Advertisement
২২ মে ২০২৪

দাগাপুর বাগানে লকআউট নোটিস

এনইউপিডব্লুউ-র আন্দোলনের জেরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে পুজোর মুখে তরাইয়ের দাগাপুর চা বাগান লকআউট ঘোষণা করে দিল বাগান কর্তৃপক্ষ। বুধবার সংগঠনের কয়েকশো শ্রমিক নানা অভিযোগে পাঁচ ঘন্টা ঘেরাওয়ের পর ম্যানেজারকে বাগান ছাড়া করেন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

এনইউপিডব্লুউ-র আন্দোলনের জেরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে পুজোর মুখে তরাইয়ের দাগাপুর চা বাগান লকআউট ঘোষণা করে দিল বাগান কর্তৃপক্ষ। বুধবার সংগঠনের কয়েকশো শ্রমিক নানা অভিযোগে পাঁচ ঘন্টা ঘেরাওয়ের পর ম্যানেজারকে বাগান ছাড়া করেন বলে অভিযোগ। বেশি রাতে ম্যানেজার বিক্রমদীপ সিংহ লকআউটের নোটিস পুলিশ, শ্রম দফতর-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওই নোটিস পাওয়ার পরেই শ্রম দফতরের তরফে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ শুরু করা হয়। আইন শৃঙ্খলার কথা বলে বাগানে অবশ্য কোনও লকআউট নোটিস রাত অবধি ঝোলানো হয়নি। কানাঘুষো শুনলেও নোটিস বাগানে না থাকায় বিকাল অবধি শ্রমিকেরা বাগানে কাজ করেছেন। ফ্যাক্টরিতেও কাজ হয়েছে।

শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ন শ্রম কমিশনার সমীর বসু বলেন, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষের লক আউটের চিঠি পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে সব পক্ষকে নিয়ে বসে একটা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’ বাগান মালিকদের সংগঠন টাই-এর তরাই শাখার সেক্রেটারি সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ বা সমস্যা থাকলে আলোচনা করা যেত। কিন্তু ম্যানেজারকে গালিগালাজ দিয়ে, হেনস্থা করে তাড়িয়ে দেওয়াটা কাম্য নয়। শ্রম দফতর নিশ্চয়ই বৈঠক ডাকবে।’’

প্রশাসন এবং শ্রম দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, লকআউট ঘোষণার জেরে পঞ্চাশের দশকে চালু হওয়া বাগানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৬০০ মতো শ্রমিক বিপাকে পড়ে গেলেন। বিশেষ করে পুজোর বাকি আর দুই মাস। কয়েক দিনের মধ্যে বোনাস চুক্তি হবে। তার আগে বাগান না খুললে শ্রমিক পরিবারগুলি চরম সমস্যায় পড়বেন। লকআউটের নোটিসে ম্যানেজার জানিয়ে দিয়েছেন, এ দিন থেকে কোনও শ্রমিক মজুরি, বেতন, রেশন-সহ আর কোনও সুযোগ সুবিধা পাবেন না। সেই সঙ্গে বাগানের সম্পত্তির কোনও ক্ষতি হলে, শ্রমিক-কর্মীরাই তার জন্য দায়ী থাকবেন।

গত ১৫ অগস্টের অনুষ্ঠানে বাগানের শিশুদের লাড্ডু, ঝুরিভাজার বদেল চকোলেট দেওয়াকে কেন্দ্র করেই গোলমালের সূত্রপাত। শ্রমিকদের অভিযোগ, ম্যানেজারের কাছে এটা কেন করা হল, তা জানতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়েন এনইউপিডব্লুউ-র এক নেতা। সেই সময়ই ম্যানেজার বাগান লকআউটের হুমকি দিয়েছিলেন। ওই নেতাকে শো-কজের চিঠি নেওয়ার নেওয়ার জন্য বুধবার ডাকা হলে, শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়। ম্যানেজারই নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। পুলিশের ভ্যানে বাগান ছাড়েন ম্যানেজার।

যদিও ম্যানেজারের দাবি, ঠিকঠাক কাজের সময়, হাজিরার কারচুপি, জমি বিক্রির চেষ্টা বন্ধ করায় তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। পিএফ, মজুরি, গ্র্যাচুইটি থেকে সমস্ত কিছু বাগানে ঠিকঠাক রয়েছে। যা হয়েছে তাতে বাগানের কর্মীদের পরিবারগুলি আতঙ্কিত। যে কোনও সময় যা কিছু হতে পারে। এই অবস্থায় বাগান স্বাভাবিক ভাবে চালানো সম্ভব নয়। তিন জন নেতার উস্কানিতেই ঘটনাটি ঘটেছে। পাঁচ ঘণ্টা ঘেরাও, গালিগালাজ, মারধরের চেষ্টার জেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলেও ম্যানেজার জানিয়েছেন।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সেই নেতা অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা কাউকে মারধর, ভয় দেখাননি। দ্রুত বাগান খোলার জন্য আমরা শ্রম দফতরে চিঠি দিচ্ছি।’’ আবার সিটুর চিয়া-কামান মজদুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেছেন, ‘‘পুজোর মুখে বাগান বন্ধ হলে শ্রমিকদেরই ক্ষতি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Estate Lock out
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE