জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে লিপিকা মোহান্ত। ফাইল চিত্র।
স্বামীর দেহ বাড়িতে থাকা অবস্থাতেই খুনের একাধিক প্রমাণ নষ্ট করেছেন লিপিকা ও তার প্রেমিক অনির্বাণ৷ জলপাইগুড়িতে এলআইসির ডেভেলপমেন্ট অফিসার উত্তম মোহান্ত খুনের ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। একইসঙ্গে পুলিশের দাবি, প্রথম দিকে সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিলেও গত দু’দিন ধরে জেরায় খুব বেশি সহযোগিতা করছেন না উত্তমবাবুর স্ত্রী লিপিকা৷
পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের জেরায় লিপিকা বারবার দাবি করেছেন, তিনি স্বামীকে মারতে চাননি৷ কিন্তু খুনের অনেক প্রমাণ নষ্ট করেছে লিপিকা ও অনির্বাণ৷
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, উত্তমবাবুর মৃত্যুর প্রায় দেড়-দু’ঘণ্টা পর তার দেহটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন লিপিকা ও অনির্বাণ৷ বিষক্রিয়া়য় মৃত্যুর আগে বমি করেছিলেন উত্তমবাবু৷ তা দেখে যাতে কারও মনে কোনও সন্দেহ না হয় সে জন্য উত্তমবাবুর মৃত্যুর পর গোটা ঘরের মেঝে ভাল করে জল দিয়ে মুছে দিয়েছিলেন তারা৷ সেই সময়ই বিষের পাত্রও সরিয়ে ফেলা হয়েছিল৷ তারপর দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু ময়নাতদন্ত করতে হবে জেনেই দেহটি ফের বাড়িতে ফেরায়।
পুলিশ জানিয়েছে, লিপিকা দাবি করছে অনির্বাণ তার স্বামীকে বিষ দিলেও, কী বিষ দিয়েছে তা তার জানা নেই৷ কিন্তু কেন তড়িঘড়ি ঘর মোছা হল সে ব্যাপারে সদুত্তর দেয়নি। পুলিশের দাবি, গত দু’দিন ধরে জেরায় অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছে লিপিকা৷ তাই তাদের ভরসা এখন ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট৷ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তাহলেই জানা যাবে ঠিক কী ধরণের বিষ উত্তমবাবুকে খাওয়ানো হয়েছিল৷’’
এদিকে, লিপিকার আইনজীবী সন্দীপ দত্ত এ দিন দাবি করেন, লিপিকা নির্দোষ৷ একটা অভিযোগের ভিত্তিতে সম্পুর্ণ সন্দেহের বসে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে৷ সে যে নির্দোষ, তদন্তেও সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে বলে সন্দীপবাবু দাবি করেন৷ পাশাপাশি তিনি এ দিন প্রশ্ন তোলেন, উত্তমবাবুর দেহ যখন দাহ করা হল তখন কেন তার মেয়েকে সেই খবর দেওয়া হল না৷ তাঁর কথায়, ‘‘নিজের বাবার অন্তেষ্টির সময় মেয়ের থাকার অধিকার রয়েছে৷ কিন্তু উত্তমবাবুর দাদারা তার থেকে তাকে বঞ্চিত করেছেন৷ জলপাইগুড়ি শ্মশানে ভাইয়ের সৎকার করলেও তাঁর মেয়েকে সেই খবর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি৷’’ বিষয়টি পুলিশকে লিখিতভাবে জানাবেন বলেও জানান সন্দীপবাবু৷ তবে উত্তমবাবুর দাদা স্বপন মোহান্ত বলেন, ‘‘ভাইয়ের সৎকারের সময় তার মেয়ে থাকুক আমরাও চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তাকে খুজে পাইনি৷ পুলিশেরও সাহায্য চাই৷ কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি৷’’
অনির্বাণের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখার সঙ্গে লিপিকা কত টাকা তাকে দিয়েছে তা জানতে উত্তমের পরিবারের অ্যাকাউন্টগুলিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy