Advertisement
০৫ মে ২০২৪

পাটের দাম পড়ায় মাথায় হাত চাষিদের

শুরুতেই পাটের অভাবি বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। ভারতীয় জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (জেসিআই) এখনও পাট কিনতে নামেনি।

বালুরঘাটে কামারপাড়া হাটে পাট বিক্রি। —নিজস্ব চিত্র।

বালুরঘাটে কামারপাড়া হাটে পাট বিক্রি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৬
Share: Save:

শুরুতেই পাটের অভাবি বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। ভারতীয় জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (জেসিআই) এখনও পাট কিনতে নামেনি।

রাজ্যের তরফে কিসানমান্ডিতেও চাষিদের পাট কেনার কোনও পরিকল্পনা হয়নি বলে অভিযোগ। সেই সুযোগে মজুতদারেরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় চাষিরা কম দামে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাটের লাভজনক দাম না পেয়ে জেলা জুড়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশার ছায়া। পুজোর মুখে ওই অর্থকরী ফসল পাটের উপর নির্ভর করে কৃষক ও গৃহস্থ পরিবার নতুন জামা কাপড় এবং উৎসবের বাড়তি খরচের আশায় থাকেন। আশা ভঙ্গের ফলে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

ধানের পরপরই পাটচাষে চাষিদের মধ্যে কোনও কালেই উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। তার কারণ, পুজো, পরব, রীতি পালনের এই মরসুমের বাড়তি খরচ ওই অর্থকরী ফসল পাটই তাদের ভরসা দেয়।

জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, চলতি বছর দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি থেকে পাট তুলে জাগ (পচিয়ে) দিয়ে তন্তু বের করে হাট বাজারে বিক্রির জন্য লাইন দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।

চলতি বছর পাটের সরকারী সহায়ক মূল্য ধার্য হয়েছে প্রতি কুইন্টাল ৩৭০০ টাকা। অথচ হাটগুলিতে চাষিদের কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম মিলছে ৩২০০ থেকে বড় জোর ৩৪০০ টাকা। বালুরঘাটের জলঘর এলাকার বড় পাটের হাটে দাঁড়িয়ে তপন ব্লকের আউটিনা অঞ্চলের পাট চাষি নিরঞ্জন মণ্ডল, ভগীরথ বিশ্বাস, বিশ্বজিত মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘শুরুতে প্রতি কুইন্টাল পাটের দাম ৫০০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। লাভজনক দাম মিলছে দেখে আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু দিন পনের পর ঝপ করে দাম নেমে গেল।’’ ইতিমধ্যে হাটে হাটে ভ্যানো (ভুটভুটি) এবং গরুর গাড়িতে চাপিয়ে দলে দলে চাষিরা পাটের গাঁট বেঁধে বিক্রির জন্য আসতে শুরু করেছেন। ফড়ে এবং এজেন্টদের নির্ধারিত দাম শুনে তাঁদের মাথায় হাত।

নিরঞ্জনবাবু বলেন, পুজোর মুখে টাকা প্রয়োজন। পাট বেচে জমিতে কাজ করা মজুরদের পাওনা মেটাবো বলে চুক্তি হয়েছিল। পাট আর ফেরত নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় দেখে বাধ্য হয়ে কম দামেই বেচতে হয়েছে। চাষিদের বক্তব্য, অন্তত কুইন্টাল প্রতি ৫০০০টাকার উপরে দাম পাওয়া গেলে লাভের মুখ দেখা যাবে।

পাট চাষিদের এই অভাবি বিক্রির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম কৃষক সংগঠন। বুধবার বালুরঘাটের বোল্লা এলাকায় জেসিআই-য়ের দফতরের সামনে বামপন্থী কৃষক সংগঠনের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সিপিএমের কৃষক সভার নেতা হীরেন সাহার অভিযোগ, জেসিআই পাট কিনছে না। কিন্তু রাজ্য সরকার তো কিসানমান্ডি থেকে চাষিদের পাট কিনে সহায়তার উদ্যোগ নিতে পারেন? কুইন্টাল প্রতি ৫৫০০টাকা দামে চাষিদের পাট কিনতে হবে বলে বাম কৃষক সংগঠনের পাশাপাশি কংগ্রেসও দাবি জানিয়েছে। তা না হলে বিরোধীরা বড় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

এ জেলার হিলি, হরিরামপুর এবং বোল্লা—তিনটি এলাকায় জেসিআইয়ের পাট ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। অথচ হিলিতে একজন নৈশপ্রহরী এবং বোল্লাতে একজন গুদাম কর্মী ছাড়া আর কোনও অফিসকর্মীর দেখা মেলেনি। জেলাশাসক সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘জেসিআই এখনও পাট কিনতে নামেনি। সংস্থার মালদহ দফতরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jute price decreasing Farmers Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE