Advertisement
E-Paper

যন্ত্রণা নিয়েই কাটছে দিন, বাড়ছে ক্ষোভ

জলে মিশে থাকা আর্সেনিক প্রতিদিন একটু-একটু করে ক্ষতি করছে ওঁদের। এমনকি, মিড-ডে মিলও রান্না হয় সে জলে। মালদহের কালিয়াচকের এই এলাকার বাসিন্দাদের কষ্টের কথা শুনল আনন্দবাজার।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪২
An image of hands

রোগের লক্ষণ। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার পাশে বাড়ির বারান্দায় গুটিশুটি হয়ে বসে রয়েছে বছর বারোর কিশোর। মুখে সাদা, কালো ছোপ ছোপ দাগ। চোখে মুখে যেন ‘বার্ধক্যের’ ছাপ। কেন এমন অবস্থা প্রশ্ন শুনে, এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। বললেন, “আর্সেনিকের বিষ শরীরে ঢুকে কিশোর বয়সেই ও বুড়ো হয়ে গিয়েছে। মুখের মতো শরীর জুড়েই আর্সেনিকের চিহ্ন। পায়ের তালুতে ক্ষত, হাঁটতে কষ্ট হয় ওর।”

এই কিশোরের মতোই, আর্সেনিকের ‘বিষ’ শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন মালদহের কালিয়াচক ১ ব্লকের সিলামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রুস্তম আলি টোলা, বিসারদ, সর্দার টোলা, এমএসকে পাড়ার তিন শতাধিক মহিলা ও পুরুষ। চিকিৎসা দূরের কথা, মিলছে না আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলটুকুও, আক্ষেপ তাঁদের।

মালদহ মেডিক্যালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কপিলদেব দাস বলেন, “আর্সেনিক দূরীকরণে একমাত্র উপায় হচ্ছে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল খাওয়া। এ ছাড়া, কারও শরীরে আর্সেনিক ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় আসা। কারণ, দেরি হলে ত্বকের ক্যানসার থেকে আর্সেনিকের বিষ শরীরে ঢুকলে লিভারের সমস্যা, হৃদরোগেরও মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

সোমবার, ‘দিদির দূত’ হিসেবে ওই গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল রাজ্যের সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, গ্রামবাসীরা আগে থেকেই ক্ষোভ জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে শুনে তিনি আর গ্রামে যাননি। সাবিনা বলেন, “মানুষের সমস্যা শুনতেই গ্রামে যাচ্ছিলাম। বিশৃঙ্খলা হবে বলেই গ্রামে যায়নি। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।” কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা বহু বার দরবার করেছি। তার পরেও, তৃণমূল সরকার কোনও কাজ করেনি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘বাম জমানাতেই জেলায় আর্সেনিকের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে, কিছু হয়নি।’’ উত্তর মালদহের বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘কেন্দ্র বাড়ি-বাড়ি জল পৌঁছনোয় উদ্যোগী হয়েছে। তবে রাজ্য মানুষকে সেই পরিষেবা দিতে ব্যর্থ।’’

স্থানীয়দের দাবি, এই তিনটি গ্রামে ন’হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রাথমিক স্কুল দু’টি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চারটি এবং একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিড-ডে মিলও টিউবওয়েলের জল দিয়েই রান্না হয়। এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা জাকিরা খাতুন বলেন, “আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল আনতে হলে দরিয়াপুর কিংবা সিলামপুর যেতে হবে। কেন্দ্র থেকে দরিয়াপুর, সিলামপুরের দূরত্ব দেড় থেকে দুই কিলোমিটার। তাই নিরুপায় হয়ে টিউবওয়েলের জল দিয়েই কেন্দ্রে শিশুদের জন্য রান্না করতে হচ্ছে।”

মালদহের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (আর্সেনিক) নিত্যনন্দ আচার্য বলেন, “প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্ত বাড়িতেই আর্সেনিকমুক্ত জল পৌঁছবে।” সে জলের অপেক্ষায় বসে না থেকে, নিজেদের মতো জল পরিশোধনের ব্যবস্থা করেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু তাতে কি জল আর্সেনিকমুক্ত হচ্ছে?

Arsenic water Water pollution Skin Irritation Malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy