মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বয়স হল সাত বছর। অথচ এখনও সেই গ্রামীণ হাসপাতালের মতোই চলছে উত্তরবঙ্গের বহু মানুষের ভরসা এই চিকিৎসা কেন্দ্রটির অস্থিরোগ বিভাগ। অভিযোগ, স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে বহু বার আর্জি জানিয়েও কাজের কাজ হয়নি। ফলে, মেডিক্যাল কলেজ থাকা সত্ত্বেও ভিড় বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু গরিব রোগীরা সেখানে যেতে পারছেন না। তাঁদের ভরসা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাই হাতুড়েরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন ওই বিভাগেরই কিছু চিকিৎসককে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তার উপরে অনেকে গরহাজির থাকেন। অভিযোগ, ওই বিভাগের কিছু চিকিৎসক হাসপাতালের বদলে বেশি সময় দেন শহরের নার্সিংহোমগুলিতে। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মহম্মদ আব্দুর রশিদ অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, ‘‘বিভাগের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। অর্থোপেডিক বিভাগের জন্য তৈরি হচ্ছে পৃথক অপারেশন থিয়েটারও।’’
রোগীদের অবশ্য বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ সব সময়েই এমন সমস্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে মূল গোলমাল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ২০০৮ সালে যে চিকিৎসালয় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পরিণত হয়েছে, তার এমন বেহাল দশা এত দিনেও কেন কাটল না, তার জবাব দেবেন কে?
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থিরোগ বিভাগে আট জন চিকিৎসক থাকার কথা। রয়েছেন ছ’জন। রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য বছর দু’য়েক আগে ২০ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছিল ‘সিয়াম মেশিন’। রোগীর দেহের কোথাও কোন চিড় ধরলে তা মনিটরের মাধ্যমে দেখে অস্ত্রোপচার করতে পারবেন চিকিৎসকেরা। তবে যন্ত্রটি ব্যবহার করার উপযুক্ত কর্মী না থাকায় তা পড়েই রয়েছে। এই হাসপাতালে এখন হাত, পা ভেঙে গেলে প্লাস্টার ছাড়া কিছুই হয় না বলে অভিযোগ।
অথচ এই হাসপাতালের অস্থিরোগ বিভাগে রোগীর চাপ রয়েছে। এই জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে ৩৪ ও ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক। রয়েছে একাধিক রাজ্য সড়ক। সে সব রাস্তার হাল খারাপ। গাড়িগুলিও নিয়ম মেনে যাতায়াত করে না। পথ দুর্ঘটনার এই জেলায় নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু অর্থোপেডিক বিভাগের এমন হালের জন্য নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বেসরকারি হাসপাতালে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। সবার পক্ষে তা করা সম্ভব হয় না। কেউ কেউ যান হাতুড়েদের কাছে। অনেকে ভিড় জমান কবিরাজদের কাছে। জেলার গাজল, সামসি, কালিয়াচকে কবিরাজদের কাছে ভিড় বাড়ছে। কিন্তু তাঁদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠছে। যেমন, বৈষ্ণবনগরের এক ভুক্তভোগী মল্লিকা দাস জানান, বছর দু’য়েক আগে পড়ে গিয়ে তাঁর ডান হাত ভেঙে যায়। মেডিক্যালে গিয়ে ভর্তি হলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, এখানে চিকিৎসা হবে না। যেতে হবে নার্সিংহোমে। তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় এলাকার এক কবিরাজের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। আমার হাতটি এখনও বাঁকা হয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে ব্যথাও হয়। মেডিক্যাল কলেজে সুচিকিৎসা হলে আমাকে হাত নিয়ে ভুগতে হত না।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীও অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, ‘‘অর্থোপেডিক বিভাগের সমস্যা মেটানো হচ্ছে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy