প্রকাশ্যে বালি-মাটি ফেলে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসনকে ন’মাস আগে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু ফল মেলেনি বলে দাবি।
এ বার গ্রামের ছোট নদী বাঁচাতে শাসক দলের পতাকা পুঁতে দিলেন শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া মেথিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকালে পে লোডার এনে নদী বোজানোর কাজ শুরু হতেই বাসিন্দারা নদীর চরে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই নদী দখল বন্ধ হয়ে যায়।
নন্দিতা রাই, দেবীকা রাই, নন্দিতা গুরুঙ্গরা বলেন, ‘‘শাসকদলের ব্যানারে আন্দোলন করলে প্রশাসন শুনবে।’’
শালবাড়ির মেথিবাড়ি গ্রামে বছরখানেক ধরে চামটা নদী বুজিয়ে চর তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছিল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ইতিমধ্যে প্রায় তিন বিঘা জায়গা ভরাট হয়ে গিয়েছে। কাঠা পিছু ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রিও হয়েছে।
ইতিমধ্যে তিন কোটি টাকার লেনদেনও হয়েছে বলে দাবি। মেথিবাড়ির আশেপাশের বাসিন্দা কিছু যুবকই নদী ভরাট করছে বলে অভিযোগ। সে কারণেই প্রশাসন এত দিন কড়া পদক্ষেপ করেনি বলে দাবি। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে প্রকাশ্যে দখল বিরোধী আন্দোলন করে বাসিন্দারা প্রশাসনের উপরে পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছেন। সমীক্ষার নামে প্রশাসন ৯ মাস চুপ করে থাকল কেন, প্রশ্ন বাসিন্দাদের। দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বিষয়টি নিয়ে এ দিন রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন।
সুকনার জঙ্গলের একটি ঝোরা থেকে উৎস চামটা নদীর। শালবাড়ি দিয়ে বয়ে চামটা মিশেছে পঞ্চনই নদীতে। ভূমি দফতরের মানচিত্রেও চামটা নদীর অবস্থান দেখানো রয়েছে। বর্ষার সময়ে নদী উপচে পড়লেও শীতের সময় শুকনো থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নদীর সুখা সময়ে মাটি বালি ফেলে এক দিক বুজিয়ে ফেলা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনকে অভিযোগ জানান। মেথিবাড়ি জনহিত সমাজের তরফে বিডিও থেকে মহকুমা শাসক, ভূমি দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। গত অক্টোবরে ফের দখল শুরু হয়। এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত নৌ সেনা আধিকারিক সরোজ প্রধান বলেন, ‘‘এ যেন লুকোচুরি খেলা। বারবার প্রশাসনকে বলার পরে এক দু’বার অভিযান হয়।’’
গত মঙ্গলবার সকালে বাসিন্দারা তৃণমূলের পতাকা পুঁতে দেন। তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সাধারণ সম্পাদক তারামণি ছেত্রী বলেন, ‘‘এ দিন শতাধিক বাসিন্দা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সকলেই যে দলের সমর্থক, তা নয়। নদী বাঁচাতেই সকলে সামিল হয়েছেন।’’ দার্জিলিং জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক সঞ্জীব চাকী বলেন, ‘‘অভিযোগ শুনেছি। আইন মেনে পদক্ষেপ হবে।’’ তবে শিলিগুড়ি মহকুমায় একের পর এক জমি দখলের অভিযোগ ওঠায় প্রশাসনের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। নেপাল সীমান্ত লাগোয়া পানিট্যাঙ্কিতে চা বাগান দখল করে বিক্রির অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে অযথা দেরি হয়েছিল বলে অভিযোগ।
শাসক দলেরই নেতাদের একাংশ দখলে মদত দিচছে বলে প্রশাসন হাত গুটিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি বিকাশ সরকার বলেন, ‘‘দলের কেউ দখলের সঙ্গে যুক্ত নেই। প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুত কড়া পদক্ষেপ হবে।’’