তোড়জোড়: পুরাতন মালদহের কৃষক বাজারে ধান কেনা চলছে। নিজস্ব চিত্র
ধান বিক্রি করতে যাঁদের নাম নথিভুক্ত হচ্ছে, তাঁরা আদৌ কৃষক কি না, সেটা খতিয়ে দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ। এই ফাঁক গলেই ফড়েদের রমরমা মালদহে।
যেমন শুক্রবারের দুপুরের কথাই ধরা যাক। পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর কৃষক বাজারের চলছে ধান কেনা। আর অফিস ঘরে চলছে কৃষকদের নাম নথিভুক্তকরণ। ঠিক সেই সময় তিনটি রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে হাজির পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির এক ব্যক্তি। তা দেখিয়ে মোট ৯০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে চান। কাউন্টার থেকে জানতে চাইল, তিনটি রেজিস্ট্রেশন কাগজ কি আপনার? তিনি বলেন, “আমার, বাবা এবং দাদার।” আপনাদের জমি কত? বাবার নামে ছ’বিঘা, দাবি করেন তিনি। মাত্র ছ’বিঘায় তিন জনের নামে রেজিস্ট্রেশন? তিনি বলেন, “এখনও আমাদের বণ্টন নামা হয়নি।” ছ’বিঘায় ধান কত হয়? প্রশ্ন শুনে এ বার মোটরবাইক ঘুরিয়ে কৃষক বাজার থেকে বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তি।
কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এক বিঘা জমিতে গড়ে ধান উৎপাদন হয় ছ’কুইন্টাল। অর্থাৎ ছ’বিঘায় হবে ৩৬ কুইন্টাল। তা হলে ৯০ কুইন্টাল কী ভাবে সম্ভব?
সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রির জন্য চাষিদের প্রথমে নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। তখন চাই সচিত্র পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, দু’কপি ছবি এবং মোবাইল ফোন নম্বর। ধান বিক্রির ক্ষেত্রে জমির কাগজ খতিয়ে দেখা হয় না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সক্রিয় ফড়েরাজ।
অভিযোগ, ফড়েরা গ্রামের বেকার যুবকদের কাজে লাগিয়ে সরকারের খাতায় দেদার নাম নথিভুক্ত করাচ্ছে। খাদ্য সরবরাহ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতি কুইন্টাল ধানের সহায়ক মূল্য ১৭৭০ টাকা। ফড়েরা চাষিদের বাড়ি থেকে কুইন্টাল প্রতি ১৪০০-১৪৫০ টাকা দিয়ে ধান কিনে নিচ্ছে। তার পরে গ্রামের কিছু মানুষের নামে নাম নথিভুক্ত করাচ্ছে।’’
খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৮টি ধান ক্রয় কেন্দ্র। স্বনির্ভর গোষ্ঠীও রয়েছে ২১টি। মোট দু’লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়েছে ধান কেনা। ইতিমধ্যে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে আসল চাষি এই ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পুরাতন মালদহের চাষি আইনুল হক, মাঞ্জারুল ইসলাম বলেন, ‘‘কুইন্টাল প্রতি ৫ কেজি করে ‘ধলতা’ নিচ্ছে। ১০ কুইন্টাল ধানে ধলতা দিতে হচ্ছে ৫০ কেজি।’’ মিল মালিকদের দাবি, এক কুইন্টাল ধানে ৬৫ কেজি চাল হয়। অনেক সময় চালের মানও খারাপ হয়। তাই ধলতা নেওয়া হয়। জেলার খাদ্য সরবরাহ দফতরের আধিকারিক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রতিটি ধান ক্রয় কেন্দ্রে নিয়মিত পরিদর্শন হচ্ছে। ধলতার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy