Advertisement
১৬ মে ২০২৪

হেলমেট নিয়ে নিয়মই সার শিলিগুড়িতে

গত সপ্তাহের এক দুপুর। মহানন্দা সেতু লাগোয়া একটি পেট্রোল পাম্প। লাল রঙের বুলেটে পাম্পে ঢুকলেন ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠনের নেতা। মাথায় কোনও হেলমেট নেই।

মঙ্গলবার সৌম্যজিতকে নিয়ে তৃণমূলের মোটরবাইক মিছিল। হেলমেটের দেখা নেই বেশিরভাগের মাথাতেই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মঙ্গলবার সৌম্যজিতকে নিয়ে তৃণমূলের মোটরবাইক মিছিল। হেলমেটের দেখা নেই বেশিরভাগের মাথাতেই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

গত সপ্তাহের এক দুপুর। মহানন্দা সেতু লাগোয়া একটি পেট্রোল পাম্প। লাল রঙের বুলেটে পাম্পে ঢুকলেন ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠনের নেতা। মাথায় কোনও হেলমেট নেই।

পাম্প কর্মী তাঁকে হেলমেটের কথা মনে করিয়ে দিতেই রীতিমত গলা উঁচু করে, বুলেটের মালিক জানালেন, কোনও পুলিশ কোনওদিন তাঁকে হেলমেট পড়াতে পারেনি। হেলমেট পড়লে তার মাথা গরম হয়ে যায়। তার ‘‘জলদি তেল দে’’ হুমকিতে পাম্প কর্মী কিছু না বলেই তেল ভরে দিলেন। তিনি পাম্প ছাড়তেই কানাঘুষো শুরু হল, ওই নেতার নামে না কি একসময় অনেক পুরানো মামলা ছিল। কেউ ওকে ঘাঁটায় না। পাম্পের ম্যানেজার বিষয়টি শুনে মুচকি হেসে বললেন, ‘‘সিসিটিভিতে ধরা থাকল। আমরা কী করব। মার খাব নাকি।’’

গত মঙ্গলবার বাগডোগরা থেকে শহর পর্যন্ত অর্জুন সৌম্যজিত ঘোষকে নিয়ে বাইক মিছিল হয়। বাইকে রীতিমত পতাকা লাগিয়ে সামিল হন শাসক দলের যুব সংগঠনের বহু নেতা-কর্মী। কিন্তু, বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে মাল্লাগুড়ি পর্যন্ত চলল হেলমেট বিহীন বাইক মিছিল। ট্রাফিক পুলিশের অফিসাররা গাড়ি নিয়ে মিছিলের আশে থাকলেও কাউকে হেলমেট পড়ার কথাও বলেননি। পরে অবশ্য অফিসারদের একাংশ বলেন, ‘‘অর্জুন খেলোয়াড়কে নিয়ে শাসক দলের সংগঠনের মিছিল। ৯০ শতাংশ বাইক মালিকই হেলমেট পড়েননি। কিন্তু ওদের বলবে কে? হেলমেট নিয়ে চাপাচাপি করে বদলি ছাড়া কিছুই হবে না।’’

শিলিগুড়ি ট্রাফিকের কয়েকজন অফিসার জানান, পুরনো শাসকদের কয়েকজন নেতাকেও কোনওদিন হেলমেট পড়তে দেখা যায় না। তেমনিই, শরিক দলের দুই বড় নেতা আছেন। একজনের বাইক আরেক জনের স্কুটি। আজ অবধি তাদের হেলমেট ছুঁয়ে দেখতে খুব একটা দেখা যায়নি। সরকারের লোক বা বিরোধী, নীতি নির্ধারণ করছেন যাঁরা, তাঁরাই যদি এমন করেন তাহলে সাধারণ বাসিন্দাদের বলে কী লাভ?

গত একমাস আগে শিলিগুড়ি শহরে রীতিমত অনুষ্ঠান করে ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নামে পুলিশ। নো হেলমেট-নো পেট্রোল নিয়মও চালু করা হয়। প্রচারের জন্য শহর ছেয়ে যায় হোর্ডিং, ফ্লেক্সে। যদিও নিয়ম লাগুর একদিনের মাথায় তিনবাতি এলাকায় হেলমেট না পড়ে আসায় পেট্রোল দিতে রাজি না হওয়ায় পাম্প কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের তরফে পাম্পগুলির সিসিটিভি রেকর্ডিং মনিটর করা হবে বলেও জানানো হয়। যদিও এখনও ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা অবশ্য সামনে আসেনি। পুলিশ অফিসারদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রচার, সচেতনতা অনেক হয়েছে। এখনই আইনের কড়াকড়ি করলেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে। মামলা, রেকর্ডিং দেখে ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করার কাজ শুরু করা দরকার।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেছেন, ‘‘কিছু কিছু বিষয় আমাদেরও নজর আসছে। খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Riders helm,et
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE