Advertisement
E-Paper

নোটের জন্য নাকাল

মাছ-সব্জি বাজারের দুর্ভোগ গত বুধবার থেকেই শুরু হয়েছিল, এ দিন বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েও নাকাল হতে হল বাসিন্দাদের। শিলিগুড়ি থেকে শামুকতলা, কোচবিহার থেকে তপন একেক রকম ভাবে নাকাল হলেন একেকজন।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪২
সকাল সওয়া ন’টায় কোচবিহারে এক ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

সকাল সওয়া ন’টায় কোচবিহারে এক ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

মাছ-সব্জি বাজারের দুর্ভোগ গত বুধবার থেকেই শুরু হয়েছিল, এ দিন বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েও নাকাল হতে হল বাসিন্দাদের। শিলিগুড়ি থেকে শামুকতলা, কোচবিহার থেকে তপন একেক রকম ভাবে নাকাল হলেন একেকজন। কেউ বাজারে গিয়েও খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরলেন, খুচরো দিতে না পেরে বাস থেকে নেমে যেতে হয়েছে কাউকে। দুর্ভোগে পড়েছেন বিদেশি পর্যটকরাও। অভিযোগ নোট বদল করার লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্মের কালোবাজারিও হয়েছে। কোথাও বা সক্রিয় হয়েছে দালাল চক্র। সব মিলিয়ে বুধবারের থেকে বৃহস্পতিবারে ভোগান্তি বেড়েছে উত্তরেরর আম জনতার।

লাইনেই ছিলাম বাবা

কমিশন নিয়ে পাঁচশো-হাজারের নোট বদলের অভিযোগ ছিলই, এবার ব্যাঙ্কের লাইনে জায়গা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়েও টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠল। নোট বদলের ফর্ম নিয়েও কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কে নোট বদলানো এবং জমা রাখতে ভিড় শুরু হয়। এই পরিস্থিতি হবে আগাম আন্দাজ করে কয়েকজন ব্যক্তি আগেভাগেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তাঁদের হাতে একশো-দুশো টাকা গুঁজে দিলেই জায়গা মিলেছে বলে দাবি। শিলিগুড়ি লাগোয়া বাগডোগরা-শিবমন্দিরের সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে জায়গা পেতেও কমিশন দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কোথাও আবার ব্যাঙ্কের সামনে ঘুরঘুর করেছে ‘দালাল’-এর দল। মোটা টাকা কমিশন নিয়ে তারা নোট বদলে এনেছেন বলে অভিযোগ। যার জেরে সাধারণ বাসিন্দা যাঁরা নিজেরাই সাতসকালে ব্যাঙ্কের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের পদে পদে নাকাল হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কের কাউন্টারে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কেউ কেউ বলছেন, অনেককেই দেখছি সকাল থেকেই হঠাৎ লাইনে এসে বলছেন লাইনেই ছিলাম বাবা।

অন্যায্য

৫০০ ও ১০০০ টাকা নোট নিয়ে এদিনও রায়গঞ্জে সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। রায়গঞ্জের মোহনবাটি, সুভাষগঞ্জ, গোশালা, এফসিআই, কলেজপাড়া, বন্দর সহ বিভিন্ন বাজারে এদিন ব্যবসায়ীরা বাতিল হওয়া নোট নেননি। মেলেনি খুচরো টাকাও। যার জেরে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই নাকাল হতে হয়েছে। জলপাইগুড়ির সরকারি হাসপাতাল কিংবা রেল স্টেশনেও খুচরো দুর্ভোগ চরমে ওঠে। অভিযোগ, বুধবারের মত বৃহস্পতিবারেও জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ওই নোট নিয়ে গিয়ে অনেককে ফিরতে হয়৷ রংধামালীর আলিমা খাতুন অভিযোগ করেন, ‘‘পাঁচশ টাকার নোট নিয়ে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে গেলে তারা তা নিতে অস্বীকার করেন। ওষুধই কিনতে পারলাম না। এই অন্যায্য কেউ দেখছেন না।’’

সকাল থেকে ব্যাঙ্কের লাইনে নোটের তাড়া হাতে জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।

এক ঘণ্টা বেড়ে চার

নির্দেশ থাকলেও রায়গঞ্জের বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে এ দিন ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হয়নি। উকিলপাড়ার একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ৩০ বছর বয়সী ছেলের সিটি স্ক্যান করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন চাকুলিয়ার বাসিন্দা পেশায় পুরোহিত শিবেন্দ্রনাথ ঝাঁ। ছেলে স্থানীয় হাইরোড সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমে ভর্তি। শিবেন্দ্রবাবু জানান, সিটিস্ক্যানের বিল হয় ১৩০০ টাকা। দু’টি ১০০০ টাকার নোট ছিল তাঁর কাছে। কাউন্টার থেকে নোট ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটিএম কার্ডের মাধ্যমে বিলের টাকা জমা দিতে বলা হলেও, তাঁর কাছে কার্ডও নেই। পরে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ১৩টি ১০০ টাকার নোট সংগ্রহ করেন। যে রিপোর্ট এক ঘণ্টায় পাওয়ার কথা, তা পেতে সময় লেগে যায় পাক্কা চারঘণ্টা। ওই প্যাথোলজিক্যাল কেন্দ্রের দাবি, খুচরো দেওয়ার সমস্যা হচ্ছে। সে কারণেই বড় নোট ভাঙানো সম্ভব হয়নি। মালদহে বৃহস্পতিবারও খুচরো না থাকায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ডায়লিসিস ইউনিট, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় রোগীর আত্মীয় পরিজনদের। স্বাস্থ্য বিভাগেও ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। খুচরো না থাকায় ডায়লিসিস থমকে থাকে হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীর বাসিন্দা দীপেন্দু ভৌমিকের।

লাইন আছে, টাকা নেই

ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে লাইনে দাড়িয়েও কাউন্টারের সামনে পৌঁছতেই শুনতে হল, ‘‘নোট নেই। কাল আসুন।’’ নতুন নোট না পৌঁছনোয় বৃহস্পতিবার দিনভর জলপাইগুড়িতে বাসিন্দাদের এমনই শুনতে হল বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায়। ক্লাবরোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে নোট বদলের লাইন পড়ে। ব্যাঙ্ক খোলার পর টাকা পরিবর্তন করতে গিয়েই জোড় ধাক্কা খেতে হয় গ্রাহকদের৷ ব্যাঙ্ক থেকে বলে দেওয়া হয় এক হাজার টাকার বেশি পুরানো নোটের বদল সম্ভব নয়৷ জলপাইগুড়ি ক্লাব রোডের বাসিন্দা তপন রায়ের কথায়, “চার হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছি৷ তখনই আমার আগে ষাট-সত্তোরজন দাড়িয়ে৷ দশটায় ব্যাঙ্ক খোলার পর কাউন্টার পর্যন্ত পৌছাতেও অনেকটা সময় লাগে৷ কাউন্টারে গিয়ে শুনলাম নোচ নাকি শেষ।’’ জলপাইগুড়ি হেড পোস্ট অফিসেও সকাল থেকে টাকা বদল শুরু হলেও দুপুরের আগে বন্ধ হয়ে যায়। জলপাইগুড়ি ডাকঘরের তরফে জানানো হয়, মজুত টাকা শেষ হওয়াতেই বিপত্তি।

ক্ষোভ বিক্ষোভ

কেউ ফর্ম তুলে বাড়ি ফিরলেন। কেউ তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে বদলের ফর্মটাও পেলেন না। কোচবিহারের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখার সামনে দিনভর ক্ষোভ-বিক্ষোভই শোনা গেল। সাগরদিঘির ধারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়েছেন নাটাবাড়ির বাসিন্দা গীতা রায়। তিনি জানান, তাঁর স্বামী আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। দিন কয়েক আগেই বেতনের টাকা তুলেছিলেন। সব পাঁচশো, হাজার টাকার নোট হাতে রয়েছে। তিনি বলেন, “দৈনন্দিন কাজে টাকা প্রয়োজন। এখন তো কেউ পাঁচশো, হাজারের নোট নিতে চাইছেন না। তাই খুচরো টাকার দরকার। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানোই সার, ফর্ম ছাড়া তো কিছুই পেলাম না।” দিনহাটার কয়েকজন গ্রাহক জানান, দিনহাটা প্রধান সড়কের পাশে থাকে একটি ব্যাঙ্ক বদলের টাকা বেশি ক্ষণ দিতে পারেনি।

টাকা পৌঁছল না

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় নতুন নোট এসে না পৌঁছনোয় ব্যাঙ্কের শাখা কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়েন। তবে ব্যাঙ্কের ভিতরে বিকেল ৫টা অবধি ভিড় থাকায় শহরের অনেক ব্যাঙ্কের তরফে গেটে ভিতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় গ্রাহকেরা অসন্তোষ দেখান। ভারতীয় স্টেটব্যাঙ্ক, ইউবিআই, ইউকো সহ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের শাখা মিলিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি টাকা জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। বালুরঘাট স্টেট ব্যাঙ্ক শাখার ক্যাশ ম্যানেজার কল্যাণ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এ দিন টাকা জমা ও তোলার সঠিক হিসাব বেশি রাতে জানা যাবে।’’ সকাল ৮টায় কোচবিহারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে টাকা জমা দিতে লাইনে দাঁড়ান নিরঞ্জন সরকার। তার আগেই অবশ্য ব্যাপক ভিড়। কেউ টাকা জমা দিতে এসেছেন, কেউ বদল করতে।

money bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy