ঘটনার পর মালদহ টাউন স্টেশনে তদন্তে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র
ট্রেনের সাধারণ কামরায় চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন বাদ যাচ্ছে না সংরক্ষিত কামরাও। বিশেষ করে মালদহ টাউন স্টেশনের উপর দিয়ে যাওয়া ট্রেনগুলিতে। তাই উত্তরবঙ্গের এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রশ্নচিহ্নের মুখে।
শনিবার ভোরে কলকাতা-বিহার যোগবাণী এক্সপ্রেসে সংরক্ষিত কামরায় ছিনতাই এর চেষ্টা চালায় এক দুষ্কৃতী। এই ঘটনার পরে যাত্রী বিক্ষোভ ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মালদহ টাউন স্টেশন। বছর খানেক আগে চলন্ত ট্রেনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন নিরীহ এক শিক্ষক। এমনকী, সংরক্ষিত কামরায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মারধর দিয়ে লুঠের ঘটনার নজিরও রয়েছে মালদহে। ফলে সংরক্ষিত কামরার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। মালদহের যাত্রী সুরক্ষা কমিটির সদস্য নরেন্দ্র নাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। সংরক্ষিত কামরাও এখন হয়ে উঠেছে অসংরক্ষিত। যদিও নিরাপত্তার নামে আমাদের টিকিটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চলন্ত ট্রেনে নিরাপত্তার বাড়ানোর দাবিতে আমরা রেল কর্তৃপক্ষের দারস্থ হব।’’
২০১৪ সালে শতাব্দী এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় পুরাতন মালদহের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মারধর করে সোনার অলঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ২০১৫ সালের ১ মে মাসে ফরাক্কা এক্সপ্রেসে এক ব্যক্তিকে গুলি করতে গিয়ে দুষ্কৃতীরা লক্ষ্যভষ্ট হলে মত্যু হয় দিল্লির আকবর নগরের বাসিন্দা ইন্দ্র ভানের। তিনি বালুরঘাটের একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। আর এ বার যোগবাণী এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় চলন্ত ট্রেনে ছিনতাই এর চেষ্টা করল এক দুষ্কৃতী।
যদিও বিহারের কাটিহারের বিরাট নগরের বাসিন্দা সন্তোষী পাটরিয়ার তৎপরতায় পাকড়াও করা হয় হাওয়ার সাঁতরাগাছির দিলীপ সাওকে। এ দিনই জিআরপি তাকে মালদহ আদালতে পাঠালে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
মালদহ টাউন স্টেশন অবস্থানগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অসম ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রেনগুলি মালদহ থেকে বিহার, দিল্লির দিকে যায়। সেখানেই সংরক্ষিত কামরায় এমন ঘটনা একাধিকবার হওয়ায় উদ্বিগ্ন যাত্রীরা। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ছে দুষ্কৃতীরা তা নিয়েও। যাত্রীদের অভিযোগ, মালদহ টাউন স্টেশনে প্রায় দেখা যায় টিটিদের একাংশ সামান্য টাকার বিনিময়ে সাধারণ কামরার যাত্রীদের সংরক্ষিত কামরায় তুলে দেন। মালদহ থেকে সংরক্ষিত কামরায় কলকাতা কিংবা শিলিগুড়ি যেতে হলে বাড়তি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দিলেই হয়ে যায়। ফলে অনায়াসে দুষ্কৃতীরা সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ছে বলে দাবি করেন যাত্রীরা। তাঁরা বলেন, ‘‘টিটিদের সঙ্গে যোগসাজশের ফলে সংরক্ষিত কামরায় অবাধে উঠে পড়ছে দুষ্কৃতীরা। এই বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’ মালদহের ডিভিশন্যাল ম্যানেজার মোহিত কুমার সিনহা বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy