Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘরছাড়া বয়স্কদের নিয়ে আশ্রয় গৃহ

জন্মদাত্রী মাকে ভুলে গিয়ে ঘর ছাড়া করে ছেড়েছেন কয়েকজন সন্তান। তাঁদেরকে কাছে টেনে আশ্রয় দিয়ে নিজের ঘর ভরিয়ে তুলেছেন তিনি।

অলোক গুহ
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৫৩
Share: Save:

আর মাত্র কয়েকঘণ্টার পরেই মৃন্ময়ী মায়ের আবাহনে গা ভাসাবে গোটা বাংলা। অথচ, সব থেকেও আজ যে মায়েরা আশ্রয়হীন, পরিবার পরিত্যক্ত, তাঁদের খোঁজ কে রাখবে? তেমন মানুষদের নিয়ে নিজের মতো করে ভেবেছেন ডুয়ার্সের ডিমডিমার সমাজকর্মী সাজু তালুকদার। সেই সব ঘরছাড়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে নিজের জীবন পাত্র সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি। একটু অন্য রকমভাবে।

জন্মদাত্রী মাকে ভুলে গিয়ে ঘর ছাড়া করে ছেড়েছেন কয়েকজন সন্তান। তাঁদেরকে কাছে টেনে আশ্রয় দিয়ে নিজের ঘর ভরিয়ে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে সাজু তালুকদারের আশ্রয় গৃহে ১৩ জন এমন মানুষ আশ্রয় পেয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ছ’জন মহিলা এবং সাতজন পুরুষ। বয়সের ভারে এখন তাঁরা ন্যুব্জ। ছেলেমেয়েদের কাছে হয়তো সংসারের বোঝা। তাই তো ভরা ঘর, সংসার থাকলেও আজ পরাশ্রয়ে তাঁরা।

আলিপুরদুয়ারের খোলটার বাসিন্দা উষারানি ঘোষ জানালেন, তাঁর দুই ছেলে। তাঁদের নিয়ে সুখেই কাটছিল তাঁর সংসার। কিন্তু ছেলেদের বিয়ে দিয়ে তিনি হয়ে গিয়েছেন সংসারের বোঝা। ছেলেরা কেউ মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। অতএব বাড়ি থেকে বিতাড়িত তিনি। কিছুদিন ভবঘুরের মতো ঘুরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে পৌঁছন সাজু তালুকদারের আশ্রয় গৃহে।

বিহারের কাটিহারের উমাদেবীর দুই ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেমেয়েরা কেউ-ই দু’মুঠো ভাত দিতে রাজি নয় জন্মদাত্রীকে। তাই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ছেড়েছে মাকে। অসমের বারুণী চৌধুরি মানসিক রোগে আক্রান্ত। শিলিগুড়িতে সুভাষচন্দ্র রায়ের চিকিৎসায় আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। সোমাই খরিয়া, মনে করতে পারছেন না তাঁর বাড়ি কোথায়। বীরপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পরিবারের কেউ রেখে যায়। তারপরে আর খোঁজ নিতে আসেনি। তিনিও আশ্রয় গৃহের আবাসিক।

সাজু তালুকদার বৃদ্ধাশ্রম বিরোধী। টাকা, পয়সা দিয়ে মা-বাবাকে পরিবারের থেকে দূরে রাখার প্রথা উঠিয়ে দিতে চান তিনি। তাই সমাজ থেকে বৃদ্ধাশ্রম কথাটি মুছে দেওয়ার পক্ষে তিনি। তাই চালচূলোহীন বয়স্ক মানুষদের সকলকে তিনি নিজের পরিবারের এক জন মনে করেন বলে জানালেন। নিজের খরচেই তাঁদের আশ্রয় গৃহে রেখেছেন।

তিনি জানালেন, ‘‘সমাজ আধুনিক হচ্ছে, ডিজিটাল হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আমরা সন্তানরা কি ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি? একদিন যাঁদের হাত ধরে আমরা চলতে শিখেছি, আজ তাঁদের হাত-ই ছাড়িয়ে নিচ্ছি, তাঁকে নিজের থেকে দূর করে দিচ্ছি। ভাবছি না, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমাদের জীবনেও হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Elderly People Homeless
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE