সঙ্গে: কলেজে ভর্তির নথি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব চিত্র
কলেজে ভর্তির মেধা তালিকায় স্থান মেলেনি। তবে তা নিয়ে সমস্যা হয়নি। উল্টে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বাড়িতে গিয়ে ভর্তির নথি হাতে পৌঁছে দিয়ে এলেন।
ওই ছাত্র সোনু গুপ্তা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের শক্তিনগরের বাসিন্দা। উচ্চতা দেড় ফুট। হাঁটতে পারেন না। কোনও রকমে ঠেস দিয়ে বসতে পারেন। জন্ম থেকেই এই প্রতিবন্ধকতা অবশ্য তাঁর পড়াশোনায় বাধা হতে পারেনি। পড়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হাই স্কুলেও। এ বছরই মোহনবাটি হাই স্কুল থেকে পাশ করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক। মোট নম্বর ২৫৫।
এরপরও পড়াশোনা চালাতে চাইছিলেন তিনি। প্রতিবন্ধী ওই ছাত্রের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই তাঁর পাশে দাঁড়ালেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁর ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার সোনুর বাড়িতে যান রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার, ভর্তি কমিটির সদস্য দেবাশিস বিশ্বাস, অঙ্কের অধ্যাপক কালী শঙ্কর তিওয়ারি, আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কাউন্সিলের সচিব দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, দর্শনের অধ্যাপক তাপস মোহন্ত। সোনুর হাতে রায়গঞ্জ কলেজে ভর্তির নথি তুলে দেন তাঁরা।
সেই সঙ্গে পড়াশোনার সমস্ত খরচ বহনেরও দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক কালী শঙ্কর তিওয়ারি। তার পরও পড়াশোনা করতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে করা হবে বলে জানান উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি। তিনি বলেন, ‘‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেন কখনওই বাধা না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু ওই ছাত্রই নয়, রয়েছে এ ধরণের সকল ছাত্রের পাশেই। পরে ওই ছাত্র উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী হলে তারও ব্যবস্থা করা হবে।’’
রেজিস্ট্রার জানান, ভর্তি কমিটির সদস্য দেবাশিসই প্রথম বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাব দেন। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ‘সেন্টার ফর ডিফারেন্টলি এবল স্টুডেন্ট’। দেবাশিস তার ডিরেক্টর। সর্বোপরি তাঁর প্রস্তাবকে বাস্তবায়িত করতে উপাচার্য এগিয়ে এসেছেন। রেজিস্ট্রারের কথায়, ‘‘উপাচার্য আমাদের নির্দেশ দেন ওই ছাত্রকে ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে না। আমরাই যেন তাঁর বাড়িতে গিয়ে ভর্তির নথি পৌঁছে দিয়ে আসি। ভর্তির ফি সমস্ত কালীশঙ্করবাবু দিয়ে দিয়েছেন।’’ তিনি জানান, অন্য ছাত্রদের যেমন নির্দিষ্ট হাজিরার ব্যাপার রয়েছে সোনুর ক্ষেত্রে তার ছাড় দেওয়া হয়েছে। যখন পারবেন যাবেন এবং পরীক্ষা দেবেন। অধ্যাপকরা তাঁকে আলাদা করে পড়াতেও সাহায্য করবেন।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রম চলে। কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে খুশি সোনু এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা। সোনুর বাবা বাবলুবাবুর গালা মালের ছোট দোকান। মা আরতিদেবী গরু পালন করেন। তা দিয়েই ছেলে সোনু এবং মেয়ে অর্থাৎ সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নেহাকে মানুষ করছেন। নেহাও দাদা সোনুকে স্কুলে পড়াতে নিয়ে যেত।
সোনুর কথায়, ভাবতে পারিনি এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাড়িতে আসবেন। খুবই ভাল লাগছে। মা কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছেন। সবটাই মায়ের জন্য। সরকারের কাছে আবেদন, পড়াশোনা করে চাকরি করতে চাই। পরে বাবা মা সব সময় কাজ করতে পারবেন না। তখন যেন আমি তাঁদের সাহায্য করতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy