Advertisement
E-Paper

কয়লা-পাচার রুখতে ব্যর্থ পুলিশ, ক্ষোভ

রাত যত বাড়ে, ট্রাকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ত্রিপলে মোড়া ট্রাকের ভিতরে বোঝাই থাকে কয়লা। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে এ ভাবেই কোটি টাকার কয়লা অবৈধ ভাবে চালান হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার সহ বেশ কিছু রাজ্যে। এই চোরাচালানের করিডর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে উত্তর দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২

রাত যত বাড়ে, ট্রাকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ত্রিপলে মোড়া ট্রাকের ভিতরে বোঝাই থাকে কয়লা। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে এ ভাবেই কোটি টাকার কয়লা অবৈধ ভাবে চালান হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার সহ বেশ কিছু রাজ্যে। এই চোরাচালানের করিডর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে উত্তর দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা।

অভিযোগ, পুলিশ-সেলট্যাক্স চেকপোস্টের সামনে দিয়েই ওই ব্যবসা চললেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। পুলিশের দাবি, অসম-বাংলার বক্সিরহাট সীমানায় কয়লার অবৈধ ব্যবসা বন্ধে কড়াকড়ি করা হয়েছে। বেআইনি ভাবে কয়লা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ৪০টি ট্রাক ধরে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। অসম-বাংলার আরেকটি সীমানা রয়েছে বারোভিসায়। ওই পথ দিয়েই মূল কারবার চলে বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ারের পুলিশও অবশ্য দাবি করেছে, বেআইনি কয়লার কারবার হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বেআইনি পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যে ৭০টি মামলা রুজু করা হয়েছে।

বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “ইটভাটা, চা বাগান ও আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়লা লাগে। সে সবের প্রয়োজনে মেঘালয়, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকার কয়লা লেনদেন করা হয়। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে এই ধরনের চোরাকারবারীদের ধরা যায়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, “বিভিন্ন রাজ্য থেকে সড়ক পথে কয়লা নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে কোনটা অবৈধ ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর কোনটা বৈধ, সেটা পুলিশ-প্রশাসনকেই দেখতে হবে। যদি চোরাচালান হয়, তা হলে তা রুখতে ব্যবস্থাও নিতে হবে।”

কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অবৈধ ভাবে কয়লার কারবার নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় চল্লিশটি কয়লা বোঝাই ট্রাক আমরা আটক করেছি। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। এখন অবৈধ ব্যবসা বন্ধ আছি বলে জানি। ফের খতিয়ে দেখা হবে।” আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “যে সব কয়লা বোঝাই ট্রাকের কাগজপত্র থাকে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।”

কয়লা ব্যবসায়ীদের অবশ্য অভিযোগ, তাঁরা সঠিক কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা করেন। কিন্তু অসম সীমানা পার হয়ে এ রাজ্যে ঢুকতেই ট্রাক আটকে দেয় পুলিশ। বৈধ কাগজপত্র চালকের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে তাঁদের অনেকের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, টাকার দাবি করে পুলিশের একাংশ। দাবি মতো টাকা না পেলে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। কিছু দিন আগে বিষয়টি কয়লা ব্যবসারীদের তরফ থেকে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের জানানোও হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি বিশেষ করে মেঘালয় অসম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশে কয়লাখনি রয়েছে। সেখান থেকে কয়লা তুলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। কোচবিহার সহ রাজ্যের ইটভাটাগুলিতেও ওই কয়লা পাঠানো হয়। কয়লা নিয়ে বৈধ যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের অনুমতি থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়াও যে সব রাজ্যের উপর দিয়ে কয়লার ট্রাক যাবে সেখানে রাজস্ব দিতে হবে। একটি ট্রাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কয়লা নিয়েই যাতায়াত করা যাবে। অভিযোগ উঠেছে, বহু ক্ষেত্রেই কোনও আইন না মানার উদাহরণ রয়েছে। একটি ট্রাকে যেখানে ১০ কুইন্টাল কয়লা নিয়ে যাতায়াতের অনুমতি রয়েছে, সেখানে ৪০ কুইন্টাল বা তাঁর বেশি কয়লা নিয়ে যাওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, অনেক ট্রাকে কয়লা রয়েছে বলে স্বীকারই করা হয় না। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে তা পাট, গম বা অন্য কোনও পণ্য দেখিয়ে পাচার করা হয়। অভিযোগ, একসময় বক্সিরহাট সীমানা দিয়ে প্রতিদিন দেদার ‘কয়লার গাড়ি’ চলত। রাজেশ যাদব পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই শুরু হয় কড়া নজরদারি। কয়লার ট্রাক আটকের পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। এর পরেই ওই সীমানা দিয়ে কয়লার গাড়ি চলাচল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বারোভিসা সীমানা দিয়ে এখনও অবশ্য প্রতিদিন অনেক কয়লার লরি চলাচল করে বলে অভিযোগ। পুলিশের একটি সূত্রের সন্দেহ, এক ট্রাক কয়লা অবৈধ ভাবে পাচার করলে অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা আয় করে চোরাকারবারীরা।

namitesh ghosh cooch behar coal smuggling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy