ভেবেছিলাম আজ স্কুলে যাব। কিন্তু মাথার উপর কাজের চাপ। স্কুলের পোশাকও ছেঁড়া। তাই আর স্কুলে যাওয়া হল না। এখন আমি বোয়ালদাড়ে দিদা, বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকি। কাটনা আদিবাসী কেএমএস বিদ্যাপীঠে দশম শ্রেণিতে পড়ি। বাড়িতে কয়েকটি ছাগল এবং একটি গরু রয়েছে। সেগুলির জন্য ঘাস কাটতেই জমিতে এসেছিলাম।
আমাদের একফালি জমিও রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাবা বিশ্বনাথ মোহান্ত ভিন্ রাজ্যে গাড়ি চালানোর কাজ করছেন। মা মাধবী কখনও অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। আমাকেও পরিবারের পাশে দাঁড়াতে টুকটাক কাজ করতে হয়। ধান কাটার কাজেও পরিবারকে সাহায্য করি। এ ভাবেই খুব কষ্ট করেই আমাকে পড়াশোনা চালাতে হয়। আগেও সব সময় স্কুলে গিয়ে ক্লাস করার সুযোগ পাই না। কারণ, এখন তো আর দশম শ্রেণিতে মিডে-মিলের খাবার দেয় না। তাই পেটের চিন্তা আগে করে, তবে পড়াশোনার ব্যাপারে ভাবার সুযোগ পাই।
আজ স্কুল খুলছে দীর্ঘদিন পর, সেটা শুনেছি। সপ্তম শ্রেণির পর আর স্কুল করা হয়নি। বন্ধুরা স্কুলে গিয়েছে শুনে খারাপ লাগছিল। কিন্তু উপায় নেই। কিন্তু স্কুলের ব্যাগ ছিঁড়ে রয়েছে। পোশকও ঠিকঠাক করা দরকার। বাবা এখন নেই। তাই বাড়িতে কিছু কাজের দায়িত্ব আমার উপর পড়ে। গরু-ছাগলগুলির খাবার কিছুটা মাঠ-ঘাট থেকে যোগাড় করে আনতে হয়। আমাদের পরিবারে জব কার্ড রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় কাজ হয়নি। বাড়িতে রান্নার গ্যাস রয়েছে। কিন্তু গ্যাসের দাম অনেক বেশি। আমাদের কেনার ক্ষমাত নেই। তাই আর তাতে রান্না করা হয় না। জ্বালানির খড়িও যোগাড় করতে হয় আমাকে। ধান পেকে গিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটার কাজও শুরু করতে হবে। সে কারণে ইচ্ছে থাকলেও কবে স্কুলে যেতে পারব, ক’দিন আবার ক্লাস করতে পারব, জানি না।
দশম শ্রেণি, কাটনা আদিবাসী কেএমএস বিদ্যাপীঠ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy