বন্ধ নিলাম কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
টানা ন’মাস ধরে তালা খোলে না জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের। চায়ের জেলা হিসেবে পরিচিত জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রই চা পাতার অভাবে ধুঁকছে।
টানা আন্দোলনের জেরে রাজ্য সরকার জলপাইগুড়িতে একটি চা নিলাম কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০০৫ সালে। তারপরে এক দশক পার হয়ে গিয়েছে, এখনও সাবলম্বী হতে পারেনি জলপাইগুড়ি কেন্দ্র। চা ক্রেতাদের একাংশের আশঙ্কা, আরও কয়েক মাস নিলাম না হলে পাকাপাকি ভাবে এই নিলাম কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ির উন্নতির দাবিতে এক সময়ে জলপাইগুড়ি অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটি আন্দোলন চালিয়েছিল। যে কয়েকটি প্রকল্পের হাত ধরে শহরের মন্দা অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার আশা করেছিল কমিটি, নিলামকেন্দ্র তার মধ্যে অন্যতম। বছর দু’য়েক আগে জলপাইগুড়ি ভাগ করে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠনের পরে বিভাগীয় শহরকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের দাবি জানিয়েছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। দাবি ছিল নিলাম কেন্দ্র চাঙ্গা করতে আর্থিক কিছু ছাড় দেওয়া হোক। নিলাম কেন্দ্রে চা পাতা বিক্রি করলে বিক্রেতাদের ছাড়া দেওয়ার প্রস্তাবও জানানো হয়। আবেদন করা হয় ভ্যাট মকুবের। এর কোনওটাই হয়নি বলে অভিযোগ। সে কারণেই চা পাতার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে নিলাম।
২০০৫ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের কয়েক মাস পরেই নিলাম বন্ধ হয়ে যায়। জন্মলগ্ন থেকেই এই কেন্দ্র চা পাতার অভাবে ধুঁকছে। ২০০৯ সালের পর দু’বছর নিলাম মুলতবি থাকে। এরপর ২০১২ সালের মে মাসে ফের সেখানে অনলাইনে নিলাম শুরু হয়। যদিও, চা পাতার অভাব পিছু ছাড়েনি কেন্দ্রের। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিলাম বন্ধ হয়ে যায়৷
বরাবরই চা শিল্পের উপরে নির্ভর করে জলপাইগুড়ি জেলার অর্থনীতি আবর্তিত হয়েছে। সত্তরের দশকের শেষ থেকে বিভিন্ন চা বাগানের সদর দফতর জলপাইগুড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। তখন থেকেই জেলা এবং জেলা শহরের অর্থনীতিতে ভাঁটার টান লাগে। জেলা ভাগের পরে নিলাম কেন্দ্র অর্থাৎ সেই চা অর্থনীতির উপরেই ভর করে পুনুরুজ্জীবন চেয়েছিল জলপাইগুড়ি। তা-ও অধরাই থেকে যাওয়ায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দাবি-পাল্টা দাবি। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, “জলপাইগুড়ির অর্থনীতির পুরোটাই এখনও চায়ের উপরে নির্ভরশীল। অথচ রাজ্য সরকার উদাসীন। সামান্য সাহায্যেই কিন্তু নিলাম কেন্দ্রটি চাঙ্গা হতে পারত। তা-ও সরকারের সদিচ্ছা দেখা গেল না।”
জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন পাল্টা দায় চাপিয়ে বলেন, “উত্তরবঙ্গের চা নিয়ে সমস্যা রাতারাতি মেটানো সম্ভব নয়। নিলাম কেন্দ্রে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে বিভিন্ন চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
চা বাগান মালিক সংগঠনের ডিবিআইটি-র সচিব সুমন্ত গুহ ঠাকুরতার কথায়, “চায়ের উৎপাদন খরচ এই মুহুর্তে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে৷ অথচ চা বিক্রি করে সেই দামই উঠছে না৷ বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না৷ এ ভাবে চলতে থাকলে জলপাইগুড়ির চা-শিল্পের পরিস্থিতি আরো সঙ্কটজনক হবে৷”
জলপাইগুড়ি নিলাম কেন্দ্রের অন্য সমস্যার কথা শুনিয়েছেন জলপাইগুড়ির ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের জলপাইগুড়ির মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ির চা সে ভাবে বিক্রি হচ্ছে না। হয়ত জলপাইগুড়ির বাগানগুলি আবারও নিলামে চা বিক্রির সুযোগ পাবেন, কিন্তু বিক্রি না হলে তাদের উৎপাদিত চা জমে থাকছে৷ ফলে তা নিয়েও সমস্যায় পড়বে বাগান মালিকদের৷”
জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ির নিলাম কেন্দ্র চাঙ্গা হলে আমাদেরও সুবিধে। পরিবহণ খরচ কমবে।’’
দাবি-পাল্টা দাবি, যুক্তি-বির্তকের সমাধান খুঁজে উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় সদরের পুনরুজ্জীবনের স্বার্থে নিলাম কেন্দ্রও চাঙ্গা হোক, এমনই দাবি জলপাইগুড়ির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy