আড্ডাবাগীশ
চায়ের আড্ডায় এক ষাট-পেরোন ভদ্রলোক একদিন বলেন, ‘‘কোথায় একটা সেগুন কাঠের শক্তপোক্ত ডবল খাট পাই বলতে পারেন?’’ তাই নিয়ে হাসি-ঠাট্টার যে ঝড় উঠেছিল, তা বয়ে যেতে না দিয়ে আড্ডাবাগীশরা ছাপিয়ে দিয়েছেন ছোট্ট এক পুস্তিকাতে। ‘আড্ডা উপাখ্যান’। আড্ডাটি বসে জলপাইগুড়ি শহরের বাবুপাড়ার একটি নার্সিংহোমের পাশের চায়ের দোকানকে ঘিরে। নার্সিংহোমের উল্টো দিকে সুভাষ ভবনেও তেমন একটি আড্ডার আসর চলে। বিভিন্ন বয়স, পেশার ভিড় দেখা যায় সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত। আড্ডার আসর থেকে প্রকাশিত পুস্তিকাটি ২৬ পৃষ্ঠার, কার্টুন দিয়ে ঝকঝকে মলাটে ছাপা। আড্ডার সব সদস্যদের পরিচয়ও জানিয়েও ছড়া রয়েছে ম্যাগাজিনে। তিন কাপকে পাঁচ কাপ করে চা চাওয়া, দোকানে কার কত বাকি, তা-ও বাদ পড়েনি ম্যাগাজিন থেকে। ‘‘নিমেষে গেলাস হাতে ললিত হাজির, এসে বলে আগে ছিল পাঁচটা বাকি। বলে ফেলি সত্যিই ধড়িবাজ ললিত, ভাল করে শেখেনি সে হিসেবের গণিত।’’ আড্ডার মুখের কথা ছেপে বইয়ে বের হওয়ায় এখন সকলেই উৎসাহিত। পুস্তিকাটির ভূমিকা লিখেছেন পুরসভার কর্মী সুব্রত বাগচী। তিনি জানান, উৎসাহ পেয়ে পরের সংখ্যারও ভাবনা চলছে।
জনান্তিকে
জেলার নাট্যচর্চার দিশা দিতে কোচবিহার থেকে প্রকাশিত হল ছোট পত্রিকা ‘রাজনগর।’ ‘জনান্তিক’ নাট্যগোষ্ঠীর উদ্যোগে প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদনা করেছেন দেবজ্যোতি রায়। তিনি বলেন, ১৮ বছর ধরে কোচবিহারে নাট্যচর্চা করছে জনান্তিক। এই সময়কালের কথা, কোচবিহারের নাট্যচর্চা তুলে ধরা হয়েছে সংখ্যায়। প্রথমেই সত্যজিৎ রায়ের একটি চিঠি ছাপা হয়েছে। ওই চিঠি জনান্তিকের কল্যাণময় দাসকে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর ‘প্রফেসর রন্ডির টাইম মেশিন’ নামের শঙ্কু সিরিজের একটি কল্প কাহিনীর নাট্যরূপ দিয়েছিলেন কল্যাণবাবু। এ ছাড়াও কেতকী দত্ত, হরিমাধব রায়ের চিঠিও রয়েছে সংখ্যায়। বিভাস চক্রবর্তী, অমিতেশ গ্রোভারের লেখার পাশাপাশি চন্দন সেন, কিশোরনাথ চক্রবর্তীর লেখা, কল্যাণময় দাস, দেবজ্যোতি রায়ের নাটক রয়েছে। বছরে একটি করে সংখ্যা প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। কল্যাণময়বাবু বলেন, “কোচবিহারে নাট্যচর্চার ইতিহাস, দেশে-বিদেশে নাট্যচর্চার হদিশও দিতে চাই পাঠকদের।”
সবুজ পালক
শিলিগুড়ির মুকুটে আরও একটি সবুজ পালক জুড়তে চলেছেন শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একদল বাসিন্দা। তাঁরা জঞ্জালের স্তূপ সরিয়ে সবুজে মোড়া এক পার্ক তৈরির স্বপ্নে জোট বেঁধেছেন। জায়গাটা পাকুড়তলা মোড়ের কাছে। অগ্রগামী ক্লাবের ঠিক পেছনে নজরুল সরণি বাই লেনে। সেখানে শিশু বিদ্যাপীঠ ও পার্ক তৈরির জন্য একটা জায়গা দিয়েছে স্কুলের কমিটি। দীর্ঘদিন ধরে একচিলতে জায়গাটি অযত্নে পড়ে থাকায় আবর্জনার স্তূপ জমে গিয়েছিল। পাশে আগাছার জঙ্গলে মাদকাসক্তদের আনাগোনায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই খবর পৌঁছতেই রাতারাতি বাসিন্দাদের নিয়ে ‘টিম’ গড়ে জায়গাটা সাফসুতরো করে ফেলেছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর নান্টু পাল। তিনি ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে ৫০০টি গাছের চারা কিনে রোপণ করিয়েছেন। পার্কে ছোটদের খেলাধুলোর সরঞ্জাম, বসার জায়গা, বয়স্কদের জন্য ছায়াঘেরা বিশ্রামের ব্যবস্থার পরিকল্পনাও নিয়েছেন বাসিন্দারা। সুলভ শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থাও হবে। একটা সময়ে মাত্র আটটি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হওয়া শিলিগুড়ি এখন কর্পোরেশনে উন্নীত। ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৭টি। সেই তুলনায় পার্কের সংখ্যা এখনও হাতে গোনা। বাসিন্দাদের সবুজায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
বক্সিবাবু
কোচবিহারের মদনমোহন দেবের রথের দড়িতে প্রথম টান দেন যিনি, তিনি অমিয় দেববক্সি। সুদর্শন চেহারা। বয়স ৮৪ চলছে। বংশ পরম্পরায় মহারাজা নরনায়ারণের আমল থেকে কোচবিহারের বাসিন্দা দেববক্সি পরিবারের প্রবীণতম সদস্য অমিয়বাবু। ঠাকুর্দা, বাবা, কাকাও ‘দুয়ারবক্সি’ পদে কাজ করেছিলেন। ১৯৫৯ সালের ১ নভেম্বর ওই পদে যোগ দেন অমিয়বাবু। তারপর থেকেই টানা ওই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ‘দুয়ারবক্সি’ পদ কোচবিহার রাজ আমলে ওই পদ চালু হয়। রাজপ্রতিনিধি হিসাবে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করাই দুয়ারবক্সির কাজ। কুলদেবতা মদনমোহনের রথযাত্রা, বড়দেবীর পুজোয় হনুমান দণ্ড নিয়ে শোভাযাত্রা, সাগরদিঘিতে মদনমোহনের নৌকাবিহার, সবেতেই তিনি অগ্রণী। ফি বছর দোল সওয়ারি উৎসবে রাজ প্রতিনিধি সমস্ত বিগ্রহের পায়ে প্রথম আবিরও তিনিই দেন। কোচবিহারের রাজকন্যা তথা জয়পুরের মহারানি গায়ত্রীদেবী জীবদ্দশায় ফি বছর কোচবিহারে আসতেন। মদনমোহন বাড়িতে যেতেন। সে সময় গায়ত্রীদেবীর সঙ্গেও কথা হত অমিয়বাবুর। মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণকেও কাছ থেকে দেখেছেন। কোচবিহারের রাজ আমলের নানা ঘটনা জানতে তাঁর কাছে উৎসাহীরা যান। হাসিমুখে নিজের জানা তথ্য উজাড় করে দেন তিনি। কোচবিহার শহর তো বটেই জেলাজুড়েও তাই তাঁর স্বতন্ত্র পরিচিতি- ‘বক্সিবাবু’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy