কমল অগ্রবালের উপরে হামলার ঘটনার পর এলাকায় ভিড়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
দিনে দুপুরে আয়কর আইনজীবী তথা শিলিগুড়ির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী কমল অগ্রবালের অফিসে হাঁসুয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় শিলিগুড়ির নানা মহলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কমলবাবুর অফিস তথা চেম্বার যে এলাকায় সেটি শহরের শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা।
শহরের দুই ব্যস্ত রোড হিলকার্ট রোড এবং সেবক রোডের সংযোগস্থলের পাশেই কে সি দে রোডে কমলবাবুর অফিস তথা চেম্বারে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এক যুবক হামলা চালায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় হাঁসুয়া হাতে সেবক রোড, চার্চ রোড দিয়ে হেঁটে অভিযুক্ত যুবক কমলবাবুর চেম্বারে ঢোকে বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় ওই যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল বলে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে শহরের ব্যবসায়ী মহল। বিরোধী কেউ ওই যুবককে মদ সহ অনান্য নেশার টাকা জুগিয়ে যুবককে হামলায় প্ররোচিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুরভোটের প্রচারে বিরোধীদের হেনস্থা করতে অথবা নিজেদের পক্ষে ভোট আনতে মদ সহ বিভিন্ন নেশাসামগ্রীর টাকা জোগানোর অভিযোগ সামনে আসায় পুরভোটের মুখে আতঙ্ক ছড়িয়েছে শিলিগুড়িতে। এই প্রবণতায় দ্রুত রাশ না টানলে শহরের বড়সর অঘটনের আশঙ্কায় ভুগছে বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ভোটের আগে শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি পদক্ষেপ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযানও চলছে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যে হলেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে নেশার আসর শুরু হয়ে যায়। সেই তালিকা থেকে হিলকার্ট রোড, সেবক রোড থেকে বর্ধমান রোড লাগোয়া বেশ কয়েকটি জনবহুল এলাকাও রয়েছে। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার লাগোয়া চম্পাসারি এলাকায় দিনের বেলাতেও মদের আসর চলছে বলে অভিযোগ। একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলের পরে দলের একাংশ সমর্থকদের নিয়মিত দেশি মদের আসরে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। দার্জিলিং মোড়, প্রধাননগরের বেশ কিছু হোটেলের ঘরে সস্তার বিদেশি মদের ঢালাও আসর চলছে বলে অভিযোগ। শালুগাড়া এলাকাতেও দিনভর মদের আসর চলছে বলে অভিযোগ। এলাকার ভ্যাটে প্রতিদিনই মদের খালি বোতল উপচে পড়ছে বলে দাবি।
শহরের অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত বাঘাতীন পার্ক লাগোয়া এলাকা থেকে শুরু করে সূর্যনগরের মাঠে প্রতিদিন সকালে মদের খালি বোতল গড়াতে দেখছেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। টিকিয়াপাড়া, সন্তোষ নগর, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন লাগোয়া এলাকাতেও ভোট প্রচারের সেরে ঢালাও মদের আসর বসছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি শহরের বাগরাকোট এলাকায় মদের আসর থেকে সুভাষপল্লি এলাকার বস্তিতে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। ওই ওয়ার্ডের এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদিন ঢালাও মদের আসর বসানো এবং সেখান থেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ফুলেশ্বরী এলাকার জোড়াপানি রেলসেতুর কাছে এক মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল মদের আসর থেকে উঠে আসা দুই যুবকের বিরুদ্ধে। এই সব এলাকার আসর থেকে উঠে আসা যুবকদের একাংশ হিলকার্ট, রোড সেবক রোড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ।
এই সব ঘটনাই স্বস্তি দিচ্ছে না ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের। বৃহস্পতিবারে কমলবাবুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়ায় সব মহল থেকেই সেই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘যতই রাজনৈতিক লড়াই হোক, শিলিগুড়ির মতো শহরে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। প্রশাসন এখনই সজাগ না হলে বিপদ হতে পারে।’’ শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমপ্রকাশ অগ্রবালের কথায়, ‘‘শিলিগুড়ির রাজনৈতিক সংস্কৃতি আগে এমন ছিল না। এখনই রাশ না টানলে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’
কমলবাবু শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ট্যাক্স বার অ্যাসোসিয়েশন দুইয়েরই সদস্য। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন দের কথায়, ‘‘ব্যস্ত এলাকায় এক আইনজীবীর চেম্বারে ঢুকে হামলার অভিযোগ শুনেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’’ ট্যাক্স বারের সম্পাদক পার্থ সাহার দাবি, আইনজীবীদের জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।
উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র শিলিগুড়িতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার সুদুর প্রসারী প্রভাব পড়বে বলে দাবি হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনের সভাপতি প্রদ্যুগ্ন সিংহ চহ্বান বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনায় খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।’’ মারোয়ারী যুব মঞ্চের সভাপতি আনন্দ অগ্রবালের প্রশ্ন, ‘‘ভোটের আগে যদি এমন হয়, তবে ভোট যত কাছে আসবে তখন কী হবে?’’ বিহারী কল্যাণ মঞ্চের সম্পাদক করমবীর সিংহ বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি সব ভাষা-ভাষী, ধর্মের মানুষদের শহর। সব দলের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy