Advertisement
০২ মে ২০২৪

হঠাৎ ঝড়ে বিপর্যস্ত তিন জেলা

আধ ঘণ্টার ঝড়ে বিপর্যস্ত হল মালদহ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হয় দমকা হাওয়া এবং শিলাবৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যে তা বদলে যায় তুমুল ঝড়ে। পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, গাজল ও বামনগোলা ব্লকের অন্তত চার হাজার বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম চাষেও। খুঁটি উপরে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। রাতের ঝড়ের পরে ক্ষতিপূরণের দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এ দিন বিকেল হয়ে গেলেও, অনেক এলাকাতেই ত্রাণ পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।

বংশীহারিতে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে গাছ। ছবি: অমিত মোহান্ত।

বংশীহারিতে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে গাছ। ছবি: অমিত মোহান্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

আধ ঘণ্টার ঝড়ে বিপর্যস্ত হল মালদহ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হয় দমকা হাওয়া এবং শিলাবৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যে তা বদলে যায় তুমুল ঝড়ে। পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, গাজল ও বামনগোলা ব্লকের অন্তত চার হাজার বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম চাষেও। খুঁটি উপরে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। রাতের ঝড়ের পরে ক্ষতিপূরণের দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এ দিন বিকেল হয়ে গেলেও, অনেক এলাকাতেই ত্রাণ পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।

বুধবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীতে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা মালদহ নালাগোলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। এ দিন বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। মালদহের জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘ক্ষতির রিপোর্ট এখনও আমাদের কাছে এসে পৌচ্ছায়নি। তবে জেলা থেকে ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

এ দিন রাত সাড়ে ১১টা থেকে মালদহর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড়ে শহরের দিকে তেমন প্রভাব না পড়লেও গ্রাম এলাকাগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোনও বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। পুরাতন মালদহ ব্লকের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের যদুপুর, ফতেপুর, ভাবুক, গাদা মোড়, মিনা পাড়া, ঝাড়পুকুরিয়া এবং কুড়িয়াপাড়া গ্রামে এদিন গিয়ে দেখা যায় সার দিয়ে ভাঙা ঘর-বাড়ি। হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচন্ডীর কচিপুকুর, ডাঙা পাড়া, ষোলা ডাঙা এবং বৈদ্যপর, মঙ্গলপুরা, হবিবপুর, ঋষিপুর প্রভৃতি গ্রামপঞ্চায়েতে প্রায় একই ছবি দেখেছে। ক্ষতি হয়েছে, গাজোল, বামনগোলা ব্লকেরও। বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পানীয় জল সরবারহও ব্যাহত হয়েছে এ দিন।

আম চাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে পড়ে গিয়েছে গাছের আম। বাগানে গিয়ে দেখা যায় রাশি রাশি আম পড়ে রয়েছে। পুরাতন মালদহের ভাবুকের বাসিন্দা তথা পেশায় আমচাষি জয়দেব সরকার, শুকুল রাজবংশীরা বলেন, ‘‘এ দিনের ঝড় সব আশায় জল ঢেলে দিল। গাছের অর্ধেক আম পড়ে গিয়েছে। লক্ষাধিক টাকার উপরে ক্ষতি হয়ে গেল।’’

উদ্যানপালন দফতরের সহ অধিকর্তা রাহুল চক্রবতী বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের রিপোর্ট আমরা পাইনি। তবে চাষিদের খুবই ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে অনেক আম পড়ে গিয়েছে। ঝড়ে পড়ে যাওয়া আমগুলি থেকে চাষিদের আমচুর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচন্ডী এলাকায় ঝড়ের পরে সরকারি কর্তাদের দেখা না মেলায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। ঘন্টা দু’য়েক ধরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,আপাতত ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে চাল ও শুকনো খাবার এবং ত্রিপল দেওয়া হবে।

ক্ষতি হয়েছে চাঁচলের ৫টি ব্লকেও। চাঁচলে ঝড় হয়েছে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। একই সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি! ঘটনার পর রাত থেকেই মহকুমা জুড়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বুধবার দুপুরে ১৪ ঘন্টা পর চাঁচল শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও অন্য এলাকাগুলি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে রয়েছে। চাঁচল-১, চাঁচল-২, হরিশ্চন্দ্রপুর-১, হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ও রতুয়া-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড় হয়েছে। ঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় টালি ও টিনের ছাদের। হরিশ্চন্দ্রপুরের বোড়ল, বিলাসি এলাকায় বড় আকারের শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। শিল পড়ে ক্ষতি হয় বোরোধানেরও। বহু এলাকায় আমগাছও ভেঙে পড়ে। হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমূল হোসেন ও মালতিপুরের আরএসপির বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি একযোগেই বলেন, ‘‘ঝড় ও শিলে প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনকে দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে বলেছি।’’

রাতে ঝড় শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হরিশ্চন্দ্রপুরের বাঙ্গাবাড়ি গ্রামের সোহরাব আলি বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি বাড়ির টিনের গোটা ছাদটাই উধাও হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে ভিজে যাচ্ছে ঘরের সবকিছু। শেষ রাতে সপরিবারে প্রতিবেশীর বাড়িতে কাটাতে হয়েছে।’’ মালদহ জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ তথা হরিশ্চন্দ্রপুরের সিপিএম নেতা শেখ খলিল বলেন, ‘‘হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকেই অন্তত দু হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’’

বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট

১৫ মিনিটের ঘুর্ণি ঝড়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ও গঙ্গারামপুর ব্লকের একাংশর ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রবল বাতাসের সঙ্গে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। মাত্র পনেরো মিনিট বিক্ষিপ্ত ভাবে ওই ঝড় এলোমেলো ভাবে বসতি এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায়। এরপরই শুরু বৃষ্টি। ঝড়ের দাপটে বংশীহারি ব্লকের শিবপুর পঞ্চায়েত অফিস চত্বরের বিরাট গাছ ভেঙে একটি গাড়ির উপর পড়ে। গাড়িটি দুমড়ে যায়। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, গঙ্গারামপুর এবং বংশীহারির বিস্তীর্ণ এলাকার কাঁচা বাড়ির টিন উড়ে যায়। গাছপালা ও বিদ্যুতের স্তম্ভ উপরে তার ছিঁড়ে বহু এলাকা বুধবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও করে উঠতে পারেনি প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE