Advertisement
০৩ মে ২০২৪

উত্তরের চিঠি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজপাঠের সেই কবিতা বনে থাকে বাঘ, জলে থাকে মাছ, গাছে থাকে পাখি, পাখি ফল খায়, পাখা মেলে ওড়ে। শিশুদের এই কবিতার মধ্যে অনেক বিশেষত্ব রয়েছে। কিন্তু আজকাল যা পরিবেশ তাতে জলে, স্থলে, আকাশে সবস্থানেই প্রাণীরা আজ বিপন্ন। বর্তমান স্বার্থপর মানুষের লোলুপ দৃষ্টির মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে বনসম্পদ। এর ধ্বংস করার প্রবণতা বিপদ পঞ্চাশ বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

বন ধ্বংসেই বিপন্ন বন্যপ্রান

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজপাঠের সেই কবিতা বনে থাকে বাঘ, জলে থাকে মাছ, গাছে থাকে পাখি, পাখি ফল খায়, পাখা মেলে ওড়ে। শিশুদের এই কবিতার মধ্যে অনেক বিশেষত্ব রয়েছে। কিন্তু আজকাল যা পরিবেশ তাতে জলে, স্থলে, আকাশে সবস্থানেই প্রাণীরা আজ বিপন্ন। বর্তমান স্বার্থপর মানুষের লোলুপ দৃষ্টির মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে বনসম্পদ। এর ধ্বংস করার প্রবণতা বিপদ পঞ্চাশ বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমানে ক্রমে তা আরও বাড়ছে। বনভূমি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী তথা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর দেখা যায় না। গায়ক পাখিদের সমধুর কণ্ঠস্বর শোনা যায় না। সেই সুমধুর কণ্ঠস্বর এখন মোবাইলের রিংটোনে আবদ্ধ হয়ে আছে। কী ভাবে তা হলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের ফিরিয়ে আনা যায়, বনদফতরকে সে বিষয়ে ভাবতে হবে। উত্তরবঙ্গের বনভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। যেটা পূর্বেও ছিল এখনও সেই গাছপালাই রয়েছে। এখানে নতুন সংযোজন করা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি। কদম, দারুল, শিরীষ, শিশু, শাল, সেগুন, চিকরাশি, লসুনি ইত্যাদি গাছপালা মূল্যবান হলেও এই সব গাছের ফল পাখিরা খায় না। এর মধ্যে শাল ও ইউক্যালিপটাস গাছের ফল নেই। উত্তরবঙ্গের বনভূমিতে পাখিদের খাওয়ার কোনও ফলের গাছ নেই। যদিও থাকে সেটা খুবই নগণ্য। বনবিভাগ নতুন প্ল্যানটেশন করার সময় বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখিদের করা বিবেচনা করে শাল, সেগুন, শিশু ইত্যাদি পাশাপাশি প্রচুর ফলের গাছ যেমন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কলা, চালতা আতাফল বপন করতে হবে। আবার বিভিন্ন বুনো ফলের গাছ ও বপন করতে হবে। এমন সব বুনো ফল বপন করতে হবে, যাতে পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারে। ছোটখোট গাছের মধ্যে যেমন শিমলা আলু, গোইজ আলু, পেঁপে ইত্যাদিও লাগাতে হবে। ফ্রুট ফরেস্ট তৈরি করলে শুধু পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্ট হবে তা নয়, বন্যপ্রাণীদের বাঁশ ইত্যাদি হাতি-বাইসনের উৎকৃষ্ট খাবার। বনে উপযুক্ত খাবার থাকলে বন্যপ্রাণীরা বন থেকে বেরিয়ে মানুষের কোনও ক্ষতি করবে না। বনবিভাগের মহানির্দেশকরা বন্যপ্রাণীদের জন্যে সে রকম কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন না। যার জন্য বন্য প্রাণীরা আজ দিগভ্রান্ত। পরিশেষে বলব,উত্তরবঙ্গের বনভূমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলের গাছ লাগান। ফ্রুটফরেস্ট তৈরি করে বনভূমিকে সমৃদ্ধ করুক। বন্যপ্রাণী ও পাখিদের খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুক।

—অশোক সূত্রধর। ফালাকাটা

দুরবস্থায় বাগান

পুরনো ইতিহাস আলোচনা করলে শোনা যায়, সে সময়ে একের পর এক চা বাগান তৈরি হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। তার-এর উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাইরে থেকে বাঙালিরা চলে আসছে এ দিকে, এরাই হয়ে যাচ্ছে বাগান মালিক। ধীরে ধীরে এই চা শিল্প থেকেই এই অঞ্চলের আর্থিক অবস্থা ফুলে ফেঁপে উঠল। চা বাগানের কাঁচা পয়সা উড়তে থাকল, চা বাগানের চাকরি মানেই ধনী লোক সে সময়ে। বাগান থেকে কত সুবিধা দিত বাগানের চাকরিজীবীদের। কোয়াটার, কাজের লোক, রেশন, জল, জ্বালানি, এদিক কার চা পাতা চলে যেত বাইরে ভাল বলে। বাগানের অসুবিধা বলতে প্রতিদিন বাজার বসে না। কোনও বাগানে সপ্তাহে একদিন হাট বসে। আর ছিল না হাইস্কুল। মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা, আমাদের স্কুলে হোস্টেল ছিল, হোস্টেলে চা বাগানের মেয়েরা থেকে পড়াশুনা করত। বাবা-মা দেখা করতে আসত বাগানের গাড়ি নিয়ে। সে সময়ে বাগানের লোকজনের জীবনযাত্রা ছিল অন্যরকম, চা শিল্প থেকে যত উন্নতি তখন এই অ়ঞ্চলে। পুজোর সময়ে ভাল পরিমাণ টাকা বোনাস দিত শ্রমিক, কর্মচারীদের, সেই বোনাসের টাকায় বাগানের লোকজন গাড়ি নিয়ে সপরিবারে সব শহরে আসত পুজোর কেনাকাটা করতে, সারা বেলা কেনাকাটার মাঝে এরা হোটেল, মিষ্টির দোকানে খাওয়া সারত। এই আয়টার উপর সারা বছর ব্যবাসায়ীরা আশা করে থাকত। এ ছাড়া শহরের লোকজন চা বাগানের শেয়ার কিনত। বাগান থেকে বছরে একবার করে শেয়ার আংশিদারদের চা পাতা, মিষ্টির প্যাকেট-সহ ভাল গিফট দিত। এর পরে ডিভিডেন্ট পাঠাত চেকে। বাগানের সে সব দিন কী ভাবে হারিয়ে গেল তাই ভাবি। একের পর এক চা বাদান বন্ধ করে দিচ্ছে বাগানমালিক কোনও চিন্তা ভাবনা না করেই। শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনাগণ্ডা বাকি থাকছে। শ্রমিক কর্মচারীদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে থাকতে জীবন শেষ হয়ে মৃত্যুর মিছিল চলছে। বাগানের এই পরিস্থিতিতেও চলছে রাজনীতি। কেন্দ্র দিচ্ছে রাজ্যের দোষ, রাজ্য বলছে কেন্দ্র দায়ী। একে অপরকে দোষারোপ করে দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে চা বাগানগুলির দুরবস্থা দূর করে বাগানগুলি চালু করা দরকার শ্রমিক কর্মচারীদের কথা ভেবে। বন্ধ বাগানগুলির শ্রমিক কর্মচারীদের প্রতি মাসে মাসোহারা দেওয়া দরকার সরকারি তরফে।

—শিপ্রা শিকদার। জলপাইগুড়ি

নির্মূল হোক

ডাইনি হত্যা-ডাইনি নির্যাতন এ সব নানা প্রকার কুসংস্কার যে হারে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়—এর চেয়েও বহু গুণ বেশি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। কুসংস্কার মানে জ্ঞানান্ধতা আর এই আদিম ব্যাধিটি উন্নয়নশীল বিশাল গণতান্ত্রিক ভারতে সমাজের বুকে শক্ত শিকড় গেড়ে দিব্যি বসে আছে। যা বর্তমান উন্নত সভ্যতার যুগে অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিস্ময় যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, টিভি, সিরিয়ালে প্রায়ই দেখা যায় তন্ত্র,মন্ত্র, যাগযজ্ঞ, তুকতাক, তাবিজ, কবচ, জড়িবুটি, ইত্যাদি বুজরুকির অসীম ক্ষমতাবলে রোগমুক্তি, অন্যায় অবৈধ ইচ্ছা পূরণ এবং শত্রুকে সায় বা শায়েস্তা করা সম্ভব। এতে প্রথাগত শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুক্তিহীন বা বিজ্ঞান চেতনাহীন মানুষ প্রভাবিত হয়ে থাকে আর না বলাই ভাল যে অনেক নেতা মন্ত্রীরাও এ দলে আছেন। সে কারণে গ্রামেগঞ্জে এমনকী শহরেও গুনিন-ওঝাদের ব্যবসা রমরমা। লক্ষ্যণীয় যে অর্থ, স্বাস্থ্য, শিক্ষার অভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বা জনবসতিতে কুসংস্কার বিরাজমান। অতএব কালক্ষেপ না করে শুধু রাষ্ট্রের বা রাজ্যের বহির্দেশই নয়, সমাজের অন্তর্দেশকে স্বচ্ছ করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতি গ্রামপঞ্চায়েত ও পৌরসভার সক্রিয় সহযোগিতায় অনগ্রসরতার সার্বিক অবসান ঘটিয়ে সচেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে অভিশপ্ত কুসংস্কারের মূলোচ্ছেদ করা জরুরি।

—রামনাথ মজুমদার। কোচবিহার

শুধুই অবহেলার শিকার

অনেক আবেদন করেও জলপাইগুড়ি হলদিবাড়ির রেল ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। অথচ দুটো জায়গা থেকে রেল কর্তৃপক্ষ ভাল আয় পাচ্ছে। প্রতিদিন যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে অথচ সেই সাবেকি ট্রেনই চলছে জলপাইগুড়ি টাউন, হলদিবাড়ি স্টেশন থেকে। অতীতে এই দুটো স্টেশন দিয়েই কলকাতা যেতে হত। আজ সেই প্রাচীন স্টেশনগুলো অবহেলিত। এটা অন্যায়।

হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট ট্রেনটিতে প্রচুর যাত্রী হচ্ছে। ওয়েটিং টিকিটও চলছে এই ট্রেনে। সত্বর কলকাতা যেতে দাঁড়িয়ে, বসে হলেও এই ট্রেনটিতে যাওয়া যায়। চিকিৎসা, ব্যবসা, অফিসের কাজ, ছাত্রছাত্রীদের ভি়ড়। প্রচুর যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করে এই দুই শহর থেকে। ফলে টিকিট পাওয়া মুশকিল হয়ে পরে। ভাল আয় পেয়েও ভারতীয় রেল এই ট্রেনটিকে প্রতিদিন চালাচ্ছেন না কেন? এটা শহরবাসীদের প্রতি বঞ্চনা। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন ট্রেন চালু করছে।

তিস্তা-তোর্সা ছাড়া কলকাতা যাবার গাড়ি নেই। জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ি থেকে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ট্রেন হলদিবাড়ি সুপার। সেটা দিনের বেলা। কৃষিপ্রধান শহর হলদিবাড়ি। ট্রেন ব্যবস্থা উন্নত না হলে এই শহরের কৃষিতে উন্নতি হবে না। এই শহরবাসীদের দীর্ঘ দিনের দাবি পদাতিক ট্রেন। কিন্তু সেই ট্রেনটি চলছে না এই শহর থেকে। অন্যদিেক সুপার ফাস্ট ট্রেনকে প্রতিদিন চালানো যেতেই পারে। কিন্তু কেন রেল কর্তৃপক্ষ তা করছেন না সেটা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না। মাননীয় সাংসদ, মাননীয় বিধায়করাও এই ট্রেনটি প্রতিদিন চলানোর জন্য এমপি, এমএলএ নিকট আবেদন জানাচ্ছেন শহরবাসীরা যাতে তাঁরা মাননীয় রেলমন্ত্রী মহাশয়ের অনুমতি আদায় করতে পারেন। হলদিবাড়ি সুপার ট্রেনটিকে দমদম স্টেশনে স্টপেজ দিক তা হলে যাত্রীদের সুবিধা হয়। গাড়ি লেট করলে কলকাতা স্টেশন থেকে যানবাহন মেলে না। ফলে অসুস্থ, মহিলা যাত্রীদের অসুবিধা হয়। টিকিটের অভাবে যাত্রীদের বেশি টাকা দিয়ে যেতে হয় জরুরি কাজে কলকাতায়। যদি ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতিদিন চলে তবে সঠিক টাকা দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে হলদিবাড়ি। জলপাইগুড়িবাসীরা। বর্তমানে কলেজযাত্রী অনেকে টিকিটের অভাবে অনেক ছাত্রছাত্রীদের জেনারেল ভ্রমণ করতে হয়। ছাত্রীদের নিরাপত্তা থাকে না এই রূপ ভ্রমণে অথচ পড়াশুনার জন্য যেতেই হয়। দেশ, রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান জলপাইগুড়ি রেল উন্নয়ন নেই কেন? এবং দীর্ঘদিন থেকে কেনই বা শহর দুটোকে বঞ্চনা করে আসছে।

রাজনৈতিক নেতারা ভিআইপি কোঠায় টিকিট পায় তাই তাঁদের গরজ নেই। অথচ আমাদের ভোটেই রাজনীতি করে সুবিধাভোগী নেতারা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে হলদিবাড়ি সুপার ফাস্ট ট্রেনটি প্রতিদিন চলুক এবং ছাত্রছাত্রী মহিলা, অসুস্থ যাত্রীদের স্বার্থে দমদম জংশনে ট্রেনটি স্টেপজ থাকুক এটাই জলপাইগুড়ি হলদিবাড়িবাসীদের দাবি।

—নূপুর বন্দ্যোপাধ্যায়। জলপাইগুড়ি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

north bengal letter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE