ভোটের ফল বেরোনোর পরে উচ্ছ্বাস ছিল। আশা ছিল, শপথগ্রহণের দিনেও তা দেখা যাবে। কিন্তু শুক্রবারে উদ্দীপনার ছিটোফোঁটাও দেখা গেল না আলিপুরদুয়ার শহরে।
কারণটা অবশ্য সকলেরই অনুমেয়। রাজ্যের নবগঠিত মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীর। দিনভর হতাশা ফুটে উঠেছে আলিপুরদুয়ারের চায়ের দোকান থেকে কোট চত্বর সরকারি দফতরের টেবিলে টেবিলে। দলমত নির্বিশেষে একটাই আলোচনা— কেন এমন হল। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি, দুই জেলার তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর রাজনৈতিক মার্কশিটের নম্বর দেখেই তিনি মন্ত্রিত্ব পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধে ছিলেন বাসিন্দারা। কারণ নির্বাচনের আগে আলিপুরদুয়ারে সভা করে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ও ভাল ছেলে। ওকে জেতান। আমি রাজ্যের হয়ে ওকে কাজ করাব। স্বাভাবিকভাবেই জেতার পর সৌরভের মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন জেলার নেতারা। কিন্তু মমতার মন্ত্রিসভায় জায়গা না হওয়ায় কার্যত হতাশ বাসিন্দারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘সৌরভ দুই জেলার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি জেলাতেই প্রথম সাংসদ আসনে জেতে তৃণমূল। আলিপুরদুয়ার পৃথক জেলা হয়। আলিপুরদুয়ারে দলবদল করিয়ে জেলাপরিষদ দখল করে দল। তার পর বিধানসভায় দুই জেলা থেকে সৌরভের নেতৃত্বে ১০ জন বিধায়ক জয় লাভ। এত কিছুর পর মন্ত্রিত্ব সাধারণ মানুষ চাইতেই পারেন।’’
দলের নেতারাও এ দিন মুখ খোলা নিয়ে সর্তকতা অবলম্বন করেছিলেন। তবে দলের অন্দরের খবর, ফল বেরোনোর পরেই নেত্রী সৌরভকে বলেছিলেন সংগঠনে মন দিতে। তাই তিনি যে মন্ত্রিত্ব নাও পেতে পারেন, সে কথা দলের অনেকে অনুমান করেছিলেন। সৌরভবাবু বলেন, “দলের নির্বাচিত বিধায়ক দলের নির্দেশ মেনেই এলাকায় উন্নয়ন ও সংগঠনের দায়িত্ব সামলাব।” মন্ত্রিত্ব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে হতাশা গোপন না করলেও নেত্রীর উপরে ভরসা করছেন কর্মীরা। তৃণমূলের এক শিক্ষক নেতা অজিত নাথ বলেন, মন্ত্রিত্বের তালিকা দেখে প্রথমে হতাশ হয়েছিলাম। সেজন্য ফেসবুকে ‘অবিচার’ শব্দটি লিখেছিলাম। পরে বুঝতে পারে নেত্রী যেভাবে আলিপুরদুয়ারের উন্নয়ন ওর মাধ্যমে করিয়েছেন আগামী দিনেও তা বজায় থাকবে। পরে পোস্টটি তুলে নিই। তৃণমূলের রাজ্যের সহ সভাপতি জহর মজুমদার বলেন, ‘‘ও (সৌরভ) দুই জেলার সংগঠনকে আরো মজবুত করবে।’’ জয়গাঁর এক তৃণমূল কর্মী রজব আলির কথায়, ‘‘সৌরভদা মন্ত্রী হবে বলে আশায় ছিলাম। কার্যত হতাশ হলাম। তবে দিদি ওকে পরে মন্ত্রী করবে এটা আমাদের আশা।’’
শুধু দলীয় কর্মীরাই নয় ফেসবুকে আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষই সৌরভের মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন। সরকারী দফতরের কর্মীদের একটা অংশও না নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে জানিয়েছেন সৌরভবাবু মন্ত্রিত্ব পেলে হয়তো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যেত। তবে দলের একাধিক নেতা জানান, তাঁরা আশাবাদী আগামী দিনে নেত্রী মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত করলে সৌরভ তাঁর যোগ্য সম্মান পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy