Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দোর খুলে শুনলেন ছেলে নেই

এ দিনই রাত ১১টা নাগাদ গ্রামে প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের বৈঠক চলছিল। ওই পঞ্চায়েতে প্রার্থীপদের একাধিক দাবিদার ছিল। সেই নিয়ে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন।

শূন্য: হারিয়েছেন পুত্র। বেদনায় ভেঙে পড়েছেন কালিয়াচকের জোলাকান্দির মিজারুলের পরিবারের। নিজস্ব চিত্র

শূন্য: হারিয়েছেন পুত্র। বেদনায় ভেঙে পড়েছেন কালিয়াচকের জোলাকান্দির মিজারুলের পরিবারের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৭
Share: Save:

গুলির শব্দ শুনেই আতঙ্কে খিল এঁটেছিলেন দরজায়। কিছু ক্ষণ বাদেই দরজায় টোকা দিয়ে গ্রামবাসীরা জানিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ির ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ তাঁকে নিয়ে গিয়েছে হাসপাতালে। সোমবার রাতে কালিয়াচক থানার বামনগ্রাম-মসিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মিজারুল রহমান দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছেন।

মিজারুলের বাবা মহম্মদ আব্দুল হায়াৎ গ্রামের একটি মসজিদের মৌলবি। তাঁর চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে মিজারুলই বড়ো। তিনি কাজের সন্ধানে প্রায়ই ভিন্ রাজ্যে যেতেন। তবে বছর খানেক ধরে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের পরিবারটি খুবই নিরীহ। কারও সঙ্গে কখনও গোলমালে জড়ায় না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরেই একটি বিয়ে বাড়িতে প্যান্ডেল তৈরি করেছিলেন মিজারুল। এ দিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ খাওয়া দাওয়ার পরে তিনি সেখানে যান।

এ দিনই রাত ১১টা নাগাদ গ্রামে প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের বৈঠক চলছিল। ওই পঞ্চায়েতে প্রার্থীপদের একাধিক দাবিদার ছিল। সেই নিয়ে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন। সেই সময়ই মাসিবর শেখ সহ তিন জন এলোপাথারি গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। তারই একটি গুলি গুলিতে নিহত হন মিজারুল রহমান।

পুলিশ জানিয়েছে, মাসিবরের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। তার খোঁজে একাধিক বার তল্লাশি চালানো হয়েছিল।

হায়াৎ বলেন, ‘‘রাতে একাধিক গুলির শব্দ শুনতে পাই। আতঙ্কে স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দরজায় খিল দিয়ে বসেছিলাম। ভাবতেও পারিনি সেই গুলিতে মৃত্যু হয়েছে আমারই ছেলের। গ্রামের কিছু মানুষই দোরে টোকা দিয়ে পরে বাড়িতে বলে যান, ‘আপনার ছেলে গুলি খেয়েছে। আর আপনি ঘরে দরজা দিয়ে শুয়ে রয়েছেন?’ সেই শুনে ছুটে যাই।’’ হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন ছেলে মারা গিয়েছে।

সেই আতঙ্ক কাটেনি গ্রামেও। মঙ্গলবার দুপুরেও রাস্তাঘাট ছিল জন শূন্য। তবে এ দিন বিকেলে মিজারুলের দেহ ময়নাতদন্তের পর গ্রামে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পড়শিরাও।

পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেমন চড়া সুরে উঠছে, তাতে আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামবাসীরাও। প্রার্থী বাছাই নিয়েই যদি নিজেদের মধ্যে গুলি চলে, তাহলে ভোটে কী হবে ভেবে ভয়ে শিউরে উঠছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র কী ভাবে হাতে হাতে ঘুরছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতা নেত্রীরা। মোথাবাড়ি বিধায়ক কংগ্রেসের সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আমরা চাই পুলিশ কালিয়াচকের বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করুক।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “মৃতের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানায়। তবে বিরোধীরা রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC group clash Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE