Advertisement
০৩ মে ২০২৪
জেলবন্দি প্রার্থীর হয়ে প্রচার দলের

পুলিশবাহিনী নিয়ে মালদহে প্রচারে মন্ত্রী

পুলিশের লাঠির আঘাতে অসুস্থ হয়ে এক প্রার্থী রয়েছেন হাসপাতালে। আরেক প্রার্থী রয়েছেন জেল হেফাজতে। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রচার করছেন ইংরেজবাজার পুরসভার ২৪ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কর্মী সমর্থকেরা। প্রার্থীরা গ্রেফতার হলেও জন সংযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

পুলিশ নিয়ে প্রচারে মন্ত্রী।

পুলিশ নিয়ে প্রচারে মন্ত্রী।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩১
Share: Save:

পুলিশের লাঠির আঘাতে অসুস্থ হয়ে এক প্রার্থী রয়েছেন হাসপাতালে। আরেক প্রার্থী রয়েছেন জেল হেফাজতে। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রচার করছেন ইংরেজবাজার পুরসভার ২৪ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কর্মী সমর্থকেরা। প্রার্থীরা গ্রেফতার হলেও জন সংযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

তৃণমূলও ছেড়ে কথা বলছে না। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে দলের প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার সারলেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী তথা পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি পুরো ২৪ নম্বর ওয়ার্ড মিছিল করে প্ররিক্রমা করেন। আর মিছিলের পিছনে দেখা যায় বিশাল পুলিশ বাহিনীকে।

তৃণমূলের মিছিলের পিছনে পুলিশ থাকায় কটাক্ষ করেছে বিরোধী দলগুলি।এই বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘পুলিশ যে তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে, তা এ দিন ফের স্পষ্ট হয়েছে। আর আমাদের প্রার্থীদের মারধর দিয়ে গ্রেফতার করে দমানো যাবে না। মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে। তারা আমাদের সমর্থন করছেন।’’ প্রার্থীদের মারধর ও গ্রেফতারে ঘটনার নিন্দা করেছে কংগ্রেস ও বিজেপিও।

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘তৃণমূলের হয়ে পুলিশ শহরে সন্ত্রাস করছে। এই ভাবে প্রার্থীদের মারধর দিয়ে গ্রেফতার করা কখনও সমর্থনযোগ্য নয়।’’ ইংরেজবাজারে গণতন্ত্রকে হনন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মানবেন্দ্র চক্রবতী। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ভোটাভুটি ছাড়া জেতার চেষ্টা করছে।’’

যদিও বিরোধীদেরকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন মন্ত্রী তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুষ্কৃতী রাজ চালাচ্ছে সিপিএম। এদিন আমরা মিছিল করেছি। মানুষের সমর্থন পেয়েছি। আশা করি বাংলার মতো এই ওয়ার্ড থেকেও আমরা সিপিএমকে উৎখাত করতে পারব।’’ মিছিলে পুলিশ থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের কাজ করছে।’’ এই বিষয়ে পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছিল।’’

ইংরেজবাজার ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড সিপিএমের বরাবরই শক্ত ঘাঁটি। এবার ওয়ার্ড বিন্যাসের জন্য ২৩ নম্বর ভেঙে ২৭ হয় ও ২৪ ভেঙে ২৮ নম্বর হয়েছে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী হলেন সুতপা দাস। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এলাকার কাউন্সিলর। ২০০৫ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে তিনি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। অপর দিকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের প্রার্থী শুভদীপ স্যানাল। তিনি ২০১০ সাল থেকে কাউন্সিলর।

এই ওয়ার্ড দু’টিতেই আলাদা পরিচিতি রয়েছে এই দুই নেতা নেত্রীর। এখন সুতপাদেবী পুলিশের লাঠির আঘাতে অসুস্থ হয়ে ভর্তি রয়েছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা। আরেক নেতা তথা প্রার্থী শুভদীপ স্যানাল রয়েছেন জেল হেফাজতে। তাঁর ১০ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে। নির্বাচনের দোরগোড়ায় যাতে প্রচারে ঘাটতি না পড়ে, সে জন্য সুতপাদেবীর হয়ে প্রচার করছেন তাঁর স্বামী লক্ষ্মণ ঘোষ। আর শুভদীপবাবুর হয়ে প্রচারে নেমেছেন মায়া সান্যাল। তাঁরা প্রচারে গিয়ে মানুষের কাছে পুলিশি অত্যাচারে কথা তুলে ধরছেন। লক্ষ্মণবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের কর্মী সমর্থকদের উপর লাঠি চালানোয় মানুষ নিজে থেকে এগিয়ে আসছেন। প্রার্থী না থাকা সত্ত্বেও কর্মীরা নিজেরাই প্রচার করছেন। ফলে তৃণমূলের যে স্বপ্ন, তা এবারও পুরণ হবে না।’’ মায়াদেবী বলেন, ‘‘পুলিশের এমন নির্মম লাঠি চালানো আমরা কোনও দিন এই জেলায় দেখিনি। শুধু আমার ছেলেকে নয়, যে ভাবে সাধারণ মানুষকে মেরেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক। এলাকার মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন।’’

প্রসঙ্গত, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়াবুড়ি তলায় নির্বাচনী কার্যালয় খোলাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপরে তৃণমূল থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকায় যায়। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন নেতা কর্মীরা। তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে ওই দিন রাতে ফের থানা ঘেরাও করে সিপিএম। ফের উত্তেজনা ছড়ায়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের দুই প্রার্থী তথা বিদায়ী কাউন্সিলার সহ তিন জনকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE