Advertisement
E-Paper

খেতে পড়ে খেন রাজাদের স্নানপাত্র

রক্ষণাবেক্ষণ নেই। বছরের পর বছর খোলা জায়গায় পড়ে থাকলেও একেবারে নষ্ট হয়নি খেন রাজাদের স্নানপাত্র। ধূসর গ্রানাইট দিয়ে তৈরি ওই স্নানপাত্র দেখতে এখনও ওই গ্রামে যান ইতিহাস গবেষক থেকে শুরু করে আগ্রহী মানুষেরা।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০২:০০
ইতিহাসের সাক্ষী স্নানপাত্র পড়ে এ ভাবেই। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

ইতিহাসের সাক্ষী স্নানপাত্র পড়ে এ ভাবেই। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

রক্ষণাবেক্ষণ নেই। বছরের পর বছর খোলা জায়গায় পড়ে থাকলেও একেবারে নষ্ট হয়নি খেন রাজাদের স্নানপাত্র। ধূসর গ্রানাইট দিয়ে তৈরি ওই স্নানপাত্র দেখতে এখনও ওই গ্রামে যান ইতিহাস গবেষক থেকে শুরু করে আগ্রহী মানুষেরা। খেন রাজাদের সময়ে তৈরি স্থাপত্য নিয়ে কেন প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে না, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। কোচবিহারের পুটিমারী-ফুলেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি গ্রাম শীতলাবাস। সেখানে একটি খেতে রয়েছে ওই স্নানপাত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই পাত্রটিকে ‘রাজার ডাল খাওয়ার বাটি’ হিসেবেই জানেন। ওই গ্রামেই মাটির নীচে ইটের তৈরি একটি স্থাপত্য আবিষ্কার করেন বাসিন্দারা। তাঁদের ধারণা, সেখানে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। গোসানিমারি রাজপাট থেকে দশ কিলোমিটার দূরে ওই শীতলাবাসেও এ বারে খননকাজের দাবি করেছেন কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটি। তাঁরা ওই দাবি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ওই সোসাইটির সম্পাদক তথা ইতিহাস গবেষক অরূপ মজুমদার বলেন, “কামতাপুর রাজ্যের রাজধানী ছিল গোসানিমারি। বাংলার পাল ও সেনযুগের সমসাময়িক কালে কামতাপুর রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রযুক্তিগত কলাকৌশল এবং স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে সম্যক জ্ঞান ছিল। গোসানিমারিতে খনন কাজ শুরু হয়েও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শীতলাবাসের মতো জায়গায় খননের কথা ভাবাই হয়নি। গৌড়ের মতো উত্তরবঙ্গের পর্যটন সার্কিটে গোসানিমারি, শীতলাবাস আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছার।” ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে গোসানিমারির খননকাজ শুরু করা হয়। ওই কাজ দুই বছর চলে। আপাতত তা বন্ধ রয়েছে। সেই কাজ কবে শুরু হবে, তা স্পষ্ট ভাবে কেউ কিছু জানাতে পারেন না। জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “শীতলাবাস গ্রামের বিষয় দেখা হবে।”

গোসানিমারি খনন কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই ক্ষোভ রয়েছে। এ রকম একটি ইতিহাসকে সে ভাবে কেন কোনও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্ন উঠেছে। অরূপবাবু জানান, ১৮০৮ সালে রংপুর এবং কোচবিহারের গোসানিমারি এলাকা পরিদর্শনকালে বুকানন হ্যামিল্টন শীতলাবাস গ্রামে যান। গোসানিমারির গড়ের দেড় কিলোমিটার উত্তরে ওই গ্রামে খেন রাজাদের স্নানপাত্রের খবর তিনি পেয়েছিলেন। শীতলাবাস নামের অর্থ ঠান্ডা কোনও আবাসস্থল হলেও সেখানে কোনও প্রাসাদ সেই সময়ও খুঁজে পাননি বুকানন। তাঁর ধারণা ছিল, কোনও ছায়া ঘেরা গাছের বা ফুলের বাগানের মধ্যে ওই স্নানপাত্র বসানো হয়। প্রায় ছয় ইঞ্চি পুরু, সাড়ে তিন ফুট গভীর এবং ছয় ফুটের বেশি চওড়া ওই পাত্রটি। গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে কোচবিহারের রাজারা ওই পাত্রটি নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। একটি লোহার গাড়িতে পাত্রটি তোলার সময় সেটির কিছুটা অংশ ভেঙে যায়। তারপর থেকে সেটি সেখানেই রয়ে গিয়েছে। ওই পাত্র থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে একটি সুড়ঙ্গও খুঁজে পান বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা সুরজিৎ বর্মন বলেন, “আমরা একদিন একটি খালে নেমে মাছ ধরছিলাম। অনেক সময় মাছ গর্তের ভিতরে ঢুকে থাকে। লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে তা ধরা হয়। সে রকম করতে গিয়ে ওই সুড়ঙ্গ পাই। অনেকটা কেটে আমরা ভিতরে ঢুকি। যেমনটা দেখেছি, তাতে একজন মানুষ খুব সহজেই ওই পথ দিয়ে হেঁটে যেতে পারবে।” পরে অনেকেই সেখানে গিয়ে সুড়ঙ্গ দেখেন। ধীরে ধীরে আবার ওই মুখটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু অংশ এখনও নজরে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা বছর চল্লিশের চন্দ্রশেখর মোদক, চিত্তরঞ্জন মোদক বলেন, “জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ওই পাত্র আমরা দেখছি। আমাদের বাপ-ঠাকুর্দা বলেছিলেন ওই পাত্রে রাজা ডাল খেতেন। তাই ডাল খাওয়া বাটি হিসেবেই সেটিকে আমরা জানি। বহু মানুষ আসেন ওই বাটি দেখতে।”

Bath tub
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy