Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সবুজের স্বপ্নে বাঁচেন গাছপাগল প্রধান

অনেকেই তাঁকে ডাকেন গাছ পাগল প্রধান। আর তিনি নিজে ভাবেন সবাই ফুল পাগল, গাছ পাগল হলে দুনিয়াটা কতই না সুন্দর হত। কার্বন-ডাই অক্সাইডের সঙ্গে লড়াইটা বেশ জমত। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যেত তখন।

বাগানে নিজের হাতে গাছ পরিচর্যায় সুভাষ রায়। — রাজকুমার মোদক

বাগানে নিজের হাতে গাছ পরিচর্যায় সুভাষ রায়। — রাজকুমার মোদক

রাজকুমার মোদক
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৮:০৯
Share: Save:

অনেকেই তাঁকে ডাকেন গাছ পাগল প্রধান। আর তিনি নিজে ভাবেন সবাই ফুল পাগল, গাছ পাগল হলে দুনিয়াটা কতই না সুন্দর হত। কার্বন-ডাই অক্সাইডের সঙ্গে লড়াইটা বেশ জমত। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যেত তখন।

পারিজাত, রঙ্গন, টগর, আকন্দ, রক্তকরবী, ক্যামেলিয়া, কাঞ্চন সহ প্রায় ষাট প্রজাতির ফুল। নানা রঙের প্রায় পঞ্চাশ রকমের বাহারি পাতা। নানারকম ক্যাটটাস। অন্যদিকে আম-জাম-লিচুর সঙ্গে সবেদা, মৌসুম্বি, চেরি, কমলা, বেদনা, জামরুল। আছে দশ রকমের আম গাছ। আট রকমের পেয়ারা। দারুচিনি, কাজুবাদাম, শাল, সেগুন, মেহগনি, নারকেল, পান সুপারি এমনকি বাঁশের ঝাড়ও। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছোট-বড় সবুজ গাছে ঘেরা তাঁর বাড়িটি। রয়েছে কিছু বিদেশি গাছও।

তিনি আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার বালাসুন্দর গ্রামের সুভাষ রায় গুয়াবরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল প্রধান।

প্রায় আড়াই বিঘা জমির উপর বাড়ি। পুকুর পাড়। উঠোন। বাড়িতে প্রবেশের রাস্তায় সর্বত্র গাছ আর গাছ। শীতকালে বাহারি ফুল দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন তাঁর বাড়ি। পঞ্চায়েতের কাজ, দলের কাজ, বাড়ির হাজার ঝক্কি সামলেও প্রতিদিন সময় বার করে নেন গাছেদের পরিচর্যার জন্য।

প্রতিদিন কোনও গাছের ডাল কাটা, কোনও গাছের গায়ে কোনও রোগপোকা বাসা বাঁধল কি না তা দেখা, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া। গাছে জল দেওয়া এ সবই চলে একেবারে নিয়মমাফিক। এ সবই প্রতিদিনের অভ্যেস। সকালে পঞ্চায়েতের কাজে দৌড়তে হলে বিকালে যান গাছেদের কাছে। একা পেরে না উঠলে শ্রমিক নিয়ে গাছেদের পরিচর্যায় মেতে উঠেন।

বছর ২৭ বয়স তখন। এই সময় থেকেই গাছের নেশায় পড়েন সুভাষবাবু। দিল্লী, মুম্বই, হায়দরাবাদ বা রাজ্যের যেখানেই বেড়াতে বা কোনও কাজে গিয়েছেন নজরকাড়া ফুল, পাতাবাহার, ক্যাটটাস দেখলেই সেগুলি যেভাবেই হোক সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি একবেলা কম খেতে রাজি আছি। কিন্তু চোখ জুড়ানো গাছ-গাছালি দেখলে আমি সব ভুলে যাই। অন্য জায়গার বাহারি ফুলের গাছ নজরে এলে তা বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য অনেক ঝ়ঞ্ঝাট পোহাতে হয়েছে। যদিও সব গাছ বাঁচাতে পারিনি।’’

সুভাসবাবুর বাবা কর্ণচন্দ্র রায় এই গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। প্রায় ৩২ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে তাঁদের। তার মধ্যে সাড়ে তিন বিঘার পুকুর, আড়াই বিঘা জমির উপর বাড়ি। এখনও একান্নবর্তী পরিবার। ফুল ও গাছ-গাছালির টবে ছড়াছড়ি সুভাষবাবুর বাড়িতে। প্রায় তিন’শ টবে বিভিন্ন ফুল, পাতা বাহার, ক্যাটটাস রোপন করেছেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়াতে বিভিন্ন সংগঠন সুভাষবাবুর কাছে টব নেওয়ার জন্য আবেদন জানালে উনি খুশি মনে তা তুলে দেন। অনুষ্ঠান শেষে তা ফিরিয়েও আনেন।

প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে চরকের মেলা বসে সুভাষবাবুর বাড়ির সামনের জমিতে। হাজার হাজার মানুষ মেলা দেখতে এসে একবার ঢু মেরে দেখে যান তাঁর গাছ-গাছালিগুলিকে। অনেকে বলেন, ‘‘গাছ পাগল প্রধান। আমাদেরও এরকম পাগল হওয়া দরকার।’’

আর সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘যখন থেকে বুঝতে শিখলাম আমরা কার্বনের বিষে ডুবে যাচ্ছি, তখন থেকেই গাছ ও ফুলের প্রতি আমার ভালবাসা।” উনার আফসোস, সবাই যদি ফুল-ফল ও সবুজ গাছ-গাছালিদের ভালবাসত তা হলে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Green plants gardening Panchayat head
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE