শহরের রথতলার রেশন দোকান থেকে চালের সরবরাহ পেলেন খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে এলাকার প্রথম উপভোক্তা কুবীর মহান্ত। নিজস্ব চিত্র।
তিনিই এ রাজ্যে নতুন নিয়মের রেশন ব্যবস্থার প্রথম উপভোক্তা। শুনে ভারী খুশি কলেজপাড়ার বাসিন্দা কুবীর মহান্ত। থলি ভরে চাল ও চিনি পেয়ে উচ্ছ্বাসিত তিনি। পেশায় নির্মাণকর্মী কুবীরবাবু বলেন, ‘‘পরিবারে তিনজনের জন্য একসঙ্গে এতটা চাল ও চিনি পেয়ে ভালো লাগছে। এই ব্যবস্থা ঠিক মতো চললে আমার মতো গরিবদের খুব সুবিধা হবে।’’ ষাট-ছুঁই ছুঁই কুবীরবাবু পুরনো নিয়মে ছিলেন ‘এপিএল’। তিনজনের পরিবারের জন্য তাঁর বরাদ্দ ছিল সপ্তাহে সওয়া দু’কিলোগ্রাম চাল। নতুন নিয়মে তিনি ‘প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড’ কার্ড পেয়েছেন। এখন মাথাপিছু সপ্তাহে সওয়া দু কিলোগ্রাম হিসেবে পরিবারের জন্য ছয় কিলো ৭৫০ গ্রাম চাল পাচ্ছেন। আগে এপিএল-দের মিলত না চিনি। আজ কুবীরবাবু পেলেন মোট ১ কিলো ১২৫ গ্রাম চিনি। স্বভাবতই মিষ্টি হাসি হাসছেন কুবীরবাবু।
লাইনে ছিলেন ভবেশচন্দ্র মন্ডল, নেপাল চক্রবর্তী। চাল-চিনি পাওয়ার পর বলেন, ‘‘আমাদের আশা, এ ভাবে যেন ন্যায্য দরে খাদ্যশস্য পাই।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের ১৬ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে মোট ১০ লক্ষ ৬৪ হাজার, অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ মানুষ নতুন নিয়মে রেশনের সুবিধে পাবেন।
বুধবার তেমন ধুমধাম ছাড়াই দক্ষিণ দিনাজপুরে চালু হয়ে গেল খাদ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে খাদ্যবণ্টন। সরকারি ভাবে কার্ড বিলি শুরু হওয়ার দিন থেকেই নতুন প্রকল্পের শুরু বলে ধরা হয়। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকের মন ভরে থলি ভরে চাল-গম পেলে তবেই। ছোট জেলা, মাত্র সাতটি ব্লক, তাই এই জেলাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল ‘পাইলট’ হিসেবে। যদিও খাদ্য বিতরণ শুরু হওয়ার কথা ছিল পয়লা এপ্রিল, কিন্তু নানা বাধা পেরিয়ে শেষ অবধি ২৩ এপ্রিল শুরু হল নতুন নিয়মের রেশনবণ্টন। যদিও এ দিনও জেলার অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক চাল-চিনি তুলতে পারেননি, কারণ এখনও ডিজিট্যাল কার্ড হাতে পাননি তাঁরা। তবে কার্ড হাতে পেলে তাঁরা তাঁদের বকেয়া চাল-গম-চিনিও পেয়ে যাবেন, আশ্বাস দিয়েছেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। কলকাতার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আট সপ্তাহ অবধি এপ্রিলের বকেয়া খাদ্য তোলা যাবে।’’
চাল-চিনি পেলেও, এ দিন আটার সরবরাহ কেউ পাননি। মঙ্গলবার শেষ বেলায় আটার বরাদ্দ পেয়ে এদিন ডিস্ট্রিবিউটারদের থেকে তা সংগ্রহ শুরু করছেন রেশন ডিলারেরা। শীঘ্রই তা পেতে শুরু করবেন গ্রাহকেরা।
জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, কুশমন্ডি ব্লকের প্রায় সমস্ত এলাকায় রেশন দোকান থেকে উপভোক্তাদের গত তিন সপ্তাহের খাদ্যশস্য সরবরাহের মাধ্যমে জেলায় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলো। বালুরঘাট শহরেও কয়েকটি এলাকায় রেশন দোকান থেকে গ্রাহকেরা চাল ও চিনি পেয়েছেন। পুরো প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে বালুরঘাটে এসেছেন রাজ্য খাদ্য অধিকর্তা অরবিন্দনাথ ঘোষ। তবে জেলাশাসক তাপস চৌধুরী এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
এদিন সকালে বালুরঘাট শহরের চকভবানী রথতলার ৮ নম্বর রেশন দোকানে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্পে এলাকার ন্যায্যমূল্যের ওই রেশন দোকানের অধীন খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে ৫,৩৮৪ জন উপভোক্তার মধ্যে প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড এবং বিশেষ প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড আওতাভুক্তদের এদিন থেকে বকেয়া ৩ সপ্তাহের চাল ও চিনি বিলি শুরু হলো বলে রেশন ডিলার মিহির দাস জানিয়েছেন। তাঁর দোকান থেকে ডিস্ট্রিবিউটারের গুদাম কাছে হওয়ায় তিনি মঙ্গলবার চাল ও চিনি তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু শহরের মধ্যে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থাকা দীপালিনগর এলাকার ৪ নম্বর রেশন দোকানে গিয়ে দেখা গেল অন্য ছবি। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে চাল, চিনি তুলে দোকানে নিয়ে যেতে দেখা যায় ওই ডিলারকে। ফলে ওই ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কোনও গ্রাহক এদিন খাদ্যশস্যের সরবরাহ পাননি। বৃহস্পতিবার থেকে বিলি বন্টন শুরু হবে বলে গ্রাহকদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এদিন বালুরঘাট শহরে কোনও রেশন দোকান থেকে ডিজিটাল কার্ড দেখিয়ে প্রাপকেরা চাল ও চিনি পেলেন, কোথাও আবার ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে বরাদ্দ চাল নিতে ডিলারেরা ছুটলেন। মিনিট্রাকে বস্তা চাপিয়ে রেশন দোকানে পৌঁছতেই বেলা গড়িয়ে গেল। সব মিলিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার এবং কাল, শুক্রবার থেকে এই জেলার প্রায় ৬৫ শতাংশ ডিজিটাল কার্ড প্রাপক উপভোক্তাদের সকলে ওই প্রকল্পে বকেয়া তিন সপ্তাহের চাল, আটা ও চিনি পেতে শুরু করবেন বলে প্রশাসন জনিয়েছে।
কিন্তু বাকি রাজ্যে কবে শুরু হবে নতুন ব্যবস্থা? খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোটা রাজ্যেই চালু করা হবে। তা সম্ভব হবে কী? ‘‘সব জেলাতে চালু করা সম্ভব যদি না-ও হয়, অধিকাংশ জেলাতে নিশ্চয়ই সম্ভব হবে,’’ বলেন তিনি। তাঁর দাবি, দক্ষিণ দিনাজপুরে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে। সেই অভিজ্ঞতা অন্যান্য জেলায় কাজে দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy