Advertisement
০৬ মে ২০২৪

সর্বোচ্চ তিনশো শুনে বন্ধ ব্যাঙ্ক

মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর থেকে গ্রাহকদের কোনও দিন তিনশো বা কোনও দিন চারশো টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। মাঝে একদিন পাঁচশো করে দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর থেকে গ্রাহকদের কোনও দিন তিনশো বা কোনও দিন চারশো টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। মাঝে একদিন পাঁচশো করে দেওয়া হয়। আর যে দিন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু দু’হাজার টাকার নোট এসেছিল, সে দিন গ্রাহকদের কপালে সর্বোচ্চ একটি করে ওই নোট জুটেছিল। ফলে সপ্তাহে ব্যাঙ্ক থেকে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার টাকা তোলার সরকারি নির্দেশ কার্যত কাগজে-কলমেই রয়ে গিয়েছে ইংরেজবাজারের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের কাছে। অন্য দিনের মতো এদিনও কাজিগ্রামের একমাত্র ব্যাঙ্ক বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার-কর্মীরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ তিনশো টাকা করে দেওয়ার কথা জানায়। আর এতেই শুরু হয় গ্রাহকদের জোর বিক্ষোভ. অভিযোগ, গ্রাহকরা ব্যাঙ্ক কর্মীদের ব্যাঙ্ক বন্ধ করে চলে যাওয়ার ফতোয়া দেয়। আরও প্রবল বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে ম্যানেজার-কর্মীরা ব্যাঙ্ক বন্ধ করে চলে আসেন। ফলে এ দিন দিনভরই বন্ধ থাকল ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের একমাত্র ব্যাঙ্কটি। কাজিগ্রামে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের ওই শাখাটি রয়েছে কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের দোতলাতেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১০ টার আগেই ব্যাঙ্কে হাজির হন ম্যানেজার সহ সাত কর্মী। তাঁরা ব্যাঙ্কও খোলেন। সে সময় ওই ব্যাঙ্কের বাইরে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ানো অন্তত একশোর বেশি গ্রাহক ছিলেন। তাঁদের মধ্যেই কয়েকজন গ্রাহক ম্যানেজারের কাছে জানতে চান যে, এ দিন গ্রাহকদের কত টাকা করে তুলতে দেওয়া হবে। ম্যানেজার তিনশো টাকার বেশি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন। আর এতেই ঘৃতাহুতি পড়ে, শুরু হয় গ্রাহকদের বিক্ষোভ। অভিযোগ, গ্রাহকদের একাংশ ব্যাঙ্ক কর্মীদের বের হয়ে ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিতে বলেন. পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কর্মীরা ব্যাঙ্ক বন্ধ করেই চলে আসেন।

কাজিগ্রামের বাসিন্দা ও ওই ব্যাঙ্কেরই গ্রাহক দেবু চৌধুরী, রানা চৌধুরী, রবি দাসরা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এটিই একমাত্র ব্যাঙ্ক। এটিএমেরও কোনও বালাই নেই। মোদী সরকারের নোট অচলের পর যেদিন ব্যাঙ্ক খুলল সেদিন থেকেই গ্রাহকদের কখনও ৩০০ বা কোনও দিন ৪০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে ওই সামান্য টাকা পেয়ে কারও কোনও কাজই হচ্ছিল না। আমরা বারবার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে অন্তত তিন হাজার টাকা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু যেদিন তাঁরা দুহাজার টাকার নোট পেয়েছিল সেদিনই তাঁরা সর্বোচ্চ দুহাজার টাকা করে দিয়েছেন।’’ সেই টাকা ভাঙাতেও কম হ্যাপা হয়নি তাঁদের। এ দিনও তিনশো টাকা করে দিয়ে চায়. গ্রাহকরা তাই ক্ষোভে ব্যাঙ্ক বন্ধ করে চলে যেতে বলে। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুশীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এদিন ৩০ হাজার টাকা ছিল। ফলে তিনশো টাকা করে জনপ্রতি দিলে একশো জনকে দিতে পারতাম। গ্রাহকরা তা মানেনি। ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিতে বলেন। আমরা ব্যাঙ্ক বন্ধ করে মালদহ শহরে রিজিওনাল ম্যানেজারের দফতরে চলে আসি। বেশি টাকা না পেলে আমাদের পক্ষে ব্যাঙ্ক খোলা মুশকিল।’’

বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার সব্যসাচী মজুমদার বলেন, ‘‘যে পরিমাণ টাকা মেলে তা জেলায় থাকা আমাদের ৬০টি শাখায় ভাগ করে দিই। এখন চেস্ট ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা মিলছে না। ফলে গ্রাহকদের কম পরিমাণ টাকা দিতে হচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ মালদহের ব্যাঙ্ক সমূহের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ শর্মা বলেন, ‘‘টাকার জোগান কম থাকাতেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE