Advertisement
E-Paper

সব্জির ট্রাকে ঢুকছে শব্দবাজি

শু‌ধু জানাতে হবে, কোথায় মিলবে। কোথাও দোকানের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেউ। কোথাও ফুটপাথের পাশে মুখ বাঁধা চুপড়ি নিয়ে বসে রয়েছেন কেউ। ঠিকানাটি জানা থাকলে, কেবল গিয়ে দাঁড়ালেই হবে। কয়েক মিনিটে হাতে চলে আসবে কাগজে মোড়া চকোলেট বোম, দোদমার প্যাকেট। আতসবাজির দোকানে কিন্তু পাওয়া যাবে না। নজর রাখতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৯
(বাঁ দিকে) মালদহে উদ্ধার শব্দবাজি। (ডান দিকে) মঙ্গলবার ধূপগুড়িতে পুলিশি অভিযানে উদ্ধার দেড় লক্ষ টাকার শব্দবাজি। — নিজস্ব চিত্র

(বাঁ দিকে) মালদহে উদ্ধার শব্দবাজি। (ডান দিকে) মঙ্গলবার ধূপগুড়িতে পুলিশি অভিযানে উদ্ধার দেড় লক্ষ টাকার শব্দবাজি। — নিজস্ব চিত্র

শু‌ধু জানাতে হবে, কোথায় মিলবে।

কোথাও দোকানের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেউ। কোথাও ফুটপাথের পাশে মুখ বাঁধা চুপড়ি নিয়ে বসে রয়েছেন কেউ।

ঠিকানাটি জানা থাকলে, কেবল গিয়ে দাঁড়ালেই হবে। কয়েক মিনিটে হাতে চলে আসবে কাগজে মোড়া চকোলেট বোম, দোদমার প্যাকেট। আতসবাজির দোকানে কিন্তু পাওয়া যাবে না। নজর রাখতে হবে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে ঠিকানা বাতলে দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই।

উত্তরবঙ্গের অনেক জেলার ছবিই এমন। গ্রামেও নিষিদ্ধ শব্দবাজি মেলে। কিন্তু, পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, নিষিদ্ধবাজির জোগান রুখতে বাজির গুদাম এবং রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি তল্লাশি চলছে। তবে বাজারে শব্দবাজি আসছে কোথা থেকে?

নাম, ঠিকানা না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন বাজি ব্যবসায়ী যা দাবি করলেন, দুর্গাপুজোর পর থেকে শব্দবাজি নিয়ে রাজ্য জুড়ে চর্চা আর সেই সঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকার পরে কড়াকড়ি বেড়েছে। জাতীয়-রাজ্য সড়কের বিভিন্ন টোলগেট, চেকপোস্টে তল্লাশি বেড়েছে। তবু সেই তল্লাশির ফাঁক গলিয়ে বাজি ঢুকছে উত্তরের বাজারে।

সম্প্রতি হুগলি থেকে দু’দিনে লক্ষাধিক টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি ঢুকেছে উত্তরবঙ্গে। সে শব্দবাজি আনা হয়েছে সব্জির ট্রাকে চাপিয়ে। দশ চাকার বড় ট্রাকে মালপত্র রাখা যায়। প্রথম দু’তাকে সব্জি। পরের তাকগুলোতে থরে থরে সাজানো শব্দবাজির প্যাকেট। শিলিগুড়ি, ইসলামপুর, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন সব্জি গুদামেই রাখা হয়েছিল বাজিগুলিকে। সব্জি গুদামের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় বাজিতে যাতে নোনা না লেগে যায়, সে কারণে তুলো, পটাশ সহ বিভিন্ন রাসায়নিক গুঁড়ো ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল। গুদাম থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে টোটো-বাইকে করে পৌঁছে যায় সেগুলি। ছোট ব্যাগে একাধিকবার আনা নেওয়া করা হয়, তাতে পুলিশেরও সন্দেহ হয় না বলে দাবি।

প্যাসেঞ্জার ট্রেনেও এক শহর থেকে অন্য শহরে শব্দবাজি পাচার চলছে বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের দাবি, উত্তরবঙ্গের কোথাও নিষিদ্ধ বাজি কারখানা নেই। মূলত হুগলি, হাওড়া, ব্যারাকপুর সহ উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে উত্তরবঙ্গে বাজি ঢুকছে।

বাজি-পাচারের এই কৌশল কিন্তু খুব লুকোনো কিছু নয়। অনেকেই জানেন। কিন্তু পুলিশ জানে না? অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে পাচারকারীদের ‘বন্দোবস্ত’ রয়েছে। মোটা টাকায় রফা হওয়াতে অনেক ক্ষেত্রে বাজি বোঝাই ট্রাক যাওয়ার আগেই টোল গেটের তল্লাশি শিথিল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। গভীর রাতে এবং ভোর বেলায় কোন গাড়িতে নিষিদ্ধ বাজি যাচ্ছে তা আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের একাংশের কাছে ‘খবর’ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। যার জেরেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকার মালুম পড়ে না কোচবিহার শহরে। কোচবিহারের সব বাজারেই শব্দবাজি মিলছে বলে অভিযোগ। জেলার গ্রামের দিকে বাজারগুলিতে অবশ্য প্রকাশ্যেই শব্দবাজি বিক্রি হয় বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ী সমিতির কর্তারাও পরিস্থিতি স্বীকার করে নিচ্ছেন। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য তথা ফোসিনের সদস্য রানা গোস্বামী বলেন, “শব্দবাজি যে বাজারে কিছু রয়েছে, তা অস্বীকারের কিছু নেই। আমরা সংগঠনগত ভাবে সবার কাছে শব্দবাজি বিক্রি না করতে আবেদন জানিয়েছি।”

শুধু বিক্রি নয়, আলিপুরদুয়ারে এখন থেকেই চকোলেট, দোদমা দেদারে ফেটেই চলেছে। আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু অভিযোগ করে বলেন, “গত রবিবার থেকে শুরু হয়ে বাজি ফাটা। সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। কালীপুজোর আগেই যদি এই অবস্থা হয়, পুজোর সময়ে কী হবে, তা ভেবেই বুক কেঁপে উঠছে।’’

শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, ইসলামপুর শহরের ব্যস্ততা-আয়তন যাই হোক না কেন, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির প্রবণতা এক পঙ্‌তিতে বসিয়ে দিয়েছে। তবে পুলিশি সক্রিয়তাও রয়েছে। গত সোমবার রাতে কোচবিহারের শহরের বাদুরবাগানে বিশ্বসিংহ রোডের পাশে থাকা একটি দোকানে হানা দিয়ে প্রায় চার হাজার প্যাকেট শব্দবাজি উদ্ধার করে পুলিশ। একই রাতে, ইংরেজবাজার শহর থেকেও প্রায় ২৫ হাজার টাকার শব্দ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এ দিন মঙ্গলবার সকালে ধূপগুড়ি বাজারের বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে দেড় লক্ষ টাকার বিভিন্ন ধরনের শব্দবাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ১ জনকে।

যদিও তাতে শব্দবাজির তাণ্ডবের আশঙ্কা কাটছে না বাসিন্দাদের। কারণ, গোড়াতেই গলদ রয়েছে বলে দাবি। বাজির বাজার নিয়েই উঠছে গুচ্ছ-গুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ। প্রকাশ্যেই চলছে অনুমতিহীন বাজি বাজার।

Illegal fireworks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy