Advertisement
E-Paper

পুলিশ কাকুদের টিউশনে রোজই বাড়ছে পড়ুয়া

কারও বাবা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন সংসার চালান। কারও বাবা ভাগচাষি। এমন পরিবারের পড়ুয়াদের নিয়ে মালদহ জেলার হবিবপুর থানার পুলিশ গড়ে তুলেছে ‘কিশলয়’। পুলিশকর্মীরাই এখানে শিক্ষকের ভূমিকায়। কিশলয়ে রোজই পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে চলায় খুশি থানা কর্তৃপক্ষ। হবিবপুর থানার পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বাসিন্দারাও।

অভিজিত্‌ সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৪১
ক্লাস চলছে ‘কিশলয়ে’। মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ক্লাস চলছে ‘কিশলয়ে’। মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

কারও বাবা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন সংসার চালান। কারও বাবা ভাগচাষি। এমন পরিবারের পড়ুয়াদের নিয়ে মালদহ জেলার হবিবপুর থানার পুলিশ গড়ে তুলেছে ‘কিশলয়’।

পুলিশকর্মীরাই এখানে শিক্ষকের ভূমিকায়। কিশলয়ে রোজই পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে চলায় খুশি থানা কর্তৃপক্ষ। হবিবপুর থানার পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বাসিন্দারাও। পেশায় রাজমিস্ত্রি চাঁদ দাস ও কৃষ্ণ মল্লিকেরা বলেন, “আমরা দিন মজুরি করে সংসার চালাই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে খুবই সমস্যা হয়। তবে থানার অফিসারেরা যে ভাবে ছেলে মেয়েদের যত্ন সহকারে পড়াচ্ছেন, তাতে টিউশন পড়ানোর দরকার হবে না।”

মালদহ জেলার হবিবপুর ব্লক আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। ব্লকের অধিকাংশ পরিবার দিনমজুরি করে সংসার চালান। অর্থাভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা মাঝপথেই বন্ধ করে দেন পরিবারের লোকেরা। ফলে ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষাটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পুরো ব্লকের ছাত্রছাত্রীদের না পারলেও থানা লাগুয়া গ্রামের দুঃস্থ পড়ুয়াদের নিয়ে হবিবপুর থানার পুলিশ গড়ে তোলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

হবিবপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন তত্‌কালীন আইসি মোয়াজ্জেম হোসেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রথম দিন মাত্র ৪৬ জন পড়ুয়া ওই প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়। হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হালদারপাড়া, কালীতলা, নিতানপুর, জোডাঙা, ঘোষপাড়ার মতো এলাকার পড়ুয়ারা এই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়াশুনা করছে।

এই গ্রামগুলিতে গ্রামীণ পুলিশেরা গিয়ে প্রচার করেছিলেন। দু’মাস ঘুরতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৬ জন। শুরুর দিকে কেবল মাত্র প্রথম-চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা ছিল। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পড়ানো হয়। সপ্তাহের রবিবারের দিন বাদ দিলে বাকি দিনগুলিতে নিয়মিত সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়ানো হয়।

পড়ানোয় নিযুক্ত হয়েছেন পাঁচ জন শিক্ষক এবং তিন জন শিক্ষিকা। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবাই সিভিক ভলান্টিয়ার। এ ছাড়া অবসর সময়ে থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মীরাও ওঁদের সাহায্য করেন। অশোক বর্মন, পিঙ্কি বর্মনেরা বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের এই সুযোগ দেওয়ায় আমরা গর্বিত। আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কতটা সমস্যা হয়, আমরা জানি। টিউশন পড়ার ইচ্ছে থাকলেও পড়তে পেতাম না। তবে এই দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের সেই সুযোগ দিতে পেরে আমরা খুবই খুশি।”

থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, থানার মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত ঘর ছিল। সেই ঘর সংস্কার করা হয়েছে। বাকি ছাত্রছাত্রীদের থানার মধ্যে একটি গাছের তলায় পড়ানো হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়েও শেখানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের উত্‌সাহ বাড়াতে বই, খাতা, পেনসিল, স্লেটও দেওয়া হয়। পুলিশের কাছ থেকে এমন সাহায্য পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও। হবিবপুর থানার পুলিশ কর্মীদের দাবি, থানায় এসে পড়ায় পড়ুয়াদের পুলিশের প্রতি ভয় কমছে। এর ফলে গ্রামে বাল্য বিবাহও অনেকটা রোধ করা যাবে বলে তাঁদের ধারণা।

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী লাবণী দাস, ছাত্র সুদীপ দাস, ভবানী দাসেরা বলেন, “পুলিশ কাকুরা খুব ভাল। আমাদের প্রত্যেক দিন পড়ান। বইখাতাও কিনে দেন। এখন বাইরে টিউশন পড়তে হয় না।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হবিবপুর থানার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি, তারা এই প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ দিন ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।”

abhijit saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy