হোম থেকে পালিয়ে ফের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল তিন মূক ও বধির মহিলা আবাসিক। তাঁদের মধ্যে দুজন তরুণী ও এক কিশোরী। রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমের ওই তিন মহিলা আবাসিককে বুধবার সকালে রায়গঞ্জ থানার শেরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
শেরপুর এলাকায় এক যুবকের সঙ্গে ওই তিনজন এদিন ঘোরাঘুরি করছিলেন বলে অভিযোগ। সেইসময় বাসিন্দাদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই একটি মোটরবাইকে চেপে ওই যুবক পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এরপর পুলিশ ওই তিন মহিলা আবাসিককে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া এলাকার সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে পৌঁছে দেয়।
হোম সূত্রের খবর, ওই তিন মহিলা আবাসিকের নাম আতামনি পান্থ, বন্দনা পান্থ ও রুকসানা খাতুন। আতামনি ও বন্দনা গত দুবছর ধরে সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে রয়েছেন। কলকাতা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর সরকারি নির্দেশে তাঁদের ওই হোমে ঠাঁই হয়। প্রায় একবছর আগে ১৬ বছর বয়সী রুকসানাকে পুলিশ রায়গঞ্জে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে উদ্ধার করে ওই হোমে পাঠায়। হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মূক ও বধির মহিলা আবাসিকদের হস্টেলের শৌচাগারের একটি ঘুলঘুলির কয়েকটি লোহার রড ভারি কিছু দিয়ে ভেঙে বাইরে বার হয়ে হোমের পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায় তারা। রাতেই হোমের তরফে স্থানীয় কর্ণজোড়া পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এই নিয়ে গত দুবছরে ওই হোম থেকে ১৭ জন মহিলা আবাসিক পালানোর ঘটনা ঘটল। তারমধ্যে ১২ জন উদ্ধার হলেও বাকিদের কোনও হদিস মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে হোম কর্তৃপক্ষের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রায়গঞ্জের ডিএসপি (ডিআইবি) সুজিত ঘোষ বলেন,’’বার বার হোম থেকে মূক ও বধির আবাসিকদের পালানোর ঘটনা ঘটেছে। যেহেতু এই আবাসিকরা কথা বলতে পারেন না, তাই তাদের পাচারচক্রের হাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে হোম কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করেছি।’’ রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী জানান, পলাতক যুবককে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তার সঙ্গে কীভাবে হোমের ওই তিন মূক ও বধির মহিলা আবাসিকের যোগাযোগ হল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে বর্তমানে ৪৬ জন ছেলে ও ২৬ জন মেয়ে রয়েছে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য হোমে দুটি পৃথক হস্টেল রয়েছে। মূলতঃ বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া মূক ও বধির ছেলে মেয়েদের পুলিশ বা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার করে সরকারি নির্দেশে ওই হোমে রেখে যায়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ওই হোমে ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোট ৫০ জন মূক ও বধির কিশোর ও কিশোরীর থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ৭২ জন মূক ও বধির আবাসিক রয়েছেন।
হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথী দাসের দাবি, হোমের তরফে সমস্যার কথা রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তাদের একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। পালানোর প্রবণতা রোখার জন্য যতটা সম্ভব নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সমাজকল্যাণ দফতরের উত্তর দিনাজপুর জেলার আধিকারিক অরুময় রায় বলেন, ‘‘হোম কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত আবাসিক পালানো ও উদ্ধারের বিষয়ে কোনও রিপোর্ট দেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy