শিলিগুড়ি পুরসভার মাসিক অধিবেশনে উত্তেজনা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
পুর পরিষেবা বেহাল। আবার, তা নিয়ে বিরোধীদের কথাও বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কৌশলে নষ্ট করা হচ্ছে সময়।
বামেদের পরিচালিত পুরসভা নিয়ে এই দুই অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠল পুরবোর্ডের বৈঠক। সোমবার এই বৈঠকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে না-পারা, শহরের নিকাশি সাফাই না-হওয়া, পানীয় জল সরবরাহ ঠিক করতে না-পারার অভিযোগে মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। তৃণমূলের তরফে নান্টু পাল, কৃষ্ণ পালের মতো কাউন্সিলরদের চেঁচামেচিতে সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তুমুল তর্কাতর্কি শুরু হয়। মেয়র দাঁড়িয়ে বোঝাতে চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেয়র পারিষদরা পাল্টা সরব হলে বিরোধীরা কোনও প্রশ্ন বোর্ড সভায় তুলবেন না বলে জানিয়ে দেন।
অভিযোগ, বোর্ড মিটিংয়ের নথিতেই রয়েছে, এমন বিষয়গুলি তুলে সভার সময় নষ্ট করছেন বাম কাউন্সিলরেরা। বিরোধীদের প্রশ্ন করতে না দেওয়ার জন্যই এমন কৌশল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তবে শেষ পর্যন্ত, অন্তত ২০ মিনিট হট্টগোলের পর চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মেয়র বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে প্রশ্নের উত্তর নথিতে রয়েছে তা ফের তোলা অযৌক্তিক। আমাদের তরফে যাতে এ ধরনের প্রশ্ন তোলা না হয়, তা দেখা হবে।’’
মঙ্গলবার বিধানসভায় বিধায়ক হিসাবে শপথ নিতে যাবেন অশোক ভট্টাচার্য। পুরসভার তথা উত্তরবঙ্গের সমস্যা নিয়ে এ বার বিধানসভাতে সরব হবেন বলেও জানান। বিধায়ক হওয়ার সুবাদে পুরসভার সমস্যা নিয়ে এখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এ দিন সভায় বিরোধী দলনেতা নান্টুবাবু বলেন, নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে পারছে না পুর কর্তৃপক্ষ। যেখানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মজুত থাকে বা তৈরি হচ্ছে সে সব ক্ষেত্রে পুরসভা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কবে থেকে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ শহরে ফের বন্ধ করা সম্ভব হবে, তা তিনি জানতে চান। সাফাই বিভাগে মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা বোঝাতে সচেষ্ট হন। তা নিয়ে সরব হন কৃষ্ণবাবু, নান্টুবাবুরা। মেয়র পারিষদের দাবি, নির্বাচন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ফেরাতে তৎপর হয়েছে। তবে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।
শহরের সাফাই পরিষেবা নিয়ে বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিলররা প্রশ্ন তোলেন। কৃষ্ণবাবুর দাবি, জোড়াপানি, ফুলেশ্বরী নদীখাতগুলিও বর্ষার আগে পুরসভার তরফে সাফ করা হয়। যাতে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক থাকে। পর্যাপ্ত সাফাই কর্মী দেওয়া হচ্ছে। বরোগুলিতে সাফাই কর্মীরা উপযুক্ত নন বলে অভিযোগ। মেয়র অবশ্য জানান, নদী সাফাই তাদের কাজ নয়। তা নিয়ে কৃষ্ণবাবুর দাবি, মেয়র বিষয়টি না জেনেই কথা বলছেন। নান্টুবাবু হিলকার্ট রোড়ের নিকাশি কেন সাফাই হচ্ছে না জানতে চাইলে, কোন অংশের নর্দমা বুঝতে পারছেন না বলে মুকুলবাবু এড়িয়ে যান। তা নিয়ে সরব হন তৃণমূল কাউন্সিলররা। পরে মুকুলবাবু জানান, পুরসভার তরফে ওই দুটি নদী খাত সংস্কার করা হয়। কিছু হাইড্রান্ট পরিষ্কার বাকি রয়েছে। সাফাই কর্মীদের বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে জানান। আবার নিয়ম ভেঙে পাঁচ নম্বর বরোর একটি বিল্ডিংয়ের সাইট প্ল্যান বোর্ড সভায় পাশ করাতে গেলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রঞ্জন শীলশর্মা। কৃষ্ণবাবুও সরব হন, ছয় ফুট রাস্তায় তিন তলা, চার তলা ভবন তৈরি হচ্ছে কী ভাবে তা নিয়ে। হইচই হলে নুরুলবাবু জানান, বরো থেকে পাঠানো হলে তবেই তা পেশ করা হয়। তবে পাঁচ নম্বর বরোর ওই সাইট প্ল্যানটি পাশ করাবেন না।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গে শিক্ষা স্বাস্থ্যের সমস্যার বিষয়টি বিধানসভায় তোলার চেষ্টা করব। শহর বাদ দিয়ে পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ শুরুর দাবি জানাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy