঋণ নিয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। ৯৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লঙ্কা, বেগুন, স্কোয়াশ চাষ করেন সুবল রায়। ওই চাষিরা জানান, ঋণের টাকা মুকুব করা না হলে তাঁদের কেউ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।

স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য স্বপ্না রায়ের একই দশা। এক বিঘা জমির উচ্ছে মাটিতে মিশেছে। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ধজেন্দ্রনাথ রায় ঘুরে দেখেন ঝারআলতা-১, ঝারআলতা-২, মাগুরমারি-১, মাগুরমারি-২, গাদং-১, গাদং-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিধ্বস্ত চেহারা। পাকা গমের শিস ভেঙে কাদায় তলিয়েছে। তচনচ হয়েছে ভুট্টা খেত। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচশো হেক্টর সব্জি খেত নষ্ট হয়েছে। ভুট্টা খেতের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা প্রায় দু’শো হেক্টর। প্রায় একশো হেক্টর লঙ্কা খেত নষ্ট হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নূরজাহান বেগম বলেন, “ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার চাষিদের কি সাহায্য করা যেতে পারে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষি কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে কৃষি ঋণ মকুব নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE