Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Illegal Immigration

চোরাপথে আঁধার রাতের ‘আলো’ ওরা

কেউ নজরদারি চালায় বিএসএফের গতিবিধির উপরে। কেউ গতিবিধি দেখেই সাংকেতিক শব্দ প্রয়োগ করে সতর্ক করা হয় সঙ্গীকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অভিজিৎ সাহা 
মালদহ শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৭:১৯
Share: Save:

আঁধার রাতই যেন ওদের কাছে ‘আলো।’ ওরা, ‘লাইনম্যান।’ পাসপোর্ট ছাড়া বিনা অনুমতিতে এপার-ওপারের জন্য অনুপ্রবেশকারীদের ‘ভরসা’ এই লাইনম্যানেরাই। কালিয়াচকের মিলিক সুলতানপুরই হোক কিংবা শব্দলপুর, সুকদেবপুর, সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলিতে কানপাতলেই হদিশ মিলবে লাইনম্যানদের গতিবিধি।

ধৃত চিনা নাগরিক হান চুনওয়েইকেও সীমান্ত টপকাতে সাহায্য করেছে লাইনম্যানেরাই, দাবি পুলিশ ও এসটিএফের। শুক্রবার হানকে মালদহ থেকে কলকাতায় নিজের দফতরে নিয়ে গিয়েছে এসটিএফ। এসটিএফ জানিয়েছে, হানকে জেরা করে লাইনম্যানেরও নাম পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে অ্যাপেলের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড ‘ক্র্যাক’ করার চেষ্টা হচ্ছে। হান গ্রেফতারের পরেই সতর্ক লাইনম্যানেরা। কারণ, চিনা নাগরিক গ্রেফতারের পরে সীমান্তে নজরদারি আরও আঁটোসাঁটো হয়েছে। উন্মুক্ত সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। এমন কী, গ্রামীণ এলাকাতেও বিএসএফের পাশাপাশি খোঁজ খবর চালাচ্ছে পুলিশও।

জালনোট, মাদক, নেশার সিরাপ পাচারের করিডর মালদহের মিলিক সুলতানপুর, চরি অনন্তপুর, সুকদেবপুর, শব্দলপুর সীমান্ত। বিএসএফের নজর এড়িয়ে সীমান্ত টপকাতে অনুপ্রবেশকারীদের ভরসা কাঁটাতারহীন এলাকা। মিলিক সুলতানপুরের পাশাপাশি উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে সুকদেবপুর, শব্দলপুরেও। এ ছাড়া হবিবপুরের তিলাসন, বেলডাঙা, বাসুদেবপুর সীমান্তও রয়েছে উন্মুক্ত। উন্মুক্ত সীমান্তগুলিতে অবাধ বিচরন লাইনম্যানকে।

বিএসএফের নজরদারি রয়েছে, তারপরেও কী ভাবে সক্রিয় লাইনম্যানেরা?

সীমান্তে কান পাতলেই স্পষ্ট হবে ছবিটা। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, সীমান্তের ভৌগোলিক অবস্থানকেও কাজে লাগায় লাইনম্যানেরা। কারণ, উন্মুক্ত সীমান্তে রয়েছে চাষের জমি। এ ছাড়া বসতিও রয়েছে। অর্থের প্রলোভন দিয়ে স্থানীয়দের একাংশকে কাছে টেনে নেয় লাইনম্যানেরা। তিথি নক্ষত্র দেখে শুরু হয় ‘অপারেশন বর্ডার।’ গভীর রাতকে বেছে নেওয়া হয় অনুপ্রবেশের জন্য।

তাঁদেরও দাবি, লাইনম্যানদের গ্রুপে একাধিক সদস্য থাকে। কেউ নজরদারি চালায় বিএসএফের গতিবিধির উপরে। কেউ গতিবিধি দেখেই সাংকেতিক শব্দ প্রয়োগ করে সতর্ক করা হয় সঙ্গীকে। অপরারেশন হয় পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে। চোখের পলকেই সীমান্ত পেরিয়ে যায় লাইনম্যানেরা। এ পারের মতো ওপারেরও রয়েছে লাইনম্যান। পাড়াপারের জন্য মাথা পিছু নেওয়া হয় পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা। অনেকক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা গ্রেফতার হলেও রাতের অন্ধকারে মিশে যায় লাইনম্যানেরা। বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘‘সীমান্ত লাইনম্যানদের হাতের তালুর মতো চেনা রয়েছে। সেই সুবাদে অবাধে রাতের অন্ধকারে মিশে যেতে সক্ষম হন তাঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Immigration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE