Advertisement
০৩ মে ২০২৪

জল পেতে এখনও ভরসা গর্ত

শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছে গ্রামটি। নাম সেবদৌল্লাজোত। যেখানে থাকতেন প্রয়াত নকশাল নেতা কানু সান্যাল। ‘মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছেছিল ২০১৪ সালে।

দুর্দশা: ‘মডেল’ হয়নি গ্রাম। নদীর পাশে মাটি খুঁড়ে মেলে পানীয় জল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

দুর্দশা: ‘মডেল’ হয়নি গ্রাম। নদীর পাশে মাটি খুঁড়ে মেলে পানীয় জল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিশোর সাহা
হাতিঘিষা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫২
Share: Save:

গড়ে তোলা হবে ‘মডেল’ গ্রাম। এই লক্ষ্যেই একটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে দত্তক নিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের মোর্চা সমর্থিত বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তারপর থেকে এখনও সেখানকার একটি গ্রামের বাসিন্দাদের পানীয় জল পেতে নদীর ধারে গর্ত খুঁড়তে হয়। কারণ গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নলকূপও বেশির ভাগ বিকল। কুয়ো তৈরির ক্ষমতা নেই অনেকেরই।

শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছে গ্রামটি। নাম সেবদৌল্লাজোত। যেখানে থাকতেন প্রয়াত নকশাল নেতা কানু সান্যাল। ‘মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছেছিল ২০১৪ সালে। সেখানকার একটি গ্রাম সেবদৌল্লাজোতে সফর করে সংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনার (এসজেএসওয়াই) আওতায় হাতিঘিষাকে দত্তক নেওয়ার ঘোষণাও করেছিলেন বিজেপির সাংসদ। তাতেই স্বপ্ন দেখেছিলেন হাতিঘিষার দরিদ্র পরিবারগুলো।

মধ্য চল্লিশের দিনমজুর চম্পা নাগাশিয়া, পঞ্চাশ পেরোনো শান্তি মুণ্ডার কথা ধরা যাক। তাঁরা জানাচ্ছেন, গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চেঙ্গা নদীর জল খেয়ে ছোট থেকে বড় হয়েছেন। ২০১৮ সালে ‘মডেল গ্রাম’ হবে শুনে ভেবেছিলেন সব হয়ে যাবে। পরের বছর নলবাহিত জল মেলে। কিন্তু, বছরখানেক আগে সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চম্পা বলেন, ‘‘আবার আমরা চেঙ্গার ধারে গর্ত খুঁড়ে জল নিচ্ছি।’’ ওই গ্রামের বাসিন্দা তৌলিক দেবনাথ এলাকার স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র । সে বলে, ‘‘এখনও আমাদের নদীর জল কেন খেতে হবে কেন সেটাই বুঝতে পারি না।’’

এসজেএসওয়াই প্রকল্প অনুযায়ী, গ্রামে পরিছন্নতা, আবাসন তৈরি, শিক্ষা, মানব সম্পদ উন্নয়নের কাজ করিয়ে মডেল গ্রাম গড়ে তোলাই সাংসদদের লক্ষ্য বলে ঠিক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ সেবদৌল্লাজোতের স্কুলছুট অভিষেক নাগাশিয়া বলে, ‘‘বাড়িতে বড়ই অভাব। আমাকেও কাজের খোঁজে ছুটতে হয়। তাই সপ্তম শ্রেণির পরে পড়তে পারিনি।’’

এসজেএসওয়াই প্রকল্পের অধীনে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ৭৫০ জন সাংসদের একটি করে গ্রাম দত্তক নিয়ে সার্বিক উন্নতিই লক্ষ্য। ২০১৬ সালের মধ্যে তা সম্পূর্ণ করার কথা। তারপরে আরও দু’টি গ্রাম দত্তক নিয়ে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও সাংসদদের দেওয়া হয়। যা ২০১৯ সালের শুরুতেই সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।

দার্জিলিংয়ের সাংসদ বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। কাজ না হওয়া প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘মডেল হিসেবে গ্রামকে গড়তে হলে স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা লাগে। সেটা হলে ওই গ্রাম মডেল হওয়ার পথে এগোত।’’ দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের দাবি, এলাকার উন্নয়নের জন্য নানা প্রকল্প পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। নকশালবাড়ির বিডিও বাপি ধর বলেন, ‘‘একাধিকবার হাতিঘিষায় সামগ্রিক উন্নয়নের প্রকল্প গেলেও ওই এলাকার জন্য আলাদা ভাবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মেলেনি। তবে রাজ্যের বরাদ্দেই কাজ হচ্ছে। গ্রামের জল সরবরাহের মোটর বিকল হয়েছে। তা সারানোর জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’

ওই গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে। পঞ্চায়েত প্রধান জৈষ্ঠমোহন রায় বলেন, ‘‘মোটর সারানো হলেও অনেক কলে জল পড়বে না। কারণ, কিছু ট্যাপ সজলধারার আওতায় রয়েছে। যে প্রকল্প আপাতত অকেজো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Holes Model Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE