তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা এবং কর্মীদের একাংশের হুমকিতে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার সাব স্টেশন স্থাপনের কাজ থমকে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা আলিপুরদুয়ার রাজ্য সড়কের পাশে পটটোলো গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা সুত্রে জানা গিয়েছে, শামুকতলা থানার এলাকার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সুষ্ঠু ও আরও উন্নত বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে শামুকতলার একটি ৩৩/১১ কেবি সাব স্টেশন স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সে জন্য ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে প্রয়োজনীয় জমি চাওয়া হয়। এর জন্য ভুমি দফতর পটটোলা মৌজায় রাজ্য সড়কের পাশে এক একর সরকারি খাস জমি ওই প্রকল্পের জন্য দেয়। সেই মত কাগজপত্র তৈরি করে নবান্নেও পাঠানো হয়।
গত শনিবার ওই জমির মাটি পরীক্ষার কাজ করতে কলকাতা থেকে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার একটি টিম শামুকতলায় আসেন। অভিযোগ, মাটি পরীক্ষার কাজ করতে এলে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফুলচাঁদ গোস্বামী তাঁর অনুগামীরা দলীয় পতাকা নিয়ে রীতিমত হুমকি দিয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন।
যদিও ফুলচাঁদবাবুর দাবি অভিযোগ মিথ্যা। তাঁর দাবি, ‘‘ওই জমিটি চার ফসলি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে একটি পরিবারের দখলে রয়েছে। তাঁরা চাষ করেন। তাদের কাছে জমির কাগজ রয়েছে। কবে জমিটি খাস হয়েছে সেটা ওই পরিবারও জানে না। আমাদের রাজ্য সরকারের জমি নীতিতে কোনও ভাবেই জোর করে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে কোনও প্রকল্প করা যাবে না বলে স্পষ্ট বলা হয়েছে। অথচ এখানে সেটা মানা হচ্ছে না। ওই দিন সেটা জানতে গিয়েছিলাম। হুমকি দেওয়ার বা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরাও চাই প্রকল্পটি হোক। তবে জোর করে জমি নিয়ে নয়। আলোচনার মাধ্যমে সেটা করতে হবে।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী জানান, “হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। তবে উন্নয়নের কাজ কোন ভাবে বন্ধ করা যাবে না। তার জন্য যা করতে হয় করব।’’
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল ম্যানেজার দীপঙ্কর দাস অভিযোগ করেন, ‘‘ওই তৃণমূল নেতা দলীয় পতাকা নিয়ে রীতিমত হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’’ তিনি জানান, ওই তৃণমূল নেতা হুমকি দেন যে, এ ভাবে কৃষিজমি জোর করে অধিগ্রহণ করা যাবে না এবং সেটা করা হলে রক্ত গঙ্গা বয়ে যাবে। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘এর পরেই আমরা কাজ বন্ধ করে চলে আসি। ওই সাব স্টেশন হলে এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাপক উন্নতি হত। জমিটি সরকারি খাস জমি। ওই জমিটি দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিবার দখল করে চাষ আবাদ করছেন। ভুমি রাজস্ব দফতর ওই পরিবারটিকে অন্যত্র জমি দেওয়ারও প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেটা মানা হয়নি।’’
আলিপুরদুয়ার ২ ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রশান্ত রায় জানান, তথ্য অনু্যায়ী ওখানে এক একরের কিছু বেশি জমি সরকারের অধীনে রয়েছে। তার থেকে ৭৯ ডেসিমেল জমি সাব স্টেশনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। ওই জমির উপর কারও বৈধ কাগজ থাকলে সেটা তিনি দাখিল করতে পারেন বলে প্রশান্তবাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কারও ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা জমি কেন সরকারি প্রকল্পের জন্য দেব?”