বিধানসভা নির্বাচনে এ বার গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে ‘কাছিম’ও! কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে যুযুধান সব শিবিরের প্রচারেই এবার ঘুরে ফিরে আসছে কাছিম সুরক্ষার প্রসঙ্গ। কেউ দাবি করছেন কোচবিহারের বাণেশ্বর শিবদিঘিতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বিরল প্রজাতির কাছিম রক্ষার কৃতিত্ব তাঁদের। কারও আবার দাবি, কাছিম মৃত্যু রুখতে একাধিক উদ্যোগ তাঁদের আমলেই হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, কাছিমের সুরক্ষায় তাঁরাই তৎপর। বিধানসভা নির্বাচনে দল জিতে ক্ষমতাসীন হলে ওই প্রাণীদের রক্ষায় প্রকল্প নেওয়া হবে।
বাসিন্দারা জানান, কোচবিহারের বাণেশ্বর শিবদিঘিতে শতাধিক বিরল প্রজাতির কাছিম রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ওই কাছিম ‘মোহন’ নামে পরিচিত। মোহনের প্রতি বাসিন্দাদের মনের টান এতটাই যে অনেকেই দেবতা জ্ঞানে ওই কাছিমদের শ্রদ্ধা করেন। কয়েক বছর আগে বাম জমানার সময় বাণেশ্বরের ওই শিবদিঘির বেশ কিছু কাছিমের পরপর মৃত্যু হয়। তা নিয়েই শুরু হয় শোরগোল। ‘মোহন রক্ষা কমিটি’ গড়ে কাছিমের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুরু হয় আন্দোলন। এমনকি বাণেশ্বর এলাকায় বন্ধও পালন করা হয়। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর ওই প্রসঙ্গ সাময়িক ভাবে ধামাচাপা পড়ে। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে সেই কাছিম সুরক্ষার প্রসঙ্গই সব দলের নেতাদের প্রচারে উঠে আসছে। চলছে চাপানউতোর।
দলীয় সূত্রের খবর, মোহন রক্ষা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন যিনি সেই পরিমল বর্মন এবার কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। ভোট প্রচারে তিনি ওই কাছিম সুরক্ষার কৃতিত্ব দাবি করে বাসিন্দাদের মন জয় করতে চাইছেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বাম আমলে প্রাচীন কাছিমদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল। সে সময় পরিমল আন্দোলন গড়ে না তুললে সমস্যা হত। প্রশাসনের টনক নড়ত না। বাসিন্দারা সে সব কথাই জানেন।” পরিমলবাবু বলেন, “বামেদের পঞ্চায়েত সমিতি দিঘির পাড় ঢালাই করে বাঁধানোয় কাছিমরা পাড়ে উঠতে পারছিল না। পরপর বেশ কিছু কাছিম মারা যায়। আমরাই আন্দোলন করায় ওই পাকা ঢালাই ভেঙে সুরক্ষার উদ্যোগ হয়। রাজ্যের ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই পরিস্থিতি বদলেছে। কাছিমেরাও বেশ দিব্যি আছে।”
বামেরা অবশ্য ওই বক্তব্য মানতে নারাজ। বাম শিবিরের দাবি, কাছিম রক্ষায় বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই পাড় ঢালাইয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে অভিযোগ ওঠায় তা ভেঙে দেওয়া হয়। তা ছাড়া, ওই দিঘিতে কাছিমের খাবার যাতে বাইরের লোকজন খেয়াল খুশি মতো দিতে না পারেন, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সিপিএমের বাণেশ্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রতিমা সরকার বলেন, “সেই সময় কাছিম মৃত্যু হলেই পরিকল্পিত ভাবে হইচই করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখন কাছিমের মৃত্যু হলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল জমানাতে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনাও হয়নি। বাম আমলেই বরং দিঘিতে বাইরের লোকেদের খাবার দেওয়া নিয়ন্ত্রণ করে কাছিম সুরক্ষার কাজ হয়েছে। আমরাও বিভিন্ন সভায় এসব কথা তুলে ধরছি।”
বামেদের মতোই এখনও ওই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি বিজেপি’র। কিন্তু কাছিম ইস্যুতে সরব তাঁরাও। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “বাম বা তৃণমূল ওই কাছিম রক্ষায় কাজের কাজ কিছু করেনি। এখনও শিবদিঘির কাছিম সুরক্ষা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে ওই ব্যাপারে পরিকল্পনা তৈরি করে কাজ করতে চাইছি।” কোচবিহারের কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘কাছিম নিয়ে আবেগ তৈরি করে লাভ হবে না। কেউ কিছু করেনি।’’
সব মিলিয়ে ভোট যত এগোচ্ছে, তত বাড়ছে নির্বাচনী উত্তেজনার পারদ। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে চড়া হচ্ছে কাছিম সুরক্ষার সুর। যা দেখে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সাফ বলেন, ‘‘ভোট বড় বালাই। না হলে কাছিম নিয়ে কী এত কথা হত?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy