Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বন্যায় ফিকে ইদের খুশি

মহানন্দার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল রতুয়া ২ ব্লকের শ্রীপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলনপল্লি এলাকা। সেই গ্রামে যে দু’শো পরিবার রয়েছে তাঁদের সকলেরই ঘরবাড়ি ডুবে যায়। তাঁরা আশ্রয় নেন জাতীয় সড়কের পাশে।

জয়ন্ত সেন
শ্রীপুর (মালদহ) শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

এক বিঘে মাত্র জমি। তাই চাষ করেই সংসার চলে শ্রীপুরের মিলনপল্লির মহম্মদ ইমানির। টানাটানির সংসারেও গত বছর বকরি ইদে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছিলেন কুরবানির জন্য। এ বারও একই কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু বাদ সেধেছে বন্যা।

দিন পনেরো আগে বন্যার জল ঘরে এক কোমরেরও বেশি হয়ে যাওয়ায় তাঁকে আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিতে হয় বাড়ির কাছেই ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কে। দু’দিন আগে জল নামলো বটে, কিন্তু বাঁশ আর টালি দিয়ে তৈরি সেই ঘর ভেঙে পড়েছে। অগত্যা ফের নতুন করে ঘর তৈরির কাজ শুরু করেছেন নিজেই। ফলে এই পরিস্থিতিতে এ বার আর খাসি কিনে কুরবানি দিতে পারছেন না। শুধু মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়েই ইদ পালন করবেন তিনি। বন্যাতে খুশির ইদ তাঁর কাছে কার্যত ফিকে হয়ে পড়ল। বন্যার জেরে এই পরিস্থিতি শুধু ইমানি সাহেবেরই নয়, বন্যা কবলিত মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, রতুয়া, পিরগঞ্জ, ভাদো, জালালপুর, আশাপুর, দৌলতনগর, ইসলামপুর, সাদলিচক সর্বত্রই। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। বন্যার জলে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় ১৫ দিন ধরে তাঁবু টাঙিয়ে রাস্তার পাশে থাকলেও মাস তিনেক আগে কেনা খাসি দিয়েই কুরবানি করবেন ঢিসাল গ্রামের দানেশ আলি।

মহানন্দার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল রতুয়া ২ ব্লকের শ্রীপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলনপল্লি এলাকা। সেই গ্রামে যে দু’শো পরিবার রয়েছে তাঁদের সকলেরই ঘরবাড়ি ডুবে যায়। তাঁরা আশ্রয় নেন জাতীয় সড়কের পাশে। এখনও কয়েকশো পরিবার ত্রিপল দিয়ে তাঁবু টাঙিয়ে প্রায় ১৫ দিন ধরে বসবাস করছেন। সেই মিলনপল্লির বাসিন্দা মহম্মদ ইমানি বলেন, ‘‘বন্যায় এ বার আমার কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। সেই ঘর তো ঠিক করতে হবে না হলে এই রাস্তায় কত দিন থাকব। এই পরিস্থিতিতে আমি কী করে ইদের খুশি মানাই?’’

একই আক্ষেপের সুর ঝরে পড়ল লস্করপুরের বানভাসি রফিক শেখের গলায়। তিনিও ১৫ দিন ধরে পরিবার নিয়ে জাতীয় সড়কেই ঠাঁই নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ সারা বছর অর্থ জমিয়ে রাখি ইদে খাসি কিনে কুরবানি দেওয়ার জন্য। কিন্তু বন্যায় সব শেষ। ঘর ভেঙে পড়েছে। কী করে খুশির ইদ পালন করি?’’

শুধু এই রতুয়া ২ ব্লকই নয়, এই একই চিত্র এবার চাঁচল মহকুমার ৬টি ব্লক সহ জেলার বানভাসি ব্লকগুলির বেশিরভাগ মানুষের কাছেই। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ঢিসাল গ্রামের দানেশ আলি তিন মাস আগে কুরবানির খাসি কিনে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘খাসি কিনে রেখে ছিলাম, তাই তা কুরবানি দিতে পারব। এখন হলে আর পারতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Eid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE