Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এটিএম ফেল, ভিড় ব্যাঙ্কে

একে তো এটিএম-ই নেই অনেক জায়গায়। তার উপরে তার খোঁজে অনেক দূরে গিয়েও, দেখা গিয়েছে, এটিএম-এ হয় টাকা নেই অথবা সাটার বন্ধ। এটিএম বন্ধ দেখে ব্যাঙ্কে গিয়েও অনেক জায়গাতে হতাশ হতে হয়েছে।

সর্পিল লাইন রুখল যান চলাচল। ফালাকাটা স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে শুক্রবার গ্রাহকদের লাইনে বন্ধ হল রাস্তা। — রাজকুমার মোদক

সর্পিল লাইন রুখল যান চলাচল। ফালাকাটা স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে শুক্রবার গ্রাহকদের লাইনে বন্ধ হল রাস্তা। — রাজকুমার মোদক

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

একে তো এটিএম-ই নেই অনেক জায়গায়। তার উপরে তার খোঁজে অনেক দূরে গিয়েও, দেখা গিয়েছে, এটিএম-এ হয় টাকা নেই অথবা সাটার বন্ধ। এটিএম বন্ধ দেখে ব্যাঙ্কে গিয়েও অনেক জায়গাতে হতাশ হতে হয়েছে। অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখা থেকে জানানো হয়েছে, খুচরো যথেষ্ট নেই। তাই সামান্য টাকাই দেওয়া হয়েছে। দু’দিন কোনওমতে কাটানোর পরে যখন মানুষ হাঁফ ছাড়বেন বলে এটিএম-এর দোরে গিয়ে দাঁড়ান, তখন জানতেন না আরও হয়রানি অপেক্ষা করে রয়েছে। তারই খোঁজ একনজরে।

বিকেল গড়াল লাইনে

মালবাজার মহকুমাতে কোনও এটিএম থেকেই টাকা তোলা যাচ্ছে না। টাকা ভরা যায়নি বলেই এটিএমগুলি কাজ করছে না। ফলে ব্যাপক চাপ বেড়ে গেছে ব্যাঙ্কগুলিতে। সাধারণ গ্রাহক থেকে চা শ্রমিক লাইন দিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। মালবাজার ব্লকের ওদলাবাড়ির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আবার ৫০০ টাকার বেশি না দেওয়ায় চা শ্রমিকেরা ক্ষোভেও ফেটে পড়েন। মালবাজার প্রধান ডাকঘর থেকেও এদিন টাকা তুলতে পারেন নি গ্রাহকেরা। ডাকঘর খোলার আগে থেকেই লাইন দিয়ে বিকেল গড়িয়ে গেলেও টাকার দেখা পাননি গ্রাহকেরা। ডাকঘর কর্তৃপক্ষও অবশ্য ব্যাঙ্কের দিকেই অভিযোগ করেছেন। ব্যাঙ্ক দুপুরের পর ডাকঘরে টাকা পাঠানোয় গ্রাহকদের টাকা দেওয়া যায়নি বলে ডাকঘর কর্তারা জানান।

প্রধান ডাকঘরে সমস্যা

রাষ্ট্রায়ত্ত যে ব্যাঙ্কের উপর নির্ভর করে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে অন্য ব্যাঙ্কগুলি টাকার যোগান পায়, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে সেই ব্যাঙ্কের সমস্ত এটিএমই বন্ধ ছিল। হাতে গোনা দু-তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের এটিএম দুপুরের পর থেকে টাকার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এ দিকে বালুরঘাটের প্রধান ডাকঘরেও টাকা নেই। নতুন টাকা এদিনও জেলায় ঢোকেনি। বিকেল ৫টার মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির সামনে থেকে ভিড় পাতলা হয়ে যায়। বালুরঘাট ব্লকের কামারপাড়া এলাকায় বাসিন্দারা এদিন সকাল থেকে স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। ভোর রাত থেকে মানুষ ইট পেতে লাইন রেখে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে বাসিন্দাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে অবস্থা সামলায়। শহরের একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক শাখা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যা পরিস্থিতি শনিবার টাকা না ঢুকলে সমস্যা আরও বাড়বে।

মাঠে পড়ে ধান

ইসলামপুরের থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আগডিমঠি খুন্তি গ্রামপঞ্চায়েতের মাহাঙ্খার বাসিন্দা মহম্মদ আলম জানান, এটিএম ব্যবহার করেননি কোনও দিনই। তিনি বলেন, ‘‘ধান পেকেছে। মাঠ থেকে ধান কাটতে হলে তো শ্রমিকের প্রয়োজন। কিন্তু খুচরো না থাকায় হাজার বলেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’’ ইসলামপুরের এটিএম প্রায় সবই ছিল বন্ধ। তবে দুপুরে একটি মাত্র বেসরকারি ব্যাঙ্ক দুপুরে শিলিগুড়ি থেকে টাকা এনে সেই এটিএমটি চালু করা হলেও তাতেও লম্বা লাইন।

সারা শহরে একটি

শহরের প্রায় সব এটিএমই বন্ধ৷ তার মধ্যেই এ দিন জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের মুখে খানিকটা হাসি ফোটালো সমাজপাড়া মোড়ের কাছে থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার৷ দুপুরে আগেই সেটি খুলে দেওয়া হয়৷ সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর মানুষ সেখানে ভিড় জমান৷ চ্যাংরাবান্ধা থেকে জলপাইগুড়িতে কাজে এসেছিলেন ননীগোপাল রায়৷ তাঁর কথায়, সংসার প্রায় চলছিল না। তাই অনেক কষ্ট হলেও তিনি দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

লিঙ্ক ফেল

একেই তো নোট বাতিলের জ্বালায় তিতিবিরক্ত মানুষ, তারপর যদি ব্যাঙ্ক খোলার পর কর্তৃপক্ষ বলে লিঙ্ক নেই—তা হলে গ্রাহকদের অবস্থা কী হতে পারে? শুক্রবার তাই ঘটেছে ধূপগুড়িতে। গ্রাহকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ধূপগুড়ির মিল রোড একটি ও গয়েরকাটা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় দু’টি ব্যাঙ্কে এই নিয়ে বাক বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি যেন আয়ত্তের বাইরে না যায়, খবর পেয়ে ব্যাঙ্কগুলিতে ছুটে আসে পুলিশ। পরে জানা যায়, শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পানীয় জলের পাইপ লাইনের জন্য গর্ত খোঁড়াখুঁড়ি করার সময় টেলিফোনের তার কেটে গিয়ে এই বিপত্তি। খবর পেয়ে ছুটে আসেব টেলিফোনের আধিকারিক ও কর্মিরা। গর্ত খোঁড়ার কাজ বন্ধ করে তড়িঘড়ি তার মেরামতের কাজে হাত দেওয়া হয়। এক ঘণ্টার চেষ্টায় কাজ শেষ হলে স্বাভাবিক হয় ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা।

কয়েনে আপত্তি

ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে নোট ভাঙানো নিয়ে মানুষের হয়রানি অব্যাহত জলপাইগুড়িতে৷ এ দিনও বেশ খানিক্ষণ ডাকঘরে টাকা পরিবর্তন বন্ধ রাখতে হয়৷ গ্রাহকদের এ দিন সমস্যা ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ির মূল শাখাতেও৷ শহরের বাসিন্দা বাপ্পা সরকার বলেন, ‘‘আমি যে কাউন্টারে দাড়িয়েছিলাম সেখানে পুরানো নোটের বদলে দশ টাকার কয়েন দিচ্ছিল৷ কিন্তু এখন বাজারে অনেকেই দশ টাকার কয়েন নিতে চান না৷ কয়েনের বদলে নোট চাইলে কাউন্টারের কর্মী দিতে অস্বীকার করেন৷ তাই পুরানো নোট এ দিন বদলই করতে পারিনি৷’’

অতিরিক্ত কাউন্টার নেই

রায়গঞ্জে এ দিন সবগুলি এটিএম বন্ধ ছিল। প্রতিটি ব্যাঙ্কেও এ দিন সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন। কোনও ব্যাঙ্কেই অতিরিক্ত কাউন্টার খোলা হয়নি। রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ারানি সরকার বলেন, খুচরো শেষ। ব্যাঙ্কে দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর চেকের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। টাকা তোলার কাউন্টার আলাদা থাকলে এই হয়রানি হত না। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের দাবি, জায়গা, কাউন্টার ও কর্মীর অভাবে প্রতিটি কাউন্টারে টাকা বদল, জমা ও সরবরাহের কাজ চলছে।

টাকা শেষ ব্যাঙ্কেও

কোচবিহারের একাধিক ব্যাঙ্কে দুপুরের পর নগদ টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যান অনেকেই। জেলার অধিকাংশ এটিএমও বন্ধ ছিল। তারপরেও অবশ্য এটিএম কবে সচল হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে ব্যাঙ্ক কর্তারা কিছু জানাতে চাননি। স্টেট ব্যাঙ্কের কোচবিহার শাখার এক আধিকারিক বলেন, “এটিএম কবে খুলবে সে ব্যাপারে আমাদের কাছেও নিশ্চিত খবর নেই।” কোচবিহার প্রধান ডাকঘরেও টাকা বদল করতে সকাল থেকে উপচে পড়া ভিড় ছিল। বিকেল নাগাদ আচমকা সেখানে টাকা পরিবর্তন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATM Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE