অবশেষে পরশু থেকে কলকাতাগামী ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নতুন কোচ চালু হতে চললেও তাতে যাত্রীদের বিপুল চাপের সমস্যা মিটবে না বলে অসন্তোষ বজায় রইল রেলযাত্রী, নাগরিক সমিতি ও ব্যবসায়ী সংঠনগুলির।
রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে কলকাতাগামী একমাত্র ট্রেন রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে একটি নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রের খবর, কাল, সোমবার কলকাতা থেকে আপ রাধিকাপুরগামী ওই ট্রেনে অতিরিক্ত কোচের পরিষেবা পাবেন যাত্রীরা। পরশু, মঙ্গলবার রাধিকাপুর থেকে অতিরিক্ত কোচ-সহ ডাউন রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কলকাতার উদ্দেশে রওনা হবে। একই ভাবে ওই দিনই কলকাতা থেকে আপ রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেনেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আরেকটি অতিরিক্ত কোচ জুড়ে দেওয়া হবে।
রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে কলকাতাগামী আর কোনও ট্রেন না থাকায় রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের উপর যাত্রীদের চাপ বরাবরই বেশি। ট্রেনে ছ’টি স্লিপার, দু’টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও পাঁচটি সাধারণ কোচ মিলিয়ে ১৪টি কামরা রয়েছে। একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচকে ভেঙে এসি-টু ও এসি-থ্রি কামরা করা হয়েছে। এসি-টু কামরায় ২৪ জন ও এসি-থ্রি কামরায় ৩২ জন যাত্রী আসন সংরক্ষণ করার সুযোগ পান। যাত্রীদের অভিযোগ, অন্তত তিন সপ্তাহ আগে সংরক্ষণ না করলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে আসন পাওয়া যায় না। একই ভাবে স্লিপার কোচে আসন নিশ্চিত করতে হলে দু’সপ্তাহ আগে আসন সংরক্ষণ করতে হয়।
এই দুর্ভোগ রুখতে গত প্রায় তিন বছর ধরে রায়গঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, রাজনৈতিক দল-সহ রেলযাত্রী ও নাগরিক সমিতির তরফে কখনও রাস্তায় নেমে আন্দোলন আবার কখনও রেলের কর্তাদের চিঠি দিয়ে ওই ট্রেনে শীতাতপ ও স্লিপার মিলিয়ে অন্তত ছ’টি কোচ বাড়ানোর দাবি জানানো হচ্ছিল। তার পরেও রেল কর্তৃপক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কোচ বাড়ানোয় সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের সবারই দাবি, একটি কোচ বাড়িয়ে যাত্রীদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে চেপে অনেকেরই কলকাতায় যাতায়াতের আর্থিক ক্ষমতা নেই।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রেল সূত্রের খবর, রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অতিরিক্ত যে নতুন কোচটি জুড়ে দেওয়া হবে, সেটি পুরোটাই এসি-থ্রি টায়ার। মোট ৬৪ জন যাত্রী ওই কামরায় কলকাতা যাতায়াত করতে পারবেন। তাই আগের যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচটি ভেঙে এসি-টু ও এসি থ্রি কামরা করা রয়েছে, সেটি অপরিবর্তিতই থাকবে বলে রেল সূত্রের খবর।
প্রতিদিন সন্ধে পৌনে ছ’টা নাগাদ রাধিকাপুর স্টেশন এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জে স্টপ দিয়ে পর দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ কলকাতার চিত্পুর স্টেশনে পৌঁছয়। আবার প্রতিদিন সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ ট্রেনটি চিত্পুর স্টেশন থেকে ছেড়ে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ হয়ে পর দিন ভোর ৬টা নাগাদ রাধিকাপুর স্টেশনে পৌঁছয়। এর জন্য যাত্রীদের এসি-থ্রি টায়ারে ১ হাজার, এসি-টু টায়ারে ৭০৫ ও স্লিপার কোচে ২৬০ টাকা করে ভাড়া গুনতে হয়।
রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও রায়গঞ্জ নাগরিক সমিতি তথা রেলযাত্রী সমিতির সম্পাদক তপনকুমার চৌধুরী পৃথক ভাবে দাবি করেন, রায়গঞ্জ মহকুমার ব্যবসায়ী, পড়ুয়া, রোগী-সহ বহু সাধারণ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিদিনই ব্যবসা, বিভিন্ন পরীক্ষা, চিকিত্সা সহ নানা কাজে কলকাতায় যেতে হয়। তাঁদের কথায়, ‘‘একটি কোচ বাড়িয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ রোখা সম্ভব হবে না রেল কর্তৃপক্ষের। তা ছাড়া অনেকেরই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে চেপে কলকাতায় যাতায়াত করার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই। তাই ব্যবসায়ী, রেলযাত্রী ও বাসিন্দাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালেরও দাবি, যাত্রীদের দুর্ভোগ রুখতে আমরা দলের তরফে দীর্ঘ দিন ধরে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছিলাম। ভবিষ্যতেও এ ব্যাপারে আন্দোলন করা হবে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘‘সাধারণ মধ্যবিত্ত যাত্রীরা যাতে সহজেই রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে আসন সংরক্ষণের সুবিধা পান, তার জন্য দলের তরফে খুব শীঘ্রই ওই ট্রেনে কয়েকটি স্লিপার কোচ বাড়ানোর দাবিতে ফের আন্দোলনে নামার ব্যাপারে দলে আলোচনা শুরু হয়েছে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামও দলের তরফে দু’একদিনের মধ্যে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পর্যাপ্ত কোচ বাড়ানোর অনুরোধ করবেন বলে জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy