Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অঙ্গদানের অঙ্গীকার রক্ষা হল না, উদ্বেগ

স্রেফ পরিকাঠামোর অভাবে অঙ্গদানের অঙ্গীকার রক্ষা হল না এক মহিলার। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবার মনোভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গণদর্পণের সাধারণ সম্পাদক ব্রজ রায় বলেন, ‘‘প্রশাসন কি সত্যিই চেয়েছিল ওই মহিলার ইচ্ছে পূরণ হোক?’’

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩০
Share: Save:

স্রেফ পরিকাঠামোর অভাবে অঙ্গদানের অঙ্গীকার রক্ষা হল না এক মহিলার। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবার মনোভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গণদর্পণের সাধারণ সম্পাদক ব্রজ রায় বলেন, ‘‘প্রশাসন কি সত্যিই চেয়েছিল ওই মহিলার ইচ্ছে পূরণ হোক?’’

তাঁর এই প্রশ্নের কারণ, কৃষ্ণা মজুমদার নামে ওই মহিলার অঙ্গদানের কোনও ব্যবস্থাই নেই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে। যে কারণে বৃহস্পতিবার কৃষ্ণাদেবীর মৃত্যুর পরে তাঁর চোখের কর্নিয়া ছাড়া কিছুই সংরক্ষণ করা যায়নি। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে সেই ব্যবস্থা ছিল। ব্রজবাবুর বক্তব্য, ‘‘কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত দেহদান সম্ভব। সেই সময়ের মধ্যে কি কৃষ্ণাদেবীর দেহ রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেত না?’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুধু রায়গঞ্জ বলেই নয়, উত্তরবঙ্গের জেলা হাসপাতালগুলির হাল এমনই। উত্তরবঙ্গ এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজে দেহদান সম্ভব হলেও, চোখের কর্নিয়া নিয়ে প্রতিস্থাপনের সুযোগ নেই। কবে সেই পরিকাঠামো গড়ে উঠবে তারও স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। দেহ সংরক্ষণের পরিকাঠামোই নেই, চোখ সহ অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ যে আরও দূরের পথ, তা মানছেন স্বাস্থ্য কর্তারাও।

রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকার সব জেলাতেই একটি করে মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তুলতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে সর্বত্রই সেই পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। তখন চোখ সহ অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনও সম্ভব হবে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার দাবি দেহদানের আগেও চোখ বা অঙ্গ প্রতিস্থাননের সুযোগ তৈরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে কর্নিয়া সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকলেও, প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো নেই। শিলিগুড়িতেও বেসরকারি সংস্থা কর্নিয়া সংগ্রহ করলেও, সরকারি ‘আই ব্যাঙ্ক’ নেই। দক্ষিণ দিনাজপুরে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে তা পাঠাতে হয় কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। রায়গঞ্জ হাসপাতালে কৃষ্ণাদেবীর কর্নিয়াও সংগ্রহ করা হয়েছে, যদিও অঙ্গীকার অনুযায়ী কৃষ্ণাদেবীর দেহ নিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলা হাসপাতালের সুপার গৌতম মণ্ডলের দাবি, পরিকাঠামো না থাকায় কৃষ্ণাদেবীর দেহ থেকে অঙ্গ সংগ্রহ করা যায়নি। তাঁর যুক্তি, ‘‘অঙ্গ সংগ্রহ করতে হলে সেই মরদেহটি অ্যাটনমি বিভাগে সংরক্ষণ করে আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করতে হয়। রাজ্যের কোনও জেলা হাসপাতালেই সেই পরিকাঠামো নেই।’’ গৌতমবাবুর দাবি, একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়া অঙ্গদান সম্ভব নয়।

কৃষ্ণাদেবীর পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০০০ সালে অঙ্গদান নিয়ে টানা প্রচারে কৃষ্ণাদেবী অনুপ্রাণিত হন। চোখ এবং দেহদানের অঙ্গীকার করেন তিনি। রায়গঞ্জের তুলসিতলা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ কৃষ্ণাদেবীকে স্নায়ুরোগে এবং পেটের নানা অসুখে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ অক্টোবর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চোখ এবং অঙ্গদানের অঙ্গীকারপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জমা দেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সে কাগজ দেখে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, চোখ ছাড়া কোনও অঙ্গই নেওয়া সম্ভব হবে না। ঘণ্টাখানেক পরে দু’চোখের কর্নিয়া তুলে নিয়ে তাঁর মরদেহ পরিবারের সদস্যদের দিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

কৃষ্ণাদেবীর স্বামী সুভাষবাবু অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। তিনিও দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় টানা প্রচারে স্ত্রী (কৃষ্ণাদেবী) খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। স্ত্রী-ই আমাকে দিয়ে অঙ্গীকার করিয়েছিল। কিন্তু এতদিন ধরে প্রচার চলছে, অথচ জেলাগুলিতে এই পরিকাঠামো গড়ে উঠল না, এটাই হতাশজনক।’’ ছেলে শুভঙ্করবাবুও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

organ transplantation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE