রাসের আগে মদনমোহন মন্দির রং করা চলছে। — হিমাংশুরঞ্জন দেব
দু’সপ্তাহও বাকি নেই। আগামী ১৪ নভেম্বর কোচবিহারে শুরু হচ্ছে রাস। কিন্তু উৎসবের সূচনা ওই দিন হলেও এ বার মেলার দিন পিছোচ্ছে আরও এক সপ্তাহ। কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য ২৩ নভেম্বর থেকে এ বারের রাসমেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। মদনমোহন মন্দিরে তা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। চত্বর রঙ করা থেকে পুতুল ঘর সংস্কার, প্যান্ডেল তৈরির কাজ ইতি মধ্যে অনেকটা এগিয়েছে।
উৎসবের আয়োজক কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সন্ধে সাতটায় দিনভর উপোস থেকে রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করবেন বোর্ডের সভাপতি তথা কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন। জেলাশাসক বলেন, “ রীতি মেনে সমস্ত অনুষ্ঠান হবে। ইতিমধ্যে ওই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্বাচন দফতরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানও হয়েছে।”
দেবোত্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার রাস উৎসবের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ১১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। ওই হিসেবে উৎসবকালীন পুজোর খরচ, অস্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা, প্যান্ডেল তৈরি, মদনমোহন মন্দির রঙ করার পাশাপাশি কীর্তনের দল, যাত্রাদল এনে অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। দেবোত্তরের কয়েক জন কর্মী জানিয়েছেন, গত বছর রাস উৎসবের বাজেট ছিল ১২ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। মদনমোহন মন্দির সংস্কারের কিছু কাজ হয়েছিল। এ বার সংস্কার দরকার হচ্ছে না বলে বাজেটের অঙ্ক কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া মন্দির চত্বরের আলোকসজ্জা, আনন্দময়ী ধর্মশালা, মন্দির লাগোয়া বৈরাগী দিঘি সংস্কার ও সাজিয়ে তুলে পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে পৃথক পৃথক বরাদ্দ হয়। কিছু কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে।
বোর্ডের উদ্যোগে রাস উৎসব হলেও রাসমেলার আয়োজন অবশ্য করে কোচবিহার পুরসভা। মেলায় দু’হাজারের বেশি স্টল, সার্কাস, নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ থেকে রকমারি পণ্য ও খাবারের দোকান বসে। এ বার মেলার প্রাথমিক প্রস্তুতি বৈঠক হলেও উপনির্বাচনের জন্য শেষ পর্যন্ত মেলা পিছিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালের পর মেলার ইতিহাসে এই দ্বিতীয় বার নির্বাচনের কারণে এমন ঘটনা হল। কোচবিহারের বাসিন্দা গবেষক নৃপেন পাল জানিয়েছেন, ১৯৮৯ সালের ২৪ নভেম্বর নবম লোকসভা নির্বাচনের জন্য মেলা এক মাস পরে শুরু হয়। সে বার ১৩ নভেম্বর মদনমোহন মন্দিরে নিয়ম রক্ষার অনুষ্ঠান হয়। রাসচক্রটিকে ঘুরিয়ে পরে ঘিরে রাখা হয়েছিল। তিনি জবলেন, “১৯৮২ সালেও রাসমেলা পিছিয়েছিল। প্রথমে নিয়ম রক্ষার অনুষ্ঠান হয়ে সে বারও প্রায় একমাস পরে মেলা শুরু হয়।”
গবেষকদের মতে, ১৮১২ সালে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের আমলে ভেটাগুড়িতে রাসমেলার সূচনা হয়। ১৮৯০ সালে কোচবিহার শহরে মদনমোহন মন্দির চালু হয়। সে বছর থেকে ওই মন্দির লাগোয়া চত্বরে মেলার আয়োজন হয়। ১৯১৭ সালে মেলা প্যারেড গ্রাউন্ডে (রাসমেলা ময়দান) স্থানান্তরিত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy