Advertisement
E-Paper

এ বার ওরা কথা রাখুক, মনে করিয়ে দিচ্ছেন অমু

বোর্ড গঠনের আগের রাত পর্যন্ত তাঁকে দলে টানার চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের মেয়র পদের দাবিদার নান্টু পাল। রবিবার রাত ১১টার পরে শিলিগুড়িতে যখন তুমুল বৃষ্টি চলছে, সে সময়ে সমর্থন চেয়ে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর। বৃষ্টি মাথায় বাড়িতে আসা দীর্ঘদিনের পরিচিত দুই কাউন্সিলরকে চা খাইয়ে, হাসিমুখে আঠান্নয় পা দেওয়া নির্দল কাউন্সিলর অমুদা বলেছেন, ‘‘কিন্তু, কথা তো আগেই দিয়ে ফেলেছি।’’

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০২:২৮
বাড়িতে মায়ের সঙ্গে অরবিন্দ ঘোষ। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাড়িতে মায়ের সঙ্গে অরবিন্দ ঘোষ। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বোর্ড গঠনের আগের রাত পর্যন্ত তাঁকে দলে টানার চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের মেয়র পদের দাবিদার নান্টু পাল। রবিবার রাত ১১টার পরে শিলিগুড়িতে যখন তুমুল বৃষ্টি চলছে, সে সময়ে সমর্থন চেয়ে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর। বৃষ্টি মাথায় বাড়িতে আসা দীর্ঘদিনের পরিচিত দুই কাউন্সিলরকে চা খাইয়ে, হাসিমুখে আঠান্নয় পা দেওয়া নির্দল কাউন্সিলর অমুদা বলেছেন, ‘‘কিন্তু, কথা তো আগেই দিয়ে ফেলেছি।’’

২৫ শে বৈশাখের বিকেলে বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে সমর্থনের ‘কথা’ দিয়েছিলেন শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ। তার ৬ দিনের মাথায় মেয়র পদে অশোকবাবু মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন প্রস্তাবক হিসেবে সই করেছেন তিনি। তার পরেও তাঁর সমর্থন পেতে সক্রিয় ছিলেন তৃণমূলের একাংশ নেতারা। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে ছিলেন তিনি। সোমবার অশোক ভট্টাচার্য মেয়র পদে শপথ নেওয়ার পরে, পুরসভার সভাঘর থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘ভোটের ফলের পর থেকেই অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা সামলাতে হয়েছে। কত পরিচিত লোকের অনুরোধে বিব্রত হয়েছি। কষ্ট হলেও, সেই অনুরোধ ফেরাতে হয়েছে। এ বার অনেকটাই নিশ্চিন্ত মনে হচ্ছে। আমাকে নিয়ে অন্তত আর টানা হেঁচড়া হবে না।’’

খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব প্রার্থী হচ্ছেন জেনেও, ওই ওয়ার্ড থেকেই নির্দল হিসেবে ভোটে লড়ার কথা জানিয়েছিলেন অরবিন্দবাবু। এই ওয়ার্ড থেকেই আগে দু’দফায় নির্দল হিসেবেই জিতেছেন তিনি। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে চর্চার শুরু। মন্ত্রী গৌতমবাবু অবশ্য পরে পুরভোটে প্রার্থী হননি। কিন্তু শিলিগুড়ি পুরভোটের ফল প্রকাশের পরেই নির্দল হিসেবে জেতা অরবিন্দবাবুকে ঘিরেই বোর্ড গঠনের সমীকরণ আবর্তিত হতে শুরু করে। ৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভায় বোর্ড গঠনের ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৪। বামেদের দখলে আসে ২৩টি আসন। বোর্ড গঠন করতে তাঁর সমর্থনের উপরেই নির্ভর করেছিল বামেরা। একক ভাবে ১৭টি আসন পেয়ে বোর্ড দখল করার চেষ্টা শুরু করে তৃণমূলও। অরবিন্দবাবুর সমর্থন ছাড়াও তৃণমূলেরও বোর্ড গঠনের সংখ্যা অধরা থাকায় অরবিন্দবাবুকে নিয়ে ‘টানাটানি’র শুরু।

সেই ‘টানাটানি’ চলছে রবিবার রাত পর্যন্তও। পুরভোটের ফল প্রকাশের পরেই, মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে এসেছিলেন। সে দিন তাকে জোর করে মুখ্যমন্ত্রীর সামনাসামনি বসিয়ে দেওয়া হতে পারে, আশঙ্কায় শহর ছেড়েছিলেন অরবিন্দবাবু। এ দিন, সোমবার সকালেও অরবিন্দবাবুর অনুগামীরা ‘টেনশনে’ই ছিলেন। এ দিন সকালে তিনি ঘুম থেকে ওঠার আগেই সহকর্মীদের কয়েকজন হাকিম পাড়ায় অরবিন্দবাবুর বাড়িতে চলে যান। এক অনুগামীর কথায়, ‘‘যে ঘোড়া কেনাবেচার জল্পনা চলছে, কী ঘটবে বলা তো যায় না। কেউ হয়ত জোর করে দাদাকে নিয়েও যেতে পারে। তাই চলে এলাম।’’

তবে, অরবিন্দবাবুকে অবশ্য সে সব নিয়ে এ দিন বিচলিত দেখায়নি। সকাল ১০টার পরে ঘুম থেকে উঠেছেন। বাড়িতে ভিড় করা পরিচিতদের সঙ্গে লিকার চা খেতে খেতে আড্ডাও দিয়েছেন। অশীতিপর মা’কে দোতলার বসার ঘরে নিয়ে এসে তাঁকেও গল্পে সামিল করেছেন। বোর্ড গঠনের সভায় যাওয়ার জন্য সঙ্গীরা তাড়া দিলেও সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছেন। পুরসভায় যাওয়ার সময় হয়ে আসার, আধঘণ্টা আগেও আরেক প্রস্ত চা খেতে চেয়েছেন। বলেছেন, ‘‘অনেকদিন পরে নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে।’’

বামেদের সমর্থন করে উন্নয়নের জন্য ১৪ দফা প্রস্তাব এবং ১০ দফা ভাবনা লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন অরবিন্দবাবু। সোমবার শপথ গ্রহণের পরে পুরসভার তরফে সংবর্ধনা মঞ্চে অরবিন্দবাবুকে ডেকে নেন মেয়র অশোকবাবু। অরবিন্দবাবুর সাদা পাঞ্জাবিতে তখন উড়ে এসে, লাল আবিরের ছিটে লেগেছে।

পড়ন্ত বিকেলে পুরসভা ছাড়ার সময়ে অরবিন্দবাবু বললেন, ‘‘আমি কথা রেখেছি। এ বার ওদের কথা রাখার পালা।’’

Siliguri Aravinda Trinamool municipality Nanty Pal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy