Advertisement
E-Paper

মাছের বদলে ফুলকপি কষা

রবিবার মানেই স্কুল শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা দত্তের বাজারের ব্যাগে ইলিশ অথবা চিংড়ি। বাজার ঘুরে হাতে বেছে মাছ কেনেন, নিজেই রাঁধেন। এ দিন তিনি মাছ বাজারের ধারই মাড়ালেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৪
ক্রেতা নেই, চিন্তায় বিক্রেতা। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

ক্রেতা নেই, চিন্তায় বিক্রেতা। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

রবিবার মানেই স্কুল শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা দত্তের বাজারের ব্যাগে ইলিশ অথবা চিংড়ি। বাজার ঘুরে হাতে বেছে মাছ কেনেন, নিজেই রাঁধেন। এ দিন তিনি মাছ বাজারের ধারই মাড়ালেন না। সব্জি বাজার ঘুরেই রবিবার সকালে বিধান মার্কেট থেকে ফিরলেন তিনি, বাজারের ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে ফুলকপি। মুখে কিছুটা উদ্বেগ নিয়েই বললেন, ‘‘আজ আর মাছ নয়। ফুলকপিই কষা করে রাঁধব।’’ শর্মিষ্ঠা দেবীর মতো অনেকেই শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট, হায়দারপাড়া, সুভাষপল্লি বাজারে এমন অনেকেরই দেখা গেল যাঁরা রবিবারের মাছ-মাংসের স্বাদ শাক-সব্জিতে মিটিয়ে নিতে চাইলেন। পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের ধাক্কা এ ভাবেই লেগেছে রবিবারের হেঁসেলে।

অনেকে আবার বাজারমুখোই হননি এ দিন। বিধান মার্কেট এবং হায়দারপাড়া দুই বাজারই অন্য দিনের তুলনায় এ দিন ভিড় কম ছিল। বাজারের বিক্রেতারা এতদিন ৫০০ অথবা হাজার টাকার নোট নিচ্ছিলেন। এ দিন রবিবার থেকে সে প্রবণতাও কমেছে। হায়দারপাড়া বাজারের সব্জি বিক্রেতা আলো দাস বলেন, ‘‘এই ক’দিন যে ভাবেই হোক নোট নিয়েছি। কিন্তু কতদিন এমন ভাবে চলবে। নোট বদলের লাইনে দাঁড়ালে ব্যবসা মাথায় উঠবে। তা ছাড়া আমাদেরও তো খরচ চালাতে হবে। ব্যবসা হোক বা না হোক, বড় নোট নেব না।’’ শহরের বাসিন্দা সুরেন্দ্র গুপ্ত জানান, চার দিন ধরে টাকার জন্য বাজার করতে পারিনি। কাল রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ দুই হাজার টাকা এটিএম থেকে তুলেছেন। এদিন বাজার করতে এসে বলেন, ‘‘চারদিন পর বাজার করছি। তবে যে টাকা তুলেছি তা বাজার করে সব শেষ করলে হবে না। সমস্যা হলে ওই টাকা দিয়ে সামলাতে হবে। তাই অল্প করেই বাজার করছি।’’

বাতিল হওয়া নোট এ দিন ঘুরিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন পাইকারি বাজারের বিক্রেতারাও। গত কয়েকদিন ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন এবং দুর্ভোগ দেখে বাতিল হওয়া নোট নেওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না বলে পাইকারি বিক্রেতারা দাবি করেছেন। সে কারণে খুচরো বাজারে সব্জি-মাছের জোগানেও টান পড়েছে। তবে ক্রেতা কম থাকায় দাম খুব একটা বাড়েনি। বিধান মার্কেটের সব্জি বিক্রেতা ক্ষিতীষ সাহা বলেন বলেন, ‘‘অনান্য রবিবারে দুপুর পর্যন্ত পা রাখার জায়গা পাওয়াই মুশকিল হয়ে যায়। এ দিন তো বাজারের ভিতর দিয়ে অনায়াসে বাইক রিক্সাও চলেছে।’’

রবিবারের বাজারের ভিড়ে বিধানমার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লির বাজার লাগোয়া বিধান রোড, সেবক রোড সুভাষপল্লি বাজারের সামনে যানজট, ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। এ দিন যানজট ছিল না, তুলনামূলক ফাঁকা বাজারে ধাক্কাধাক্কি-তর্কাতর্কির রোজকারের দৃশ্যও এ দিন দেখা যায়নি।

শিলিগুড়ির বিধানমার্কেট, সুভাষপল্লি বাজার, হায়দরপাড়া বাজার সর্বত্রই এদিন কেনাবেচা অনেক কমেছে। বাজারের কেনাবেচা অন্য রবিবারের চেয়ে প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। শিলিগুড়ির বিধানমার্কেটের সব্জি বিক্রেতা অসীম দাস, প্রদীপ পাল, জীবন সাহারা জানান বিক্রি এ দিন তলানিতে ঠেকেছে। প্রদীপবাবু জানান, বেলা সাড়ে ১২ টাতেও পেপে, বাঁধা কপি, ক্যাপসিকাম একটাও বিক্রি হয়নি। অন্যান্য রবিবারs আড়াই তিন হাজার টাকার সব্জি বিক্রি হয়। এ দিন ১২০০ টাকারও বিক্রি হয়নি। জীবনবাবুর বড় দোকান। তিনি বলেন, ‘‘আগের রবিবার ছয়, সাত হাজার টাকার বিক্রি হয়। এ দিন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। পাঁচশো, হাজার টাকার নোট আমরা নিচ্ছি না।

সব্জি বিক্রেতারা না নিলেও মাছ, মাংসের দোকানদারদের অনেক ক্রেতাদের অনুরোধে ওই টাকা নিয়েছেন। মাছ, মাংস বিক্রি না হলে নষ্ট হয়ে যাবে সেই আশঙ্কা থেকেও পাঁচশো টাকা নিয়েও ক্রেতাদের জিনিস দিয়েছেনি় মাছ ব্যবসায়ীরা।

Fish market Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy