Advertisement
০৪ মে ২০২৪

হদিস নেই বাথার, মাথার দাম পাঁচ লাখ

অসম ভুটানের পরে এ বার উত্তরবঙ্গের পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন ‘বাথা’। যাঁর হদিস দিলেই মিলবে ৫ লক্ষ টাকা! পুলিশের খাতায় যাঁর আরেকটি নাম হল বিনোদ মুসাহারি। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বরোল্যান্ড (এনডিএফবি) এর সংবিজিত গোষ্ঠীর স্বঘোষিত ডেপুটি আর্মি কমান্ডার তিনি।

গাড়িতে তল্লাশি অসম-বাংলা সীমানার পাকড়িগুড়িতে।—নিজস্ব চিত্র।

গাড়িতে তল্লাশি অসম-বাংলা সীমানার পাকড়িগুড়িতে।—নিজস্ব চিত্র।

কিশোর সাহা
কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

অসম ভুটানের পরে এ বার উত্তরবঙ্গের পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন ‘বাথা’। যাঁর হদিস দিলেই মিলবে ৫ লক্ষ টাকা!

পুলিশের খাতায় যাঁর আরেকটি নাম হল বিনোদ মুসাহারি। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বরোল্যান্ড (এনডিএফবি) এর সংবিজিত গোষ্ঠীর স্বঘোষিত ডেপুটি আর্মি কমান্ডার তিনি। ২০১৪ সালে অসমের শোণিতপুরে যাঁর নেতৃত্বে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে একযোগে ৭৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সেই বাথা প্রথমে অসমে ভারতীয় সেনা ও পুলিশের যৌথ অভিযানের ধাক্কায় ভুটানে ঘাঁটি গাড়েন। গত সপ্তাহে ভুটানি সেনার তাড়া খেয়ে সেখানকার ‘ক্যাম্প’ ছেড়ে আত্মগোপন করেছেন।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এ বার কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে বাথা কালীখোলার জঙ্গল দিয়ে সঙ্কোশ পেরিয়ে উত্তরবঙ্গে ঢুকে পড়ার ছক কষছেন। ডুয়ার্স দিয়ে ঢুকে শিলিগুড়ির মতো ঘিঞ্জি এলাকা হয়ে অবাধ নেপাল সীমান্ত ব্যবহারের ছকও বাথা ও তাঁর সঙ্গীরা করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। তাই ভোটের মুখে সঙ্কোশ লাগোয়া কুমারগ্রামে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সিআরপিএফ এবং আধা সামরিক বাহিনী পাহাড়ি জঙ্গল, নদী পথে যৌথ তল্লাশিতে নেমেছে। পুলিশও বড় রাস্তা তো বটেই, অলিগলি, নদীপথেও দিনরাত যানবাহন থামিয়ে পরীক্ষা করছে। মেঠো পথ, চা বাগানের মধ্যেও চলছে তল্লাশি।

কুমারগ্রাম লাগোয়া অসমের কোকরাঝাড় জেলার পুলিশ সুপার শ্যামল সইকিয়া বলেছেন, ‘‘এনডিএফবি-র বাথা ভুটানে আত্মগোপন করে আছে বলে স্পষ্ট খবর মিলেছে। বাথাকে টাকা, রসদ পৌঁছনোর সময়ে কালীখোলার কাছে একজন গাড়ির চালক সহ ৩ জন লিঙ্কম্যানও ধরা পড়েছে। কিন্তু বাথার হদিস মেলেনি। সে জন্য সঙ্কোশ লাগোয়া সর্বত্র চিরুনি তল্লাশি চলছে।’’ উত্তরবঙ্গের পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, কুমারগ্রাম শুধু নয়, জয়গাঁ, সামচি, জলঢাকার ঝালংয়ের মতো ভুটান সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ওই পুলিশ কর্তা জানান, শিলিগুড়িতে অতীতে এনডিএফবি জঙ্গিদের আনাগোনা থাকায় হোটেল ও অতিথি নিবাস ও নার্সিংহোমগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।

কে এই বাথা?

অসম পুলিশ সূত্রের খবর, শোনিতপুর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা বথা এনবিএফবি-র জন্মলগ্ন থেকেই সদস্য। দু’হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল চালাতে সিদ্ধহস্ত। ছদ্মবেশ ধরতেও ওস্তাদ। সংবিজিত গোষ্ঠীর স্বঘোষিত আর্মি চিফ বিষ্ণু গোহারি ওরফে জি বিদাইয়ের ডান হাত। চল্লিশ ছুঁইচুঁই বাথা এখন ওই গোষ্ঠীর স্বঘোষিত ডেপুটি আর্মি কমান্ডার। ২০১৪ সালে শোনিতপুরে গণহত্যায় মূলত বাথাই নেতৃত্ব দেন বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ।

ফেব্রুয়ারির গোড়ায় অসমে সেনাবাহিনী অভিযানে নামলে মানস অভয়ারণ্যের ঘাঁটি ছেড়ে ওই জঙ্গিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভুটানের গ্যালেফু এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে কালীখোলার ৩০ কিলোমিটার দূরে কাটরায় আত্মগোপন করে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সেই ক্যাম্পের হদসি পেয়ে ভুটানের সেনাবাহিনী অভিযানে নামে। তার আগেই বাথা সদলবলে পালিয়ে যান।। কিন্তু, মার্চের গোড়ায় কালীখোলায় তল্লাশির সময়ে ৩ জন অসমের যুবককে আটক করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৩টি মোবাইল, একাধিক সিম কার্ড ও প্রচুর নগদ টাকাও। জেরার পরে সেনা-পুলিশ বুঝতে পারে, ওই ৩ জন বাথাকে রসদ পৌঁছতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের কোকরাঝাড় পুলিশের হাতে তুলে দেয় সেনাবাহিনী।

ইতিমধ্যে কুমারগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সতর্কতা জারি হয়। কারণ, সঙ্কোশের ধার ঘেঁষেই রয়েছে কুমারগ্রাম। ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী পেরিয়ে সঙ্কোশ লাগোয়া একাধিক চা বাগান এলাকার মধ্যে দিয়ে জঙ্গিদের গা ঢাকা দেওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেছে। সেই কারণেই কুমারগ্রাম থানার অফিসার-কর্মীরা সঙ্কোশের পার ঘেঁষে দিন রাত নজরদারি শুরু করেছেন। কুমারগ্রাম থেকে ভুটানের কালীখোলা যাতায়াতের রাস্তায় শুরু হয়েছে ব্যাপক কড়াকড়ি। প্রতিটি যানবাহন থামিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বুধবার রাত পর্যন্ত অবশ্য বাথার হদিস কিংবা তাঁর গতিবিধির ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও সূত্র মেলেনি। তবে উত্তরবঙ্গের এক পুলিশ কর্তা দাবি করেন, বাথার গতিবিধির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে অসম পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে অনেক তথ্যই মিলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

batha ndfb militant reward
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE