ট্রেনের ইঞ্জিন জোড়ার সময় কামরার সজোরে ধাক্কায় একাধিক যাত্রীর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকালে জলপাইগুড়ির মোহিতনগর-রানিনগর স্টেশন এলাকায় কলকাতাগামী তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে চার রেল কর্মীকে সাসপেন্ড করেছেন উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কতৃর্পক্ষ। রেল সূত্রের খবর, সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের মধ্যে দুই জন ইঞ্জিনের চালক এবং সহকারি। বাকি দু’জন গ্রাউন্ড স্টাফ। ঘটনায় এক যাত্রীর মাথা ফাটা ছাড়াও একটি সাত মাসের শিশুকন্যা কামরার আসন থেকে নিচে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আরও কয়েকজন পিঠে, মুখে চোট পান। সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও শিশুটিকে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় পরীক্ষার পর শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা তার পরিবারকে জানিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীল বলেন, ‘‘নতুন ইঞ্জিন জোড়ার সময় বিপত্তি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কর্মীদের কোনও ত্রুটি ছিল বলেই অফিসারেরা জানিয়েছে। বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চারজন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের আঘাত গুরুতর নয়। সকলের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে।’’
অম্বিকা-কালনা বাসিন্দা সুশান্ত মাতব্বর সম্প্রতি স্ত্রী সুপ্রিয়া এবং সাত মাসের মেয়ে অস্মিকে নিয়ে ফালাকাটায় শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন। পেশাষ চাষি সুশান্তবাবু ফালাকাটা থেকে ফেরার সময় তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে টিকিট কাটেন। সঙ্গে আরও দুই আত্মীয়াকে নেন। তাঁরাও অম্বিকা-কালনা যাচ্ছিলেন। সুশান্তবাবু জানান, ইঞ্জিনের পরের সাধারণ কামরায় ছিলাম। দুপুরে রানিনগর এলাকায় ট্রেন দাঁড়ায়। পুরানো ইঞ্জিন বদলে সেখানে ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন জোড়া হবে বলে জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই কাজ শুরু হয়। আমরা কামরায় বসেছিলাম। কিন্তু নতুন ইঞ্জিন এসে কামরায় এমন সজোরে ধাক্কা মারে, তা বলার নয়। যাত্রীরা এদিক-ওদিক ছিটকে পডেন। স্ত্রী ও মেয়ে উপরে আসনে ছিলেন। মেয়ে ছিটকে নিচে পড়ে। স্ত্রীর পিঠে চোট লাগে। একজনের মাথা ফেটে যায় দেখি। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। তার পরেই রেলের অফিসারেরা ছুটে আসেন।
এর পরে সুশান্তবাবুদের এনজেপি স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে আহতদের রেলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ছোট্ট সাত মাসের অস্মিকে সেবক রোডের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সুশান্তবাবু জানান, মেয়ের বমি হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা সুস্থ আছে বলে বলেছে, তাও চিন্তায় আছি। আমাদের বাকি দুই আত্মীয়কে এনজেপিতে রেলের গেস্ট হাউসে রাখা হয়েছে। রেলের অফিসারেরা সব খরচ মেটাবেন বলে জানিয়েছেন। ওই কর্মীরা একটু যত্ন সহকারে কাজ করলে এমনটা হয়ত গত না।
রেল সূত্রের খবর, ইঞ্জিনের গতি হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়ার জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে অফিসারেরা মনে করছেন। সেই সঙ্গে ব্রেকও সঠিক সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চালক কন্ট্রোল করতে পারেননি। বাকি কর্মীরাও ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেননি। কোনও রকম বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy