এই সেতুর সংযোগকারী রাস্তার জন্য জমি নিয়ে বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র।
তুফানগঞ্জের দেওচড়াইয়ে কালজানি নদীর ওপর নির্মীয়মাণ সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য জমি দিতে চাইছেন না বাসিন্দাদের একাংশ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেওচড়াই এলাকায় ২০১৫ সালের মধ্যে সেতুটি চালুর সময়সীমা মাথায় রেখে কাজ করছে পূর্ত দফতর। ইতিমধ্যে ওই সেতু তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সম্প্রতি দেওচড়াই মোড় থেকে নির্মীয়মাণ সেতু এলাকা পর্যন্ত সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য সমীক্ষা চালান হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, দুই ধারে পূর্ত দফতরের যা জমি রয়েছে তা সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। তার ভিত্তিতে সময়সীমার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেতু চালু করতে সংযোগকারী রাস্তার জন্য বাসিন্দাদের থেকে সরাসরি উপযুক্ত দাম দিয়ে জমি কেনার পরিকল্পনাও হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ নিজেদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দিতে আপত্তির কথা জানিয়ে বিভিন্ন মহলে দরবার শুরু করেন। রবিবার নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সেতুর কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় গেলে বাসিন্দারা তাঁকেও আপত্তির কথা জানান। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতু চালু নিয়ে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ওই সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য জমির কেনার প্রয়োজন আছে। কিন্তু জোর করে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনও জমি নেওয়া হবে না। বাসিন্দারা কী চাইছেন, দাম নিয়ে কোনও প্রস্তাব আছে কি না, সে সব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বের করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।” রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “সেতুটির সংযোগকারী রাস্তার জন্য ন্যূনতম যতটা জমি দরকার, সেটার বন্দোবস্ত করার জন্য বাসিন্দাদের সহযোগিতা চাইছি। ভাল দাম, বিকল্প জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলে সমস্যা মেটানো যাবে বলে আশা করছি।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাম আমলে তুফানগঞ্জ মহকুমা সদরের সঙ্গে বলরামপুর এলাকার সরাসরি সংযোগ তৈরির জন্য কালজানি নদীর উপরে ওই সেতুর কাজ শুরু হয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কাজ গতি পায়। সে সময় বলা হয়েছিল পূর্ত দফতরের আওতাধীন জমি কাজে লাগিয়ে দেওচড়াই মোড় থেকে সেতু এলাকা পর্যন্ত ৫০০ মিটার এলাকায় গার্ডওয়াল তৈরি করে সংযোগকারী রাস্তা হবে। সেতুর কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে এখন ওই জমি অপর্যাপ্ত বলে জানিয়ে নতুন করে অধিগ্রহণের চেষ্টা হচ্ছে। গার্ডওয়াল করে রাস্তার পরিকল্পনা বদলে প্রস্থ বাড়িয়ে সাধারণ রাস্তা তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। দেওচড়াইয়ের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, “আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী গার্ডওয়াল করে পূর্ত দফতরের জমিতে রাস্তা হলেও অন্তত ৬০ মিটার চওড়া হবে। পরিকল্পনা বদলে এখন জমি অধিগ্রহণ করে ওই রাস্তা আরও প্রশস্ত করার কথা বলা হচ্ছে। আমার মতো অনেকেই এ জন্য জমি দিতে চাইছি না। বিষয়টি আগে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানান হয়েছিল। এদিন বিধায়ককেও জানিয়েছি।” মজনু হোসেন, মজিবুল হকরা বলেন, “ জমি দিলে থাকব কোথায়? বাড়ি ছেড়ে যাব না। পূর্ত দফতর নিজেদের আওতার জমি ব্যবহার করে রাস্তা করলে সেতু চালু করা যাবে।”
নাটাবাড়ির প্রাক্তন বিধায়ক তমসের আলি বলেন, “মানুষের বাড়িঘর ভেঙে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলে আমরাও সেটা সমর্থন করব না। গার্ডওয়াল তৈরি করে সংযোগকারী রাস্তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে সমস্যা হবে না।” তৃণমূলের দেওচড়াই অঞ্চল সভাপতি কবীর আলি বলেন, “সিপিএম বিভ্রান্তি ছড়ানর চেষ্টা করছে। বাসিন্দাদের এলাকার উন্নয়নের পাশে থাকতে আমরা বলেছি।” বাসিন্দারা জানান, দেওচড়াইয়ে কালজানি নদী তুফানগঞ্জ মহকুমা সদরের সঙ্গে বলরামপুরের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাসে ঘুরপথে কোচবিহার হয়ে তুফানগঞ্জ সদরে যেতে ৫০ কিমি দূরত্ব পেরোতে হয়। সেতু হলে তা কমে দাঁড়াবে ২০ কিমি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy