আর্সেনিক থেকে বাঁচতে ভিটে ছেড়েছেন। তবুও রোগ থেকে রেহাই মেলেনি। মালদহের মানিকচকের শেখপুরা গ্রামের আতালু শেখ, প্রেমা বেওয়ারা তাই অসহায়। আর আর্সেনিক নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, আর্সেনিক কবলিত গ্রাম শেখপুরা। অথচ এমন গ্রামেই নেই আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন পৌঁছলেও, জল সরবরাহ অনিয়মিত। ফলে বাধ্য হয়েই টিউবওয়েলের বিষাক্ত জলই পান করতে হয়।
আর্সেনিক কেড়ে নিয়েছে বাবা, মা, দুই দাদা ও এক বোনকে। এরপরেই আতঙ্কে ভিটে ছেড়ে গ্রামেরই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন আতালু শেখ। তবুও রোগ পিছু ছাড়েনি। সরকারি চিকিৎসা তো দূর অস্ত্, মেলেনি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলটুকুও। তাই আর্সেনিকের প্রশ্ন শুনে ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। বলেন, ‘‘আর্সেনিক নিয়ে কথা বললে কি আমার রোগ ভাল হয়ে যাবে। কিছুই হবে না।’’
শরীরে আর্সেনিকের চিহ্ন দেখাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা প্রেমা বেওয়া। তিনি বলেন, ‘‘সবাই শুধু ছবি তুলে নিয়ে যায়। চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় না। গ্রামের অন্যদের মতো হয়তো আমিও একদিন মরে যাব।’’
মানিকচক ব্লক সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শেখপুরা গ্রামের জনসংখ্যা ৫ হাজার ১৩৯ জন। ২০১৫ সালের শুরুতে গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন পৌঁছয়। পানীয় জলের আটটি সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামে রয়েছে ন’টি টিউবওয়েল। ২০১৪ সালে গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের জন্য সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে জলাধার তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনও তা চালু হয়নি। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, জল তুলে পরিস্রুত করার জন্য যে মোটরটি রয়েছে, তা বিকল হয়ে রয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা হিয়েছে, বর্তমানে শেখপুরা গ্রামের ১২ জন বাসিন্দা আর্সেনিকে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে এও জানা গিয়েছে, নব্বই দশকে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে ওই গ্রামের ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, আর্সেনিকের চিহ্ন হল হাত ও পায়ের তালুতে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। হাত ও পায়ের চামড়া মোটা হয়ে যায়। অল্প বয়সেই বার্ধক্য নেমে আসে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কারও শরীরে আর্সেনিকজনিত উপসর্গ দেখা দিলে তা একেবারে নির্মূল করা একরকম সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে শুরুর দিকে উপসর্গ দেখলে চিকিৎসা করে থাকি। প্রতিরোধক হল পরিস্রুত পানীয় জল।’’
আর্সেনিকপ্রবণ গ্রামে কেন পরিস্রুত পানীয় জলের এমন হাল? জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (আর্সেনিক) ঋতম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিস্রুত পানীয় জলের পরিষেবা রয়েছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ লাইন ফুটো করে জল সংগ্রহ করা হয়। তার জন্য জলের বেগ কমে যায়।’’ আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের জন্য ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy